কলকাতা, 31 অগস্ট: ঘটনার সূত্রপাত প্রযোজক রানা সরকারের তিনটি ছবির কাজ বন্ধ করে দেওয়াকে নিয়ে (Rana Sarkar) । প্রযোজক রানা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তাঁর থেকে কোটি টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে টেকনিশিয়ানদের । আর তাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাঁর আগামী ছবি 'কলকাতা ৯৬', 'লহ গৌরাঙ্গের নাম রে' ও 'বেহায়া'র শ্যুটিং । সিনে সাপ্লায়ার্স গিল্ডের দাবি যে, আগের টাকা না মেটালে তাঁর আগামী তিনটি ছবি করতে দেওয়া হবে না ।
অন্যদিকে রানা সরকারের পাল্টা দাবি, কেউ তাঁর কাছ থেকে টাকা পায় না ৷ এরপর প্রযোজক সামাজিক মাধ্যমে একটি অডিয়ো ক্লিপ শেয়ার করে তিনি লেখেন, "জোর গলায় বলছি , আমার কাছে কেউ টাকা পায়না । কেউ টাকা পায় সেটা প্রমাণ করতে পারলে আমি তার দ্বিগুণ অর্থ দেব । যারা হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে শ্যুটিং হবে না, আমরা সবাইকে আনন্দ দেওয়ার জন্য সিনেমা বানাতে গিয়েছিলাম উলটে আমাদেরই ধমকি দেওয়া হল । এর প্রতিকার না হলে শ্যুটিং হবে না । আমার একা দায় নেই ভালো সিনেমা বানানোর । আমি ইতিমধ্যেই 25 লক্ষ টাকা খরচ খরচ ফেলেছি ৷ তবুও প্রাণের ভয় নিয়ে কাজ করবো না ৷"
- " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="">
তিনি আরও লেখেন, "এইসব ভেন্ডর সাপ্লায়ারসদের অধিকাংশের জিএসটি রেজিস্ট্রেশন নেই । কর ফাঁকি দেয় । এদের মধ্যে একজন জাল নথি দিয়ে আদালতে মামলা করতে গিয়েছিল । এখন পুলিশের তাড়া খেয়ে বেড়াচ্ছে । এরা মিথ্যা দাবি করে বাংলা সিনেমার ক্ষতি করছে ৷ আমি কোথাও পালিয়ে যাইনি, পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করিনি, কেনই বা পালাবো । কী অপরাধ করেছি ? আমি কি লন্ডনে মানুষ পাচার করি নাকি পাইরেসি ব্যবসা চালাই নাকি চিট ফান্ড চালাই ? আমি কলকাতাতেই আছি , থাকব। আইনি পথে এর শেষ দেখে ছাড়বো । গুন্ডাগিরি করে, হুমকি ধমকি দিয়ে যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছেন তাদের বিচার করতেই হবে । ততদিন 'বেহায়া' সমেত আমার সব সিনেমার শ্যুটিং বন্ধ থাকবে...।"
প্রসঙ্গত, এর আগে রানা সরকারের বিরুদ্ধে টেকনিশয়ান ও অভিনেতাদের প্রাপ্য টাকা না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যদিও রানা সরকারের দাবি তিনি সব বকেয়া টাকা সবাইকে মিটিয়ে দিয়েছেন । তা হলে আবার কেন এই নিয়ে জলঘোলা তা বেশ রহস্যজনক । রানা সরকারের পোস্ট দেখার পর অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি পোস্ট দেন । তিনি লেখেন, “এক প্রযোজক প্রথমে আর্টিস্ট থেকে ভেন্ডর সবার টাকা মারে । নামকরা কবি থেকে অভিনেতা পরিচালককে নিয়ে ছবি শুরু করে মাঝপথে বন্ধ করে দেয় । নির্লজ্জের মতো সোশাল মিডিয়ায় জ্ঞান দান করে আর সবার সঙ্গে ছবি দেয় । আজব জীব (Joyjit Rana Controversy)।”
এরপর রানা সরকার সোশালেই তাঁর কাছে জানতে চান এ কথা তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে কিনা । উত্তরে অভিনেতা বলেন, "ঠাকুর ঘরে কে? আমি তো কলা খাইনি।" তা ছাড়া রানা সরকার এমনিতেও বুঝে যান যে কথাটা তাঁকে কটাক্ষ করেই বলা । কারণ এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ই পরিচালকের ভূমিকায় রানা সরকার প্রযোজিত ছবিতে । দীর্ঘক্ষণ ধরে একে অপরকে লক্ষ্য করে তোপ দাগতে থাকেন (Joyjit Banerjee on Rana Sarkar ) ৷
ওপেন ফোরামে রানা সরকারের দাবি, জয়জিৎ বাংলাদেশের সুপারস্টার শাকিব খানের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন । জয়জিতের বক্তব্য, "রানা এই বিষয়টা প্রমাণ করতে পারবেন যে আমি টাকা নিয়েছি?" সূত্রের খবর অনুযায়ী, এরপর জয়জিতের স্ত্রী শাকিবকে ফোন করেন।
শাকিব খান চেনেনই না রানা সরকারকে । তিনি প্রশ্ন তোলেন, "আমাকে কেন এই বিষয়ে জড়ানো হচ্ছে?" অভিনেতা জয়জিতের পরিবারকে এও পরামর্শ দেন যে, এই প্রযোজকের বিরুদ্ধে অবিলম্বে মামলা করা উচিত । শাকিব সাফ জানিয়েছেন যে, জয়জিৎ বা তাঁর পরিবার কোনও টাকাই নেয়নি তাঁর কাছ থেকে । জয়জিতের স্ত্রী শ্রেয়াকে তিনি জিজ্ঞেস করেন যে, "তোমার উপর কী কোনও কারণে রাগ আছে ওই ব্যক্তির?"
আরও পড়ুন: "লীনাদি আর শৈবালদা আমায় জিতিয়ে দিলেন", মহিলার চরিত্র পেয়ে খুশি সুজি
উল্লেখ্য, জয়জিতের সামাজিক মাধ্যমে এসে আরও অনেকেই রানা সরকারের বিরুদ্ধে নানান মন্তব্য করে যাচ্ছেন । অভিনেতা আইনি পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালে রানা সরকার লেখেন, "কে আর বেআইনি টাকার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে পারে, তার ওপর বিদেশি, টাকা তো গেছে সম্মান ও যাবে । তাঁর চেয়ে আইনের শরণাপন্ন হওয়া ভালো, তাহলে সাক্ষী প্রমান সব কিছু সামনে এনে প্রমান করার সুযোগ পাওয়া যাবে । অপেক্ষায় রইলাম আইনি পদক্ষেপের । " অবশেষে এবার আইনি পথে হাঁটতে শুরু করলেন অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ইটিভি ভারতের তরফে তাঁকে ফোন করা হলে তিনি জানান, "এই নিয়ে আর কিছু বলার নেই। যা বলার আদালত বলবে। আমি আইনি পথে হাঁটতে শুরু করেছি।"