ETV Bharat / international

প্রয়াত পণ্ডিত যশরাজ

যশরাজের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷

Pandit Jashraj
পণ্ডিত যশরাজ
author img

By

Published : Aug 17, 2020, 6:46 PM IST

Updated : Aug 17, 2020, 10:25 PM IST

নিউ জার্সি, 17 অগাস্ট : প্রয়াত শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী পণ্ডিত যশরাজ । বয়স হয়েছিল 90 । আজ নিউ জার্সিতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ।

1930-এ হরিয়ানার পিলি মান্দোরি গ্রামে জন্ম যশরাজের। 1933 সালে দাদা, মায়ের সঙ্গে চলে যান ওয়ার্ধায় । সেখানেই তিন বছর বয়স থেকে শুরু করেন গানের তালিম নেওয়া ৷ কিন্তু, বাধা আসে শিক্ষায় ৷ তাঁর বাবা মারা যান । পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভেঙে পড়ে ৷ গান শেখানোরও কেউ ছিল না । ফলে মাঝপথে থেমে যায় শিক্ষা । একটি সাক্ষাৎকারে পণ্ডিতজি জানিয়েছিলেন, স্কুল থেকে এসে তবলা বাজাতাম । আমার আর এক দাদা ছিলেন ৷ মিউজ়িক কম্পোজ়ার যতীন-ললিতের বাবা । তিনি দেখলেন, আমি তবলা বাজাই । আমাকে তবলা বাজানো শেখাতে শুরু করলেন । তবলাই তখন আমাকে আয়ের পথ দেখায় ।

একটি সাক্ষাৎকারে পণ্ডিতজি জানিয়েছিলেন, তিনি গান গাওয়া শুরু করেছিলেন স্কুলজীবন থেকে ৷ স্কুল যাওয়ার পথে কোনও একটা গান তিনি শোনেন ৷আর তারপর থেকেই গানের প্রতি তাঁর প্রেম ৷

কীভাবে গানের জগতে প্রবেশ করলেন ?

1945-এ লাহোর যান যশরাজ । সেখানে তাঁর সঙ্গে একটি গানের স্কুলে পণ্ডিত কুমার গন্ধর্বর পরিচয় হয় । একটি রেডিয়োর অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দু'জনে । পণ্ডিত কুমার গন্ধর্ব সেদিন রেডিয়োয় গান করেছিলেন । তিনি সেদিন ভুল গেয়েছিলেন ৷ যা ধরতে পারেননি যশরাজ । পরদিন আর এক সংগীত শিল্পী পণ্ডিত অমরনাথ জি চাওলা কুমার গন্ধর্বের গানের ভুল ধরছিলেন । তা জানতে পেরে যশরাজকে তাঁর দাদা বলেছিলেন, রাগ সম্পর্কে একটুও জ্ঞান নেই । তাই যশরাজ ভুল ধরতে পারেননি ৷ সেই থেকে গান শিখতে চাওয়ার শুরু যশরাজের ।

পরে লাহোরে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর একটি অনুষ্ঠানে দাদার সঙ্গে তবলা বাজাতে গিয়ে অপমানিত হন যশরাজ । একজন বলেন, সংগীত শিল্পীর সঙ্গে তবলা বাদক একই আসনে বসেন না ৷ তবলাবাদকের এত বড় পদ নয় যে তিনি শিল্পীর সঙ্গে বসবেন । যশরাজ সেই দিনই ঠিক করেন, গান গাওয়া শুরু করবেন । জন্মাষ্টমীর পরদিন শুরু করেন গাওয়া । ছেড়ে দেন তবলা । তিনি একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ''তবলা না ছাড়লে গান গাইতে পারতাম না ।'' যতদিন গায়ক হিসেবে পরিচিতি না পান, ততদিন চুল কাটবেন না ৷ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি । 1952 সালে রেডিয়োর মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া শুরু ।

1960-এ মুম্বই ও কলকাতায় বড় বড় সংগীত সম্মেলন হত । তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, "বড় গুলাম আলি সাহেবকে চাচা জান বলতাম । আমি একদিন যখন ওঁর পা টিপে দিচ্ছিলাম, তখন উনি বলেছিলেন, আমার কাছে থেকে যাও, আমি আমার ছেলের মতো গান শেখাব তোমাকে । আমার বাবার মতো বানাব । সেই ছিল সবচেয়ে বড় পাওনা ।"

1960 সাল থেকে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন যশরাজ । অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে ৷ 2000 সালে সম্মানিত হন পদ্মভূষণে ।

তাঁর পরিবারের তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, "বাপুজি আর নেই । কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে সকাল 5টা 15 মিনিট নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয় । ভগবান কৃষ্ণ তাঁকে স্বর্গে ভালোবাসার সঙ্গে স্বাগত জানাবে । তিনি এবার থেকে সেখানেই ওম নমঃ ভগবতে বসুদেবায় গাইবেন । আমরা প্রার্থনা করি, তাঁর আত্মা সংগীতের জগতে শান্তিতে থাকুক । প্রার্থনা ও ভালোবাসার জন্যা আপনাদের ধন্যবাদ ।"

তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । তিনি লেখেন, "তাঁর রচনাগুলি কেবল অসামান্য ছিল না, তিনি বেশ কয়েকজন কণ্ঠশিল্পীর কাছেও ব্যতিক্রমী পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন । তাঁর পরিবার এবং অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা জানাই । ওম শান্তি ।"

  • The unfortunate demise of Pandit Jasraj Ji leaves a deep void in the Indian cultural sphere. Not only were his renditions outstanding, he also made a mark as an exceptional mentor to several other vocalists. Condolences to his family and admirers worldwide. Om Shanti. pic.twitter.com/6bIgIoTOYB

    — Narendra Modi (@narendramodi) August 17, 2020 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data=" ">

নিউ জার্সি, 17 অগাস্ট : প্রয়াত শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী পণ্ডিত যশরাজ । বয়স হয়েছিল 90 । আজ নিউ জার্সিতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ।

1930-এ হরিয়ানার পিলি মান্দোরি গ্রামে জন্ম যশরাজের। 1933 সালে দাদা, মায়ের সঙ্গে চলে যান ওয়ার্ধায় । সেখানেই তিন বছর বয়স থেকে শুরু করেন গানের তালিম নেওয়া ৷ কিন্তু, বাধা আসে শিক্ষায় ৷ তাঁর বাবা মারা যান । পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভেঙে পড়ে ৷ গান শেখানোরও কেউ ছিল না । ফলে মাঝপথে থেমে যায় শিক্ষা । একটি সাক্ষাৎকারে পণ্ডিতজি জানিয়েছিলেন, স্কুল থেকে এসে তবলা বাজাতাম । আমার আর এক দাদা ছিলেন ৷ মিউজ়িক কম্পোজ়ার যতীন-ললিতের বাবা । তিনি দেখলেন, আমি তবলা বাজাই । আমাকে তবলা বাজানো শেখাতে শুরু করলেন । তবলাই তখন আমাকে আয়ের পথ দেখায় ।

একটি সাক্ষাৎকারে পণ্ডিতজি জানিয়েছিলেন, তিনি গান গাওয়া শুরু করেছিলেন স্কুলজীবন থেকে ৷ স্কুল যাওয়ার পথে কোনও একটা গান তিনি শোনেন ৷আর তারপর থেকেই গানের প্রতি তাঁর প্রেম ৷

কীভাবে গানের জগতে প্রবেশ করলেন ?

1945-এ লাহোর যান যশরাজ । সেখানে তাঁর সঙ্গে একটি গানের স্কুলে পণ্ডিত কুমার গন্ধর্বর পরিচয় হয় । একটি রেডিয়োর অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দু'জনে । পণ্ডিত কুমার গন্ধর্ব সেদিন রেডিয়োয় গান করেছিলেন । তিনি সেদিন ভুল গেয়েছিলেন ৷ যা ধরতে পারেননি যশরাজ । পরদিন আর এক সংগীত শিল্পী পণ্ডিত অমরনাথ জি চাওলা কুমার গন্ধর্বের গানের ভুল ধরছিলেন । তা জানতে পেরে যশরাজকে তাঁর দাদা বলেছিলেন, রাগ সম্পর্কে একটুও জ্ঞান নেই । তাই যশরাজ ভুল ধরতে পারেননি ৷ সেই থেকে গান শিখতে চাওয়ার শুরু যশরাজের ।

পরে লাহোরে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর একটি অনুষ্ঠানে দাদার সঙ্গে তবলা বাজাতে গিয়ে অপমানিত হন যশরাজ । একজন বলেন, সংগীত শিল্পীর সঙ্গে তবলা বাদক একই আসনে বসেন না ৷ তবলাবাদকের এত বড় পদ নয় যে তিনি শিল্পীর সঙ্গে বসবেন । যশরাজ সেই দিনই ঠিক করেন, গান গাওয়া শুরু করবেন । জন্মাষ্টমীর পরদিন শুরু করেন গাওয়া । ছেড়ে দেন তবলা । তিনি একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ''তবলা না ছাড়লে গান গাইতে পারতাম না ।'' যতদিন গায়ক হিসেবে পরিচিতি না পান, ততদিন চুল কাটবেন না ৷ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি । 1952 সালে রেডিয়োর মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া শুরু ।

1960-এ মুম্বই ও কলকাতায় বড় বড় সংগীত সম্মেলন হত । তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, "বড় গুলাম আলি সাহেবকে চাচা জান বলতাম । আমি একদিন যখন ওঁর পা টিপে দিচ্ছিলাম, তখন উনি বলেছিলেন, আমার কাছে থেকে যাও, আমি আমার ছেলের মতো গান শেখাব তোমাকে । আমার বাবার মতো বানাব । সেই ছিল সবচেয়ে বড় পাওনা ।"

1960 সাল থেকে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন যশরাজ । অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে ৷ 2000 সালে সম্মানিত হন পদ্মভূষণে ।

তাঁর পরিবারের তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, "বাপুজি আর নেই । কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে সকাল 5টা 15 মিনিট নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয় । ভগবান কৃষ্ণ তাঁকে স্বর্গে ভালোবাসার সঙ্গে স্বাগত জানাবে । তিনি এবার থেকে সেখানেই ওম নমঃ ভগবতে বসুদেবায় গাইবেন । আমরা প্রার্থনা করি, তাঁর আত্মা সংগীতের জগতে শান্তিতে থাকুক । প্রার্থনা ও ভালোবাসার জন্যা আপনাদের ধন্যবাদ ।"

তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । তিনি লেখেন, "তাঁর রচনাগুলি কেবল অসামান্য ছিল না, তিনি বেশ কয়েকজন কণ্ঠশিল্পীর কাছেও ব্যতিক্রমী পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন । তাঁর পরিবার এবং অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা জানাই । ওম শান্তি ।"

  • The unfortunate demise of Pandit Jasraj Ji leaves a deep void in the Indian cultural sphere. Not only were his renditions outstanding, he also made a mark as an exceptional mentor to several other vocalists. Condolences to his family and admirers worldwide. Om Shanti. pic.twitter.com/6bIgIoTOYB

    — Narendra Modi (@narendramodi) August 17, 2020 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data=" ">
Last Updated : Aug 17, 2020, 10:25 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.