নিউ ইয়র্ক, 11 সেপ্টেম্বর : দেখতে দেখতে কেটে গেল 20টা বছর (20th Anniversary) ৷ এখনও দগদগে 9/11 সন্ত্রাস হামলার স্মৃতি ৷ 2001 সালের 11 সেপ্টেম্বর আমেরিকার অহমিকার প্রতীক নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারকে ভূপতিত করেছিল সন্ত্রাসবাদ ৷ বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয় 2,753 জনকে ৷ সে দিন কীভাবে মর্কিন গোয়েন্দা বিভাগের চোখে ধুলো দিয়ে সুপরিকল্পিত ভাবে পেন্টাগনের উপর বিমান নিয়ে আছড়ে পড়েছিল আল কায়েদার জঙ্গিরা ? একনজরে দেখে নেব ভয়াবহ সেই ইতিহাসের টাইমলাইন, স্থানীয় সময় অনুসারে...
নিরাপত্তার ফাঁক গলল জঙ্গিরা
পোর্টল্যান্ডে নিরাপত্তার ফাঁক গলে বস্টনমুখী বিমানে চড়ে বসল দুই হাইজ্যাকার ৷ এর প্রায় 2 ঘণ্টার মধ্য়েই যে 54 জন অপহরণকারী আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিমান 11 হাইজ্যাক করার ছক কষেছিল, তাদের ভিডিয়োটেপ প্রকাশ্যে এসে যায় ৷ দেখা যায়, ওয়াশিংটন ডিউলস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পশ্চিম দিকের চেকপয়েন্টে নিরাপত্তা কর্মীদের নজর এড়িয়ে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গিরা ৷
বেলা 7.59
বস্টন থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসগামী আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট 11 টেক অফ করল ৷ সেই বিমানে ছিলেন 11 জন ক্রু সদস্য, 76 জন যাত্রী ও 5জন হাইজ্যাকার ৷
সকাল 8.15
বস্টন থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসগামী ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট 175 টেক অফ করল ৷ তাতে ছিলেন 9 জন ক্রু ও 51 জন যাত্রী আর 5 জন হাইজ্যাকার ৷
সকাল 8.19
ফ্লাইট 11-এর ক্রুরা বিমানবন্দরের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে জানান, তাঁদের বিমান অপহরণ করা হয়েছে ৷
সকাল 8.20
লস অ্যাঞ্জেলেসগামী আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট 77 ভার্জিনিয়ার ওয়াশিংটন ডিউলস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছাড়ে ৷ সেই বিমানে ছিলেন 6 জন ক্রু, 53 জন যাত্রী ও 5 জন অপহরণকারী ৷
সকাল 8.24
হাইজ্যাকার মহম্মদ আট্টা ফ্লাইট 11 থেকে বিমানের কেবিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন ৷
সকাল 8.37
ফ্লাইট 11 থেকে হাইজ্যাকারের ট্রান্সমিশন পেয়ে বস্টন এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল মার্কিন বায়ুসেনার উত্তর-পূর্ব এয়ার ডিফেন্স সেক্টরকে সতর্ক করে ৷
বেলা 8.42
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট 93 সান ফ্রান্সিসকোতে নেওয়ার্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে টেক অফ করে ৷ সেই বিমানে ছিলেন 7 জন ক্রু, 33 জন যাত্রী ও 4 জন হাইজ্যাকার ৷
সকাল 8.46
আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট 11 ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ওয়ানের বুক চিরে ঢুকে পড়ে ৷ নর্থ টাওয়ারের 93 তলা থেকে 99 তলার মধ্যে আঘাত হানে সেই বিমান ৷ 91 তলার উপরে আটকে পড়েন শয়ে শয়ে মানুষ ৷ আর বিমানে থাকা প্রত্যেকে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৷
সকাল 8.46
সাতসকালে এই অপ্রত্যাশিত বেনজির আঘাতে বেসামাল হয়ে পড়ে আমেরিকা ৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় উদ্ধারকাজ ৷ নর্থ টাওয়ারে পাঠানো হয় পুলিশ, দমকল ও ডাক্তারদের ৷
সকাল 8.50
খবর পৌঁছয় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে ৷ সারাসোটায় একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তিনি ৷ তাঁকে সতর্ক করা হয় ৷
সকাল 8.55
পোর্ট অথরিটি ফায়ার সেফটি বিভাগ সাউথ টাওয়ারকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করে এবং প্রত্যেককে তাঁদের অফিসে চলে যেতে বলে ৷
সকাল 8.59
পোস্ট অথরিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট দুটি টাওয়ারই খালি করে দেওয়ার নির্দেশ জারি করে ৷ এর ফলে তৈরি হয় ধন্ধ ৷ বিল্ডিংগুলি আদৌ নিরাপদ কি না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে ৷ অনেক অফিসকর্মীকে আবার অফিসে ফিরে যেতে বলা হয় ৷
সকাল 9টা
ফ্লাইট 175-এর কর্মীরা সান ফ্রান্সিসকোয় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স অপারেটরকে সতর্ক করে জানান যে, তাঁদের বিমান অপহরণ করা হয়েছে ৷ অনেক যাত্রী তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করেন ৷
সকাল 9.03
এরই মধ্যে ফ্লাইট 175 ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুতে আঘাত হানে ৷ সাউথ টাওয়ারের 77 থেকে 85 তলার মধ্যে বিল্ডিংকে এফোঁড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে যায় বিমান ৷ বিমানে উপস্থিত সবার ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৷ সাউথ টাওয়ারেরও বহু মানুষ প্রাণ হারান ৷ ইমার্জেন্সি সিঁড়ি, লিফ্ট সব ধুলিসাৎ ৷ ভেতরে আটকে পড়েন কয়েকশো মানুষ ৷
সকাল 9.05
বুশকে দ্বিতীয় হামলার কথা জানানো হয় ৷ একে জাতীয় ট্র্যাজেডি হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি ৷
সকাল 9.37
এ বার ফ্লাইট 77 আঘাত হানে পেন্টাগনে, মৃত্যু হয় বিমানে উপস্থিত সবার ৷ এ ছাড়াও প্রায় 125 জন সাধারণ মানুষ ও সেনাকর্মীও মারা যান ৷
সকাল 9.42
ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রিশেন মার্কিন এয়ারস্পেস থেকে সব বিমান অবতরণ করানোর নির্দেশ দেয় ৷
সকাল 9.45
আতঙ্কে তখন থরহরিকম্প গোটা বিশ্ব ৷ হোয়াইট হাউস ও মার্কিন সংসদের উভয় কক্ষ খালি করে দেওয়া হয় ৷
সকাল 9.59
56 মিনিট ধরে দাউ দাউ করে জ্বলার পর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সাউথ টাওয়ার ৷ মাত্র 10 সেকেন্ডে গুঁড়িয়ে যায় মার্কিন ঐতিহ্য ৷ বহুতলের ভেতরের ও তার আশপাশের প্রায় 800 জনেরও বেশি মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারান ৷
সকাল 10.03
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে মাত্র 20 মিনিটের দূরত্বে পেনসিলভেনিয়ার কাছে একটি মাঠে আছড়ে পড়ে ফ্লাইট 93 ৷ সেই বিমানের সবারও মৃত্যু হয় ৷
সকাল 10.15
পেন্টাগনের পশ্চিম দিকের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ধসে পড়ে ৷
সকাল 10.28
102 মিনিট ধরে জ্বলার পর নর্থ টাওয়ার ভেঙে পড়ে ৷ মারা যান 1600-রও বেশি মানুষ ৷
বিকেল 5টা
ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাউ দাউ করে জ্বলার পর ভেঙে পড়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার 7 ৷ সেখানে কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি ৷ কারণ 47 তলার বিল্ডিং আগেই খালি করে দেওয়া হয়েছিল ৷