কলকাতা, 15 মে: সুদীপ্ত সেন পরিচালিত 'দ্য কেরালা স্টোরি' রাজ্যে নিষেধাজ্ঞার জারির পরেই সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন ছবির নির্মাতারা ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন বহু শিল্পী, গুণীজনও। তাঁদের মধ্যে ছিলেন চিত্রকর শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। তিনি ইটিভি ভারতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, "এই ছবি না দেখানোর কোনও কারণ আমি দেখতে পাইনি। মাননীয়া হয়তো দেখার সময় পাননি। না-দেখেই রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে ছবিটি না-দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।"
প্রসঙ্গত, অনীক দত্ত পরিচালিত 'ভবিষ্যতের ভূত' ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পরও এমনই তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল এ রাজ্যে। ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি সেই প্রসঙ্গ তুললে চিত্রকর 'ভূতের ভবিষ্যৎ' ছবিটির দিকে তাঁর মন্তব্য ঘুরিয়ে দেন। তিনি বলেন, "ওই পরিচালকটি একটু গণ্ডগোলের। ওই পরিচালকটি নানা রকম কথাবার্তা বলে থাকেন। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টার দেখে ছিঁড়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ওই পরিচালকটি এই রকমই।" শিল্পী দাবি করেন যে, পরিচালক অনীক দত্তের 'ভূতের ভবিষ্যৎ' তাঁর মৌলিক ছবি নয়। ছবিটি অন্য একটি ছবির কপি। অনীক একটু ঘুরিয়ে উপস্থাপনা করেছেন মাত্র।
এই বিষয়ে অনীক দত্ত'র মতামত জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "ওকেও আমার প্রথম থেকে বেশ গণ্ডগোলের মানুষ বলেই মনে হয়। বেশিরভাগ লোকেরই তা মনে হয়। তাই শুভাপ্রসন্ন আমাকে নিয়ে এরকম কথা বলায় আমি অবাক হইনি। আপনারা সবাই জানেন হয়তো, ক'দিন আগে একটি চ্যানেলে আমার সঙ্গে ওর বাগবিতণ্ডা হয়। কিন্তু আমি কী বলব, না বলব তা তো ওর অনুমতি নিয়ে বলব না। একটা সময় আমাকে দেখলে উনি এক গাল হেসে মাথা কাত করেই কথা বলতেন।"
পরিচালক আরও বলেন, "আমিও ওর ব্যাপারে অনেক কথা শুনেছি। যেহেতু আমার কাছে প্রমাণ নেই। তাই আমি বলতে পারব না। উনি তো বলছেন 'ভূতের ভবিষ্যৎ' অন্য ছবির কপি, আমার রিয়েল ছবি নয়। তা হলে তার অরিজিনাল তো একটা আছে। উনি সেটা আমাকে দেখান। যদি তা না পারেন আমি মিডিয়াকে ডেকে বলব। আমি সামনা সামনি বিতর্কে লিপ্ত হতেও রাজি আছি।"
অনীক আরও বলেন, "উনি বলেছেন আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে ছিঁড়ে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছিলাম। আমি কখনোই ছিঁড়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলিনি। আপত্তি জানিয়েছিলাম মাত্র এবং সেই আপত্তি অনেকেরই ছিল। পরবর্তীতে খুলে নেওয়া হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অগণিত ছবি।" তিনি বলেন, "অপরাজিত-র 75 দিনের অনুষ্ঠান ওর 'আর্টস একর' (Artsacre)-এ অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে আমার সায় ছিল না একেবারে। আমি প্রযোজককে জানিয়েছিলাম সেই কথা। কিন্তু আগেই সরাসরি ওদের কথা হয়ে গিয়েছিল তাই আর আমি কিছু বলিনি। তবে আমার পরিচালিত ছবির সেলিব্রেশন সত্ত্বেও আমি যাইনি সেদিন। আবার আপত্তিও জানাইনি। কিন্তু উনি আমার ছবিকে নকল করা ছবি বলবেন, কোনও প্রমাণ ছাড়া। সেটা তো হয় না। ওনাকে প্রমাণ করতে হবে।"
আরও পড়ুন: মমতার সঙ্গে 'সব মিটে গেলেও' দ্য কেরালা স্টোরি নিয়ে অবস্থান বদলাচ্ছেন না শুভাপ্রসন্ন
স্বভাবতই তাঁর না যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি জানান, এপিজে সাহিত্য উৎসবে শুভাপ্রসন্ন একবার বলেছিলেন যে, "সত্যজিৎ রায় একজন ইলাস্ট্রেটর ছিলেন, তিনি তো ছবিটা আঁকতে পারতেন না। আর ছবিটা আঁকতে পারেননি বলেই পরবর্তীকালে কমার্শিয়াল লাইনে চলে এসেছিলেন।..."
এই প্রসঙ্গে পরিচালক আরও একটি দিক তুলে ধরে বলেন, "1985'র শেষদিকে একদিন পণ্ডিত রবিশঙ্কর আর সত্যজিৎ রায়কে মঞ্চে তুলে একটি প্রশ্নোত্তরমূলক আড্ডার পরিকল্পনা করেন শুভাপ্রসন্ন। সত্যজিৎ প্রস্তাব শুনেই তা বাতিল করে দেন। তা সত্ত্বেও চিত্রকর বিজ্ঞাপন দিয়ে টিকিট বিক্রি করেন। যদিও সেই অনুষ্ঠানে সত্যজিৎ রায় আসেননি। এর বছরকয়েক পরে শুভাপ্রসন্ন এক পত্রিকায় 'গণশত্রু' ফিল্মটির রিভিউ লেখার নাম করে সত্যজিৎ রায়ের একটি বিকৃত ছবি এঁকে লেখেন "সত্যজিৎ ফসিল হয়ে গিয়েছেন।"
সবশেষে অনীক দত্ত বলেন, " আপনাদের প্রশ্ন ছিল 'ভবিষ্যতের ভূত' নিয়ে, উনি 'ভূতের ভবিষ্যৎ' টেনে আনলেন। ভবিষ্যতের ভূতের কথা এড়াতেই কি ভূতের ভবিষ্যৎ টেনে আনলেন? উনি বলছেন আমি নকল করে বানিয়েছি 'ভূতের ভবিষ্যৎ'। এটা প্রমাণ করার দায় ওনার। আমার লেজে পা পড়লে আমি ছেড়ে কথা কইব না উনি জেনে রাখুন। এর জন্য আমি মানহানির মামলার পথেও হাঁটতে পারি।"