ETV Bharat / entertainment

HBD Aparna Sen: আজ মেমসাহেবের জন্মদিন, ফিরে দেখা বর্ণময় অপর্ণাকে - জন্মদিনে ফিরে দেখা বর্ণময় অপর্ণাকে

আটাত্তরে পা দিলেন মেমসাহেব ৷ আসুন জন্মদিনে ফিরে দেখি বাংলার প্রিয় রিনাদির বর্ণময় কেরিয়ার (Remembering Aparna Sen on her 77th Birthday)৷

Remembering Aparna Sen on her 77th Birthday
জন্মদিনে ফিরে দেখা বর্ণময় অপর্ণাকে
author img

By

Published : Oct 25, 2022, 2:01 PM IST

কলকাতা, 25 অক্টোবর: আটাত্তরে পা দিলেন মেমসাহেব ৷ তিনি উত্তম-সৌমিত্রের নায়িকা । আবার সত্যজিতের 'তিনকন্যা'র অন্যতম ৷ কেউ কেউ আবার তাঁকে দেখেন বাংলার সোফিয়া লোরেন হিসেবে ৷ সময় যতই এগিয়ে যাক তিনি আজও বাঙালির আদি-অকৃত্রিম মেমসাহেব ।

1945 সালের 25 অক্টোবর জন্ম অপর্ণার । বাবা ছিলেন বিখ্যাত পরিচালক চিদানন্দ দাশগুপ্ত । তাই শুরু থেকেই বাড়িতে ছিল ছবির পরিবেশ । আবার একটু অন্য়দিক থেকে দেখলে তিনি প্রবাদপ্রতীম কবি জীবনানন্দ দাশের ভাইঝিও বটে ৷ বাড়িতে ছোটবেলা থেকে তিনি বেড়ে উঠেছেন এক সুন্দর সাংস্কৃতিক পরিবেশে ৷ ছবি, কবিতা, গল্প, গান ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী (Remembering Aparna Sen on her 77th Birthday ) ৷

মাত্র 16 বছর বয়সে প্রথম ছবিতে কাজের সুযোগ আসে তাঁর কাছে ৷ আর প্রথম সুযোগটাই আসে কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে । 1961 সালে মুক্তি পায় ‘সমাপ্তি’। এরপর অবশ্য সত্যজিৎ তাঁকে ব্যবহার করেছেন একাধিক ছবিতে । ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘জনঅরণ্য’-র মতো কালজয়ী ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পেয়েছেন অপর্ণা । তথাকথিত আর্ট ফিল্মের পাশাপাশি রিনাদি সফল বানিজ্যিক ছবিতেও (Aparna Sen 77th Birthday ) ৷ শুধু অভিনয় নয় লেখালেখিতেও যথেষ্ট আগ্রহী অপর্ণা । তাঁর লেখাও প্রশংসা কুড়িয়েছে রীতিমতো ।

কেরিয়ারের শুরুতে ‘বসন্ত বিলাপ’ কিংবা ‘ছুটির ফাঁদে’র মতো বাণিজ্যিক ছবিতে তাঁর অভিনয় মন জিতে নিয়েছিল সকলের । সৌমিত্রের নায়িকা হিসেবে রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ৷ কিন্তু হঠাৎই তিনি থামিয়ে দেন আলোর দিকে ইঁদুরের মতো দৌড়ে চলার এই সফর ৷ নিজের ভালো লাগা, মন্দ লাগা নিয়ে বরাবরই সরব অপর্ণা (Aparna Sen)। একসময় নিজেই জানিয়েছিলেন, অতৃপ্তি ছিল বলেই অভিনেত্রী থেকে পরিচালক হওয়ার শপথ নেন । ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় একরকম সংলাপ বলতে, কিংবা একভাবে অভিনয় করতে করতে দমবন্ধ লাগছিল তাঁর । অতএব নিজেকে ভেঙে আবার গড়ার খেলায় মেতে উঠলেন অপর্ণা । হয়ে উঠলেন ডাকসাইটের পরিচালক । নায়িকা জীবনের মতো পরিচালক জীবনেও অপর্ণা মানেই ছবি সুপারহিট ।

