কলকাতা, 18 জানুয়ারি: অভিনেতা, সম্পাদক, চলচ্চিত্র সমালোচক-এই ধরনের কোনও একটি পরিচয় দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে (Remembering Soumitra Chatterjee) ৷ সব পরিচয় মিলে মিশে একাকার করে দিয়ে তিনি আসলে বাঙালির আদি-অকৃত্রিম কালচারাল আইকন । বাংলা ছবির যে কোনও আলোচনা এই নামটুকুকে বাদ রেখে হতেই পারে না ৷ কখনও তিনি উদয়ন পণ্ডিত, কখনও তিনি ফেলুদা আবার কখনও ক্ষিতদা হয়ে বাঙালির মনন এবং জীবনের সঙ্গে তিনি অঙ্গাঙ্গি হয়ে জড়িয়ে গিয়েছেন ৷ একটা সময় তিনি শুরু করেছিলেন নায়ক হিসেবে । আবার একইসঙ্গে খলনায়ক হিসাবেও তিনি হয়ে ওঠেন সমান গুরুত্বপূর্ণ ৷ তথাকথিত বানিজ্যিক ছবি হোক বা আর্ট ফিল্ম-সৌমিত্র সবেতেই শীর্ষে ৷ আজ তাঁর জন্মদিনে ফিরে দেখা এই কিংবদন্তির জীবনের কিছু খুঁটিনাটি(Journey Of Soumitra Chatterjee) ৷
এই প্রবাদপ্রতীম অভিনেতার জন্ম 1935 সালে, নদিয়ার কৃষ্ণনগরে ৷ বাবা ছিলেন আইনজীবী ৷ কৃষ্ণনগরের সেন্ট জন্স বিদ্যালয় থেকেই পড়াশোনা শুরু করেছিলেন এই অভিনেতা ৷ এরপর তিনি চলে আসেন হাওড়া জেলা স্কুলে ৷ আর তারপর কলকাতা সিটি কলেজ থেকে পাশ করেন তিনি ৷ ছবির জগতে পা রাখার আগেই সৌমিত্রবাবুর গলার সঙ্গে পরিচিত ছিল বাঙালি ৷ কারণ এই মানুষটি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আকাশবাণীর ঘোষক হিসাবে ৷
ছবির জগতে চলে আসাটা কীভাবে ? একাধিক ইন্টারভিউতে সৌমিত্র জানিয়েছেন, জীবনের প্রথম অডিশনে তিনি সফল হতে পারেননি ৷ সে ছবির পরিচালক ছিলেন কার্তিক বসু ৷ ছবির নাম 'নীলাচলে মহাপ্রভু' ৷ কিন্তু এরপর এক 'ভূতের রাজার' বরে হঠাৎই আমুল বদলে যায় সৌমিত্র কাহিনি ৷ এই মানুষটিকে সবাই ডাকতেন মানিকদা বলে । আর তাঁর পোশাকি নাম সত্যজিৎ রায় ৷ তাঁর 'অপু'-কে সৌমিত্রর মধ্যেই খুঁজে পেয়েছিলেন সত্যজিৎ ৷ এমনটাই বটবৃক্ষের ছায়া পেলে আর কাউকে ফিরে তাকাতে হয় কখনও ৷ না ফিরে তাকাতে হয়নি সৌমিত্রকেও ৷ সত্য়জিৎ রায়ের 'অপুর সংসার'-এর হাত ধরে ছবির জগতে পা রাখার পর তিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন বাঙালির আবেগ ৷
সত্যজিৎও তাঁকে ব্যবহার করেছেন নানা ভাবে ৷ কখনও 'হীরক রাজার দেশে'-র জন্য তিনিই হয়ে উঠেছেন পরিচালকের প্রতিবাদের প্রতিমূর্তি কখনও তিনি গোয়েন্দা হয়ে দুষ্টু লোকদের শায়েস্তা করতে ছুটেছেন সুদূর রাজস্থানে ৷ সব মিলিয়ে বাঙালি জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছেন সৌমিত্র ৷ শুধু যে সত্যজিৎ নয় অসিত সেনের 'স্বরলিপি' (1961), অজয় করের 'সাত পাকে বাঁধা' (1963) , 'পরিণীতা' (1969), তপন সিংহের 'ক্ষুধিত পাষাণ' (1960), 'ঝিন্দের বন্দি' (1961) এবং তরুণ মজুমদারের 'সংসার সীমান্তে' (1975) এবং 'গণদেবতা' (1978)-র মতো একাধিক ছবিতে নিজেকে প্রমাণ করেছেন এই মানুষটি ৷
আরও পড়ুন: বাকি আর 150দিন, পর্দায় আসছে 'আদিপুরুষ'
জীবনের শেষ পর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন সমান প্রাসঙ্গিক ৷ তাঁর অভিনীত 'বেলাশেষে','পোস্ত' এবং 'বেলাশুরু'-র মতো আজও তাঁর অভিনয় দক্ষতার সাক্ষ্য বহন করে ৷ শুভ জন্মদিন ফেলুদা (HBD Soumitra Chatterjee)৷'