কলকাতা, 6 এপ্রিল: পঞ্চাশের বিষ্ণুপ্রিয়া, ষাটের রিনা ব্রাউন আর সত্তরের বিজয়ার আজ জন্মদিন । বাঙালির মননে, চিন্তনে, স্বপ্নে আজও যিনি বিরাজ করেন তিনি সুচিত্রা সেন । তাঁর অভিনীত ছবি বারবার দেখেও আশ মেটে না খাঁটি সিনেপ্রেমী বাঙালির । আজকের কোনও ছবির কোনও নারী চরিত্রে তাঁকে বসিয়ে নিতেও দু'বার ভাবেন না অনুরাগীরা । একইভাবে তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় চরিত্রগুলিকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাতেও ত্রুটি নেই পরিচালকদের । কিন্তু মহানায়িকা যে চরিত্রগুলিতে নিজেকে প্রমাণ করে গিয়েছেন, সেই চরিত্র অন্য অভিনেত্রীদের মাধ্যমে ফের বড় পর্দায় তুলে ধরার ক্ষেত্রে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় একজন পরিচালককে, তা জানার চেষ্টা করল ইটিভি ভারত ।
নির্মল চক্রবর্তী পরিচালিত 'দত্তা' আসছে বড় পর্দায় । পরিচালক হিসেবে নির্মল চক্রবর্তীর এটি প্রথম ছবি । ওদিকে সুচিত্রা সেন অভিনীত 'দত্তা' পরিচালনা করেছিলেন অজয় কর । এই ছবিতে সুচিত্রা সেনের বিপরীতে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় । নির্মল চক্রবর্তী পরিচালিত 'দত্তা'র নায়িকা বিজয়ার চরিত্রে দেখা যাবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে ।
উল্লেখ্য, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'দত্তা' এই নিয়ে তিনবার আসতে চলেছে বড় পর্দায় । প্রথম বার স্বর্ণযুগের প্রযোজিকা অভিনেত্রী সুনন্দা দেবী ছিলেন 'দত্তা'র নায়িকা বিজয়ার ভূমিকায় । দ্বিতীয়বার মহানায়িকা সুচিত্রা সেন । আর এবার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত । পরিচালক নির্মল চক্রবর্তী ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে বলেন, "সুচিত্রা সেন বিজয়া চরিত্রে যে ছাপ ফেলে গিয়েছেন তার সঙ্গে কোনও তুলনা চলে না । সহজ কথায় সুচিত্রা সেনের সঙ্গে কারোরই তুলনা হয় না । তবে, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্প, উপন্যাস নিয়ে একবার নয় আরও অনেকবার কাজ হতে পারে ৷"
তিনি আরও বলেন, "যাঁরা আগে সেই সব চরিত্রে কাজ করে গিয়েছেন তাঁদের পাব না । আজকের অভিনেতাদের মধ্যে থেকেই বেছে নিতে হবে । এই সময়ে দাঁড়িয়ে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ছাড়া বিজয়া চরিত্রের জন্য কারোকে ভাবা যায়নি । ওই সময়ে হয়ত সুচিত্রা সেনকে ছাড়া ভাবা যেত না তাই তাঁকেই নেওয়া হয়েছিল । পরবর্তীতেও অন্য কোনও দক্ষ অভিনেত্রী বিজয়া হয়ে আসবেন । সুতরাং এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ নয়, ভালো কাজটাই আসল কথা । সকলে সকলের মতো করে সেরাটা দিয়েছেন । ঋতুপর্ণা নিজেকে বিজয়া করে তুলতে সুচিত্রা সেনকে অনুকরণ বা অনুসরণ করেননি । পাশাপাশি বাকিরাও আগের ছবির চরিত্রগুলিকে অনুকরণ করেননি ।"
সুতরাং বিজয়ারা বারবার ফিরে এলে ক্ষতি কী ? বারবার ভিন্ন অভিনেত্রীর অভিনয়ের দৌলতে কোনও সাহিত্যের পাতা থেকে উঠে আসা চরিত্র যদি দর্শকের চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে, ক্ষতি কী ? এই প্রসঙ্গে নির্মল চক্রবর্তী আরও বলেন, "আজকের প্রজন্মের 99 শতাংশ বই পড়ে না। সাহিত্য উপন্যাসগুলি বড় পর্দায় এলে অন্তত দেখবে এবং জানবে ।"
প্রসঙ্গত, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র 'দেবী চৌধুরানী' বানালেও সুচিত্রা সেনের করে যাওয়া চরিত্রের সঙ্গে শ্রাবন্তীর চরিত্রের কোনও মিল থাকবে না তা আগেই জানিয়েছেন । এখানে উঠে আসবে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর । এই সময়েই মানুষ দেখেছে সন্ন্যাসী বিদ্রোহ এবং ফকির বিদ্রোহ। ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম । যে সংগ্রাম দমন করতে নাস্তানাবুদ হয়েছিলেন স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংস । এই বিদ্রোহ সম্বন্ধে যে রেকর্ড পাওয়া যায় তাতে দেবী চৌধুরানি এবং ভবানি পাঠকের নাম আছে । সুতরাং তাঁরা কাল্পনিক চরিত্র নয় । এঁদের নিয়ে বহুদিন ধরেই গবেষণা করছেন শুভ্রজিৎ। তাই এবার বড় পর্দায় 'দেবী চৌধুরানী'।
এ ছাড়াও নানা সময়ে তাঁর করে যাওয়া চরিত্র নানা অভিনেত্রীর অভিনয়ে এসেছে বড় পর্দায় । কখনও তা প্রশংসিত হয়েছে, কখনও আবার মহানায়িকার সঙ্গে তুলনার ঝড়ে আছড়ে পড়েছে । কিন্তু তাঁর এক কালে স্থাপন করা চরিত্র ঘুরে ফিরে এসেছে একাধিকবার- এ কথা সত্য । এছাড়াও মানবী তথা অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন হিসেবে বড় এবং ছোট পর্দায় ধরা দিয়েছেন পাওলি দাম । একবার 'মহানায়ক' ধারাবাহিকে অন্যবার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত 'অভিযান' ছবিতে ।
আরও পড়ুন: মুক্তির আলো দেখেনি প্রথম ছবি, ফিরে দেখা রমার সুচিত্রা হয়ে ওঠার কাহিনি