অপর্ণা নিজেকে ঠেলে দিলেন লেন্সের পিছনে ৷ তিনি বুঝেছিলেন তাঁর কথা তাঁর রাজনৈতিক এবং সামাজিক দর্শন ফুটিয়ে তুলতে হলে তাঁকেই ছবি বানাতে হবে ৷ ঠিক যেমন অন্যের গান গাওয়া বন্ধ করে একসময় বাধ্য হয়ে নিজের জন্য় গান লিখতে শুরু করেছিলেন কবীর সুমন ৷ অপর্ণার পরিচালনার শুরু মোটামুটিভাবে আটের দশকে ৷ তাঁর হাত ধরে বাঙালি পেয়েছে ‘36 চৌরঙ্গি লেন’, ‘পরমা’, ‘পারমিতার একদিন’-এর মতো আশ্চর্য সব ছবি । এরপর আবার নিজের কথা বলার ধরনকে সময়ের উপযোগী করে বদলেও নিয়েছেন অপর্ণা ৷ তাঁর হাত ধরেই বাঙালি দেখেছে ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’, ‘জাপানিজ ওয়াইফ’ কিংবা ‘ইতি মৃণালিনী’ ৷

অপর্ণা একজন শিল্পী হিসাবে সবসময় তাঁর মতো করে নিজের মতাদর্শকে প্রকাশ করেছেন ৷ পিছিয়ে যাওয়ার মানুষ তিনি নন ৷ বরং সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার লাইন ধার করে বলতে হয় তিনি সেই 'মিছিলের মুখ' ৷ প্রয়োজনে রাস্তায় নামতেও দ্বিধা করেননি তিনি । বাংলার বাম শাসনের শেষদিকে যে কয়েকজন বুদ্ধিজীবী সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন তাঁদের অন্যতম অর্পণা সেন । জমি আন্দোলন হোক বা লালগড়ে ছত্রধর মাহাতোদের আন্দোলন- সব জায়গাতেই ছিলেন অর্পণা ।

আরও পড়ুন: আলোর উৎসবে মাতলেন সাবা হৃতিক, ছবি ভাইরাল নেটপাড়ায়

হাল আমলে এনআরসি বিরোধিতার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন প্রথম। এমনকী এই কয়েকদিন আগেও সলমন রুশদীর বই নি্ষিদ্ধ করার বিপক্ষেও রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি । যা তাঁর মননে আঘাত করেছে তা নিয়ে প্রতিবাদে শামিল হতে অথবা মিছিলের মুখ হয়ে রাস্তায় হাঁটতে কোনও দ্বিধা করেননি অপর্ণা । কেন্দ্র রাজ্য দুই সরকারেরই ভুল কাজের প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন তিনি । একাধিকবার স্বীকার হয়েছেন বিতর্কের তবে তা থামিয়ে দিতে পারেনি রিনাদিকে । আর তাই আজ তাঁর অগনিত অনুরাগীরা নিশ্চই বলছেন, "শুভ জন্মদিন রিনাদি। ভালো থাকবেন ৷"

কলকাতা, 25 অক্টোবর: আটাত্তরে পা দিলেন মেমসাহেব ৷ তিনি উত্তম-সৌমিত্রের নায়িকা । আবার সত্যজিতের 'তিনকন্যা'র অন্যতম ৷ কেউ কেউ আবার তাঁকে দেখেন বাংলার সোফিয়া লোরেন হিসেবে ৷ সময় যতই এগিয়ে যাক তিনি আজও বাঙালির আদি-অকৃত্রিম মেমসাহেব ।

1945 সালের 25 অক্টোবর জন্ম অপর্ণার । বাবা ছিলেন বিখ্যাত পরিচালক চিদানন্দ দাশগুপ্ত । তাই শুরু থেকেই বাড়িতে ছিল ছবির পরিবেশ । আবার একটু অন্য়দিক থেকে দেখলে তিনি প্রবাদপ্রতীম কবি জীবনানন্দ দাশের ভাইঝিও বটে ৷ বাড়িতে ছোটবেলা থেকে তিনি বেড়ে উঠেছেন এক সুন্দর সাংস্কৃতিক পরিবেশে ৷ ছবি, কবিতা, গল্প, গান ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী (Remembering Aparna Sen on her 77th Birthday ) ৷

মাত্র 16 বছর বয়সে প্রথম ছবিতে কাজের সুযোগ আসে তাঁর কাছে ৷ আর প্রথম সুযোগটাই আসে কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে । 1961 সালে মুক্তি পায় ‘সমাপ্তি’। এরপর অবশ্য সত্যজিৎ তাঁকে ব্যবহার করেছেন একাধিক ছবিতে । ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘জনঅরণ্য’-র মতো কালজয়ী ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পেয়েছেন অপর্ণা । তথাকথিত আর্ট ফিল্মের পাশাপাশি রিনাদি সফল বানিজ্যিক ছবিতেও (Aparna Sen 77th Birthday ) ৷ শুধু অভিনয় নয় লেখালেখিতেও যথেষ্ট আগ্রহী অপর্ণা । তাঁর লেখাও প্রশংসা কুড়িয়েছে রীতিমতো ।

