প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর ডেমোক্র্যাটিক প্রতিপক্ষ জো বিডেন প্রথম বিতর্কের মঞ্চে মুখোমুখি হচ্ছেন মঙ্গলবার রাতে, ক্লিভল্যান্ডে । যেখানে নির্বাচনের দিনটি আসতে আর মাত্র পাঁচ সপ্তাহ বাকি এবং আগেভাগে ভোটগ্রহণ কিছু রাজ্যে শুরু হয়েছে, সেখানে লাখ লাখ ভোটদাতা প্রথমবার টেলিভিশনে 90 মিনিট ধরে দুই প্রার্থীর নীতি ও ব্যক্তিত্বকে পাশাপাশি রেখে তুলনামূলক বিচার করার সুযোগ পাবেন ।
সুপ্রিম কোর্ট
রুথ ব্যাডার গিনসবার্গের প্রয়ানে খালি হওয়া সুপ্রিম কোর্টের আসন পূর্ণ করতে রিপাবলিকানদের প্রয়াস আগেই বিভক্ত হয়ে যাওয়া ওয়াশিংটনকে আরও সরগরম করেছে, এবং বিতর্কেও এটা অন্যতম বিষয় হবে । ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান, উভয়পক্ষই মনে করে যে , সম্মতির যুদ্ধ তাদের ভোটারদের চাঙ্গা করবে, এবং এমন আদালত তৈরি করবে যা স্বাস্থ্য পরিষেবা , গর্ভপাত এমনকী নভেম্বরের ভোটের ফলাফলও নির্ধারণ করতে পারে ।
বিডেন এখনও পর্যন্ত আদালতের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করতে ট্রাম্পের আহ্বানে কর্ণপাত করেননি । উলটোদিকে প্রেসিডেন্ট তাঁর পছন্দ হিসেবে গিনসবার্গের জায়গায় অ্যামি কোনি ব্যারেটের নাম ঘোষণা করেছেন । বিডেন দেখাতে চাইছেন কীভাবে আদালতের গঠন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিখ্যাত স্বাস্থ্য পরিষেবা আইনকে বিপদে ফেলতে পারে ।
কোরোনাভাইরাস
ট্রাম্পের COVID-19 মোকাবিলা মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে । অ্যামেরিকায় দু’লাখের বেশি মানুষ কোরোনায় মারা গেছেন, আর দৈনন্দিন জীবন এখনও বিপর্যস্ত, বহু ব্যবসা এবং স্কুল এখনও বন্ধ। প্রেসিডেন্ট তাঁর মহামারি মোকাবিলার স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন , কীভাবে ফেব্রুয়ারিতে চিন থেকে বিমান আসা তিনি বন্ধ করেছেন, সেই পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেছেন ।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর পৃষ্ঠপোষকরা বার বার মহামারির বিপদের গভীরতা এবং তা রুখতে পদক্ষেপ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণকে নস্যাৎ করেছেন । সাংবাদিক বব উডওয়ার্ডের লেখা একটি নতুন বইতে প্রকাশিত হয়েছে, কীভাবে এই বছরের শুরুর দিকে ভাইরাসের বিপদকে প্রেসিডেন্ট ইচ্ছাকৃতভাবে খাটো করে দেখিয়েছেন এবং তা স্বীকারও করেছেন ।
বিডেন এবং ডেমোক্র্যাটরা প্রেসিডেন্টের কোরোনা মোকাবিলাকে পুরো প্রচারে তাঁদের ইশু করেছেন এবং প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবারও তা সামনের দিকেই রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে ।
শ্রেণি (এবং ট্যাক্স বিল) বৈষম্য
বিডেন, যিনি প্রায়শই তাঁর ‘ওয়ার্কিং ক্লাস’ থেকে উঠে আসার কথা তুলে ধরেন, বারবার এই নির্বাচনকে ‘স্ক্র্যানটন ও পার্ক অ্যাভিনিউ’-এর মধ্যে লড়াই বলে বর্ণনা করেন, যেখানে পেনসিলভেনিয়ায় তাঁর ছোটবেলার বাড়ি ও ম্যানহ্যাটানের ব্যবসায়ী হিসেবে ট্রাম্পের প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের প্রসঙ্গ উঠে আসে ।
বিডেন সম্ভবত এই প্রসঙ্গটি নিয়ে মঙ্গলবার তেড়েফুঁড়ে নামবেন । বিশেষ করে তখন, যখন নিউইয়র্ক টাইমসে প্রেসিডেন্টের করদানের ধোঁয়াটে ইতিহাসের বিস্ফোরক রিপোর্ট তুলে ধরে বলা হয়েছে যে , প্রেসিডেন্ট 2016 ও 2017 সালে মাত্র 750 ডলার করে আয়কর দিয়েছেন, এবং অন্যান্য অনেক বছর কিছুই দেননি ।
বিডেনের আক্রমণের লক্ষ্য ট্রাম্পের শ্বেতাঙ্গ শ্রমজীবী ভোটারদের উপর ভাগ বসানো , বিশেষ করে রাস্ট বেল্ট স্টেটগুলিতে, যা ট্রাম্পকে 2016 সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জিতিয়েছিল ।
ট্রাম্প-বিডেন বিতর্ক
নিজের অবস্থান সামলে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন ট্রাম্প?
প্রেসিডেন্টের পদে বসার পর তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক বিতর্কে ট্রাম্পকে অনেক কিছুরই উত্তর দিতে হবে ।
তিনি থাকতে দু’লাখের বেশি অ্যামেরিকান কোরোনার শিকার হয়েছেন -- বিশ্বের সমস্ত দেশের থেকে বেশি মৃত্যুর সংখ্যা । লাখ লাখ মানুষ এখনও কর্মহীন । দেশে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিভাজন ক্রমশ গভীর হচ্ছে । আর পাশাপাশি সপ্তাহান্তে সেই উদ্ঘাটন , যেখানে বেশিরভাগ খেটে খাওয়া অ্যামেরিকানের তুলনায় বহু বছর ধরে ট্রাম্প কম আয়কর দিয়েছেন ।
সঞ্চালক ফক্স নিউজের ক্রিস ওয়ালেস এবং বিডেন নিঃসন্দেহে এই বিষয়গুলি নিয়ে ট্রাম্পের উপর চাপ তৈরি করবেন।
ট্রাম্প এইধরনের একের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ উপভোগ করেন , এবং ইতিহাস বলছে যে তথ্য হোক অথবা আচরণবিধি, প্রয়োজনে বিষয় বদলানোর জন্য যা খুশি বলতে কোনওকিছুই তাঁকে আটকাতে পারে না । তিনি তাঁর পক্ষে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ সুপ্রিম কোর্টের পদপূরণের লড়াই বা আইনশৃঙ্খলার ওপর ভর করে লড়তে পারেন । অথবা বিডেনের মানসিক ও শারীরিক শক্তি অথবা তাঁর পরিবারের প্রসঙ্গ টেনে সরাসরি কাদা ছোড়াছুড়িতে নামতে পারেন ।
এধরনের ব্যক্তিগত কৌশল চার বছর আগে ট্রাম্পের কাজে এসেছিল । কিন্তু তিনি এখন দেশের দায়িত্বে এবং ভোটাররা সেরকম কাজ মেনে নেবে কি না সেটা স্পষ্ট নয়।
বিডেন কীভাবে জবাব দেবেন?
ট্রাম্পের নির্বাচনী বার্তার সঙ্গে তাল মেলানো কঠিন । কিন্তু গত একবছর ধরে আক্রমণের একটা অস্ত্র বাকিদের থেকে উপরে উঠে এসেছে : 77 বছরের বিডেন , বা ‘স্লিপি জো’ প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য মানসিক বা শারীরিকভাবে উপযুক্ত নন । সুতরাং মঙ্গলবার রাতে বিডেনের পক্ষে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে অ্য়ামেরিকাকে এইটা বোঝানো যে , বিশ্বের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটার দায়িত্ব নেওয়ার মতো শক্তি তাঁর আছে ।
ট্রাম্পের লাগাতার আক্রমণের সামনে, বিডেন তাঁর শক্তি প্রমাণ করতে ততটা সফল হননি ।
তবে এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যে , ভোটাররা একে সাফল্যের মানদণ্ড হিসেবে দেখবে কি না । প্রায় অর্ধশতাব্দী রাজনীতির জগতে থাকার ফলে , বিডেন ট্রাম্পের থেকে অনেক বেশি অভিজ্ঞ তার্কিক , এবং দেশীয় ও বিদেশনীতিতে তাঁর বেশি দখল । অন্তত কাগজে কলমে তাঁর অ্যাডভান্টেজ রয়েছে ।
তা সত্ত্বেও প্রাথমিক বিতর্কগুলিতে প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্টের অসমান পারফরম্যান্সে ডেমোক্র্যাটদের চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে ।
ভোটাররা কাকে মঞ্চে দেখবেন?
ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান সঙ্গীরা বিডেনকে একজন সোশালিস্ট হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন । কারণ তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন এমন একদল প্রাথমিক প্রার্থীদের মধ্যে থেকে, যাঁদের মধ্যে একজন স্বঘোষিত ডেমোক্র্যাট সোশালিস্ট ছিলেন (বিডেন নন)। আর বিডেন ও তাঁর সঙ্গীতে প্রচারের শুরু থেকেই ট্রাম্পকে জাতিবিদ্বেষী বলে অভিহিত করছেন ।
মঙ্গলবার দুই প্রার্থীই সুযোগ পাবেন প্রাইম টাইমে তাঁদের নীতি ও যুক্তির অন্তর্নিহিত বক্তব্য নিয়ে তর্ক করার ।
বিডেন, যিনি দীর্ঘদিন নিজের দলের উদারপন্থী অবস্থানের মধ্যস্থলে নিজেকে রেখেছেন, তাঁর কিছু পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্যক্ষেত্র, শিক্ষা ও পরিবেশের ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা আরও বৃদ্ধি করার । এই নীতিগুলিকে সোশালিস্ট বলা যায় না, কিন্তু সেগুলি বামপন্থার দিকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান বদল, এবং এগুলির জন্য কর বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে ।
ট্রাম্পের একটা প্রতিষ্ঠিত জাতিভিত্তিক বয়ানের প্যাটার্ন রয়েছে, এবং তিনি সেইসব নীতির পৃষ্ঠপোষকতা করেন যা অসঙ্গতভাবে শ্বেতাঙ্গদের পক্ষে । উদাহরণ, ট্রাম্প তাঁর দপ্তরের ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এর বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড় করতে । তাদের সন্ত্রাসবাদী বলেছেন এবং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন যে এই বিক্ষোভকারীরা প্রধানত শ্বেতাঙ্গপ্রধান শহরতলীগুলিতেই হামলা চালাচ্ছে ।
যেখানে প্রার্থীদের ব্যক্তিত্ব তাঁদের নীতির থেকে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে, তাঁদের নীতিও কিন্তু প্রতিটি অ্যামেরিকান ভোটারের জীবনকে স্পর্শ করবে ।
বিডেন কীভাবে ট্রাম্পের মিথ্যা বিবৃতির মোকাবিলা করবেন?
বিতর্কের আগে, বিডেনের টিম তাঁকে পরামর্শ দিয়েছে কুৎসিত সংঘাতে না জড়াতে এবং তৎক্ষণাৎ ট্রাম্পের বক্তব্যের তথ্য যাচাই করতে যাতে এমন একজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাদায় নামা এড়ানো যায়, যিনি নিজে নোংরা ঘাঁটতে পছন্দ করেন ।
বিডেন সহজেই ট্রাম্পের দাবিকে নস্যাৎ করতে করতে 90 মিনিট কাটিয়ে দিতে পারেন, এবং নিঃসন্দেহে উদারপন্থীরাও দেখতে চায় যে বিডেন সুযোগ পেলেই লড়াইটা প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছে দিন । কিন্তু বিডেন পাশাপাশি বিশৃঙ্খলার উপরে উঠতে চান । তিনি ভোটারদের একটা স্বচ্ছ্ব বিকল্প দিতে চান, যিনি বোঝাপড়ার মাধ্যমে সেই বিভেদমূলক সংঘাতকে পেরিয়ে যাবেন , যা ট্রাম্প-যুগে প্রাধান্য পাচ্ছিল ।
এটা সূক্ষ্ম ভারসাম্যের বিষয়, এবং বিডেন মাঝে মাঝে তাঁর পরামর্শদাতাদের মতে চলতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন । আপনাদের মনে থাকতে পারে যে বসন্তের প্রচারে তিনি ভোটারদের উদ্দেশে এলোমেলো কথা বলছেন, বা তাঁকে সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ বক্তব্য রাখতে বলার ব্যর্থ চেষ্টা করা হচ্ছে ।
সবথেকে অনুকূল পরিস্থিতিতেও, আগের বিতর্কগুলিতে আমরা যা দেখেছি, ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাওয়া কঠিন । রিয়্যালিটি শো-র প্রাক্তন তারকা ক্যামেরার সামনে স্বচ্ছন্দ্য এবং যা প্রয়োজন তা বলতে তিনি আগ্রহী – সেটা সত্যি হোক বা না হোক ।
গণতন্ত্র কেমন থাকবে?
ট্রাম্প বারবার ভোট প্রতারণার ভিত্তিহীন উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্বাচনের গুরুত্বকে খাটো করতে চেয়েছেন । জনমতে পিছিয়ে থেকে, তিনি ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি এধরনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন ।
ট্রাম্পের বার্তায় কোনও তথ্যের ভিত্তি নেই, কিন্তু তাঁর সমর্থকদের অনেকেই তা বিশ্বাস করেন । আমরা দেখব বিডেন ও ওয়ালেসের সামনে ট্রাম্পের বার্তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে ।
মহামারীর সময় যখন মানুষ যতটা সম্ভব নিরাপদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তখন বিপুল সংখ্যায় মেল ব্যালট সামাল দিতে ডাক ব্যবস্থার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ যুক্তিসঙ্গত । আর বহু স্টেট চেষ্টা করছে ভোট গণনায় সেই বিলম্ব এড়ানোর যা প্রাথমিক নির্বাচনগুলোতে সমস্যা তৈরি করেছে । কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, চোখে পড়ার মতো ভোটার প্রতারণার কোনও প্রমাণ নেই, এবং 2020-তে যে সেটা হবে, তারও সম্ভাবনা খুবই কম ।
মঙ্গলবার রাতে কী বলা হবে , তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কণ্ঠস্বর অবশ্য ততটা জোরালো নয় ।