কলকাতা, 30 মে: ঋতুপর্ণ ঘোষকে হারানোর এক দশক পূর্ণ হল আজ । তাঁর অসময়ে চলে যাওয়া সেদিনও মেনে নিতে পারেননি সিনে অনুরাগীরা, আজও পারেন না। আজও তাঁকে বড্ড দরকার ছিল ইন্ডাস্ট্রির, এমনটাই মনে করেন তাঁর সতীর্থরা। তাঁদেরই কয়েকজন আজ তাঁদের প্রিয় ঋতুদা'কে নিয়ে বললেন ইটিভি ভারতে ।
ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালনায় 'দহন' এবং ' উৎসব' ছবিতে অভিনয় করেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত । তিনি ইটিভি ভারতের কাছে স্মৃতি আওড়াতে গিয়ে বলেন, "ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো একজন পরিচালকের অসময়ে চলে যাওয়া ইন্ডাস্ট্রির কাছে একটা বড় ক্ষতি । আজকের দিনে খুব মিস করছি আমি । উনি বেঁচে থাকলে আরও অনেক কাজ হত ওঁর সঙ্গে । 'দহন' আর ' উৎসব' আমার কেরিয়ারের দু'টি সফল ছবি । অনেক স্মৃতি ওঁর সঙ্গে । স্বল্প পরিসরে তা বলা সম্ভব নয় । ওঁর মতো একজন আন্তর্জাতিক মানের পরিচালক আমাদের বাংলায় ছিলেন, যাঁকে আমাদের আরও অনেক অনেক দিন দরকার ছিল ।"
তাঁর সঙ্গে 'আবহমান' ছবিতে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী দেবযানী চট্টোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "প্রথম ফোনটা ঋতুদাই করেছিলেন ৷ বলেছিলেন, মাজো আমি ঋতুদা বলছি । এখন আমার এই নামটা অনেকে জানে । তখন কেউ জানত না । আমি প্রায় নতুনই তখন । ঋতুদা কোথাও থেকে একটা জেনে নিয়েছিলেন । এক লহমায় আপন হয়ে গিয়েছিলাম। ভীষণ কাছে টেনে নিতে পারতেন মানুষকে। আমার মনে হয় না এটা সবাই পারে।"
অভিনেত্রীদের সঙ্গে তাঁর রসায়ণ ছিল ভীষণ একথা স্বীকার করেছেন অনেকেই ৷ তিনি নাকি ভীষণ ভালো বুঝতেন তাঁদের ৷ তাঁকে নিয়ে বলতে গিয়ে দেবযানী আরও বলেন, "শ্যুটিংয়ে গিয়ে তো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম । কী ডিসিপ্লিনড সবকিছু ! কোনও জুনিয়র আর্টিস্টের জন্য এতটা সময় ব্যয় করেন না কোনও পরিচালক । মাত্র দু'টো দৃশ্য ছিল আমার । নিজে এসে আমার মেক আপ দেখেছিলেন । টিপ পরব নাকি পরব না সেটাও দেখে গিয়েছিলেন । আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম । পুরোটাই অভিনয় করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে । আর 'গানের ওপারে'র সময়ে আমি তো ঋতুদার পোশাক পরেই সিন করেছি । এ এক বড় প্রাপ্তি। এই সব দিক থেকেই তিনি ছিলেন অন্যরকম।"
এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী আরও একটি ঘটনার কথা তুলে ধরে বলেন, "আর্টিস্ট ফোরামের একটা প্যানেল ডিসকাশনের ক্ষেত্রেও আমাকে খুব সাহায্য করেছিলেন ঋতুদা । গোটা বিষয়টা সামলে দিয়েছিলেন । মানুষ এমনি এমনি বড় হয় না । সে তার কাজের মাধ্যমে বড় হয় । আন্তর্জাতিক মানের একজন পরিচালক এমন অমায়িক ছিলেন, সেটা যাঁরা ওঁর সঙ্গে মিশেছেন তাঁরা জানেন । 2013 সালের 30 মে খুব বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে ইন্ডাস্ট্রির ।"
আরও পড়ুন: শুধু গল্প বলিয়ে নয়, রূপোলি পর্দাই ঋতুপর্ণের যুদ্ধের হাতিয়ার
1992 সালে শুরু হয়েছিল ঋতুপর্ণর যাত্রা ৷ বাঙালির প্রিয় ঋতুদা'র প্রথম ছবি ছিল 'হীরের আংটি' ৷ তারপর থেকে জীবনে একের পর এক অসামান্য ছবি তৈরি করেছিলেন তিনি ৷ 'ঊনিশে এপ্রিল', 'দহন', 'বাড়িওয়ালি','সব চরিত্র কাল্পনিক', 'রেনকোট', 'দ্য লাস্ট লিয়র', 'খেলা', 'আবহমান', 'দোসর' সত্যিই তাঁর ঝুলি ঘাঁটতে বসলে মনি মানিক্য শেষ হবে না ৷ তবে সকলের একটাই আপশোস বড় তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল তাঁর স্বপ্নের দৌড় তাঁর কাছে আরও পাওয়ার ছিল বাঙালির ৷