কেরিয়ারের শুরুতে ‘বসন্ত বিলাপ’ কিংবা ‘ছুটির ফাঁদে’র মতো বাণিজ্যিক ছবিতে তাঁর অভিনয় মন জিতে নিয়েছিল সকলের । সৌমিত্রের নায়িকা হিসেবে রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ৷ কিন্তু হঠাৎই তিনি থামিয়ে দেন আলোর দিকে ইঁদুরের মতো দৌড়ে চলার এই সফর ৷ নিজের ভালো লাগা, মন্দ লাগা নিয়ে বরাবরই সরব অপর্ণা (Aparna Sen)। একসময় নিজেই জানিয়েছিলেন, অতৃপ্তি ছিল বলেই অভিনেত্রী থেকে পরিচালক হওয়ার শপথ নেন । ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় একরকম সংলাপ বলতে, কিংবা একভাবে অভিনয় করতে করতে দমবন্ধ লাগছিল তাঁর । অতএব নিজেকে ভেঙে আবার গড়ার খেলায় মেতে উঠলেন অপর্ণা । হয়ে উঠলেন ডাকসাইটের পরিচালক । নায়িকা জীবনের মতো পরিচালক জীবনেও অপর্ণা মানেই ছবি সুপারহিট ।

অপর্ণা নিজেকে ঠেলে দিলেন লেন্সের পিছনে ৷ তিনি বুঝেছিলেন তাঁর কথা তাঁর রাজনৈতিক এবং সামাজিক দর্শন ফুটিয়ে তুলতে হলে তাঁকেই ছবি বানাতে হবে ৷ ঠিক যেমন অন্যের গান গাওয়া বন্ধ করে একসময় বাধ্য হয়ে নিজের জন্য় গান লিখতে শুরু করেছিলেন কবীর সুমন ৷ অপর্ণার পরিচালনার শুরু মোটামুটিভাবে আটের দশকে ৷ তাঁর হাত ধরে বাঙালি পেয়েছে ‘36 চৌরঙ্গি লেন’, ‘পরমা’, ‘পারমিতার একদিন’-এর মতো আশ্চর্য সব ছবি । এরপর আবার নিজের কথা বলার ধরনকে সময়ের উপযোগী করে বদলেও নিয়েছেন অপর্ণা ৷ তাঁর হাত ধরেই বাঙালি দেখেছে ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’, ‘জাপানিজ ওয়াইফ’ কিংবা ‘ইতি মৃণালিনী’ ৷

অপর্ণা একজন শিল্পী হিসাবে সবসময় তাঁর মতো করে নিজের মতাদর্শকে প্রকাশ করেছেন ৷ পিছিয়ে যাওয়ার মানুষ তিনি নন ৷ বরং সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার লাইন ধার করে বলতে হয় তিনি সেই 'মিছিলের মুখ' ৷ প্রয়োজনে রাস্তায় নামতেও দ্বিধা করেননি তিনি । বাংলার বাম শাসনের শেষদিকে যে কয়েকজন বুদ্ধিজীবী সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন তাঁদের অন্যতম অর্পণা সেন । জমি আন্দোলন হোক বা লালগড়ে ছত্রধর মাহাতোদের আন্দোলন- সব জায়গাতেই ছিলেন অর্পণা ।

আরও পড়ুন: আলোর উৎসবে মাতলেন সাবা হৃতিক, ছবি ভাইরাল নেটপাড়ায়

হাল আমলে এনআরসি বিরোধিতার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন প্রথম। এমনকী এই কয়েকদিন আগেও সলমন রুশদীর বই নি্ষিদ্ধ করার বিপক্ষেও রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি । যা তাঁর মননে আঘাত করেছে তা নিয়ে প্রতিবাদে শামিল হতে অথবা মিছিলের মুখ হয়ে রাস্তায় হাঁটতে কোনও দ্বিধা করেননি অপর্ণা । কেন্দ্র রাজ্য দুই সরকারেরই ভুল কাজের প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন তিনি । একাধিকবার স্বীকার হয়েছেন বিতর্কের তবে তা থামিয়ে দিতে পারেনি রিনাদিকে । আর তাই আজ তাঁর অগনিত অনুরাগীরা নিশ্চই বলছেন, "শুভ জন্মদিন রিনাদি। ভালো থাকবেন ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.