কলকাতা, 3 সেপ্টেম্বর: আজ মহানায়ক উত্তম কুমারের 97-তম জন্মদিন ৷ নায়কের জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক উত্তম-সুচিত্রা জুটির শেষ ছবি তৈরির গল্প ৷ উত্তম-সুচিত্রা জুটির শেষ ছবি মুক্তি পেয়েছিল 1975 সালের অক্টোবর মাসে। ছবির নাম ছিল 'প্রিয় বান্ধবী'। পরিচালক হীরেন নাগের এই ছবি তৈরির নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল মহানায়ক উত্তম কুমারের এক পারিবারিক বন্ধুর। তবে, মহানায়কের ভূমিকাও অস্বীকার করা যায় না।
ছবির প্রযোজক প্রেম আড্ডি ছিলেন উত্তমকুমারের ছেলে গৌতমের বন্ধুর বাবা। ফলে প্রেম আড্ডির অনুরোধ মহানায়ক ফেলতে পারেননি। প্রেম আড্ডি চেয়েছিলেন উত্তমের সঙ্গে এই ছবিতে সুচিত্রা সেন অভিনয় করুন। উত্তম ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে সুচিত্রাকে রাজি করাতে যান ৷ সুচিত্রা সেই সময়ে উত্তমের সঙ্গে অভিনয় করতে বিশেষ আগ্রহ দেখাননি। প্রথমে উত্তমকে একপ্রকার ফিরিয়েই দিয়েছিলেন বাঙালির আদি ও অকৃত্রিম মহানায়িকা। মহনায়কের আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছিল সেদিন। অসিত চৌধুরী মহানায়িকাকে জানান, তাঁর আচরণে উত্তমকুমারের আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছে। শোনা যায়, এরপর সুচিত্রা সেন নিজেই ফোন করেন উত্তমকুমারকে। বলেন 'প্রিয় বান্ধবী' ছবিতে অভিনয় করবেন ।
'প্রিয় বান্ধবী' ছবির পরিচালক হীরেন নাগ উত্তম-সুচিত্রা জুটির জন্য যেরকম চরিত্র ভেবেছিলেন তা এই সোনার জুটির জন্য কতটা মানানসই তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন মহানায়িকা। তবে, উত্তমকুমারকে কথা দেওয়া হয়ে গিয়েছে ততদিনে। আর তাই কোনওভাবেই পিছিয়ে আসা সম্ভব না। শেষমেশ কাজটা করেছিলেন মহানায়িকা।
সিনেমায় জহর নামে এক আদর্শবাদী ভবঘুরের চরিত্রে অভিনয় করেন উত্তম কুমার। আর শ্রীমতি নামে এক যুবতির চরিত্রে ছিলেন সুচিত্রা সেন। বরের সঙ্গে বনিবনা হয়নি শ্রীমতির। সে বড় একা। এই সময় জহরের সঙ্গে তার দেখা হয়। প্রেমও হয়। যদিও সেই প্রেমে কোনও কামের গন্ধ পায়নি দর্শক । শ্রীমতিকে বাড়ি নিয়ে আসে জহর। তবে বাড়িওয়ালার চরম আপত্তিতে চলে যেতে হয় শ্রীমতিকে। এই অবস্থায় বাবার মৃত্যুর পর প্রচুর টাকার মালিক হয় শ্রীমতি। সেই টাকায় তিনি এক নারীকল্যাণ সমিতি গড়ে তোলে। সেখানে যোগ দেয় জহর। এখানেই গল্পের শেষ।
বলতে দ্বিধা নেই, সোনার জুটির এই শেষ ছবি কোনও দিক থেকেই রোম্যান্টিক ছিল না। পরকীয়া ছিল অবশ্য। তখনও পরকীয়ায় অভ্যস্ত নয় সমাজ। সেদিক থেকে ছবিটি নিয়ে সুচিত্রার মনে সংশয় ছিল। জানা যায়, তিনি সে কথা জানিয়েওছিলেন তাঁর উতু অর্থাৎ উত্তমকুমারকে । মহানায়ক আবার দুর্দান্ত বুঝতেন সিনেমার পালস। তবু কেন তিনি এমন দুটি চরিত্র বেছে নিলেন সোনার জুটির জন্য ? তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল তখন। আলোচনা হয়েছিল সংবাদ মাধ্যমেও।
গোটা সাতের দশক ধরে উত্তমকুমার একের পর এক নায়িকার সঙ্গে বিভিন্ন ছবি করেছেন। সুচিত্রা সেন তখন একটা কাজও করছেন কি না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। প্রবীণ সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানা যায়, উত্তম কুমার ততদিনে টালিগঞ্জের বাদশা হয়ে উঠেছেন। তা হলে কি মহনায়ক এই 'প্রিয় বান্ধবী' ছবির মধ্যে দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন, উত্তম-সুচিত্রার ছবিও ফ্লপ হয় ? এই নিয়ে বহু তর্ক বিতর্ক সেই সময়ে হয়েছে। তবু নিশ্চিত করে কোনও সিদ্ধান্তেই আসতে পারেনি টলিপাড়া।
আরও পড়ুন : মহানায়কের ছেলেবেলা কেটেছে বারাসতের আদিবাড়িতে, স্মৃতিচারণা পরিবারের সদস্যদের