কলকাতা, 18 ডিসেম্বর: "যতদিন না পর্যন্ত ওঁরা ন্যায্য চাকরি পাচ্ছেন, ততদিন আমি ম্যাজিক দেখানো বন্ধ রাখবো । এটাই আমার প্রতিবাদ!" ঠিক এই ভাষাতেই সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন জাদু সম্রাট পি সি সরকার জুনিয়র । তাঁর এই পোস্ট সামনে আসতেই নড়ে চড়ে বসেছে নেট নাগরিকবৃন্দ। নিজেদের বক্তব্যে ভরিয়ে তুলছে মন্ত্যব্যের বাক্স । কেউ লিখেছেন, "স্যালুট স্যার আপনাকে।" কেউ আবার লিখেছেন, "কি সর্বনাশ !! তাঁর চেয়ে তাজমহলের মতো ওদের চাকরির পথের কাঁটাকেই ভ্যানিশ করে দিন না। সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।" কেউ আবার নিয়োগ দুর্নীতির সুর টেনে লিখেছেন, "কাদের চাকরির কথা বলছেন ২ কোটি ছেলেমেয়ের?"
কেউ লিখেছেন, "এটা প্রতিবাদ ঠিকই। কিন্তু আপনি যদি মঞ্চে এ নিয়ে কিছু পরিবেশন করতেন তাহলে সেটা আরও জোরালো হতো। সেইসঙ্গে আপনার পরিবেশনা থেকেও সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হতোনা।" জনৈক ব্যক্তি লিখেছেন, "তার চেয়ে ম্যাজিকের মঞ্চে প্রতিবাদ গড়ে তুলুন বা ম্যাজিক শো-এর অর্ধেক লভ্যাংশ বঞ্চিতদের হাতে তুলে দিন । সেটাই হবে প্রতিবাদ ।"
এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে জুনিয়র পি সি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইটিভি ভারত । তিনি বলেন, "অনেক বড় করে বলার একটা বিষয়। কিন্তু স্বল্প পরিসরে তা বলা সম্ভব না । তাই ওইটুকুই লিখেছি । আর ম্যাজিক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমি যখন স্টেজে ম্যাজিক দেখাই, যখন পর্দাটা খোলে তখন সামনে জনগণকে পাই । তাঁরা কিন্তু আমাকে ভীষণ বিশ্বাস করে লাইন দিয়ে অগ্রিম টিকিট কেটে সপরিবারে অনেক দুর থেকে ম্যাজিক দেখতে আসেন । অথচ মহাজাতি সদনে তাঁদেরকে টিকিট কাটতে হয় রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে । দর্শকের কথা না ভেবে কর্তৃপক্ষ কাউন্টারটা রাস্তার মধ্যে করে দিয়েছে । ফলে জনগণের দাঁড়াতে অসুবিধা হয় । বৃষ্টি এলে তাঁরা ভিজে যান । যেটা কাম্য নয় । এভাবেই কর্তৃপক্ষ নানারকম বোকামি এবং বদমায়েশি করে থাকেন । তা সে জেনে হোক বা না জেনে । এতে আমরা শিল্পীরা বড় আঘাত পাই।"
তিনি আরও বলেন, "আমি আহত । আমি আমার শিল্প দেখানোর জায়গা পাচ্ছি না । আমি ডবল গ্র্যাজুয়েট এবং ডক্টরেট । নেহাত ম্যাজিক করি বলে করে খাচ্ছি । নাহলে কিন্তু আমার চাকরি নেই। কোথায় একটা শুনলাম একজন ডক্টরেট অফিস দারোয়ানের জন্য কাজের আবেদন করেছেন । কী অবস্থা! তার মধ্যে যদি আবার পার্টিবাজি তোলাবাজি থাকে তাহলে তো আর কথাই নেই । ছোটবেলায় পড়েছিলাম, "লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে।" একেবারে ডাহা মিথ্যে কথা এটা । পাঠ্যপুস্তক গুলো মন্ত্রীর চামচাদের লেখা । ... সব কিছুর পরিবর্তন হচ্ছে এখানে । কোন এক গুণ্ডা বদমায়েশ নাকি আমার ভাগ্য বিধাতা? আমি এটাকে আমার জন্মভূমি বলব না, বলব মৃত্যুভূমি । আমাকে হল দেওয়া হয় না এখানে । আমি আমার শিল্প দেখানোর জায়গা পাই না ।"
এই প্রসঙ্গে পি সি সরকার মহাজাতি সদনে অনুষ্ঠান বন্ধ থাকা থেকে সেখানকার কর্মচারীদের বেতন না পাওয়ার পাশাপাশি উঠে আসে রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতির কথাও। তিনি বলেন, "খোঁজ নিয়ে দেখুন তো ক'টা অনুষ্ঠান হয় মহাজাতি সদনে? দিনের পর দিন বেতন পাচ্ছেন না কর্মচারীরা । দিনের পর দিন ফাঁকা অডিটোরিয়াম । উপর্জন না হলে বেতন দেবে কোথা থেকে? এই সরকার তো দু'কান কাটা সরকার । সেই কবেই তো ভারতীয়ত্বের বিসর্জন দিয়েছে । জাতীয় সঙ্গীত যে পাল্টানো যায় না, সেই বুদ্ধিও এদের নেই । অনেকের বাঁদর থেকে মানুষ হওয়ার সময় শুধু লেজ নয় তার সঙ্গে মেরুদণ্ডটাও খসে গেছে । আমি বলব তাদের নাম বাঙালি ।"
আরও পড়ুন: