কলকাতা, 14 অগস্ট: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন টলিউডের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বরা। তাঁদের মধ্যে অন্যতম স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, সুজন মুখোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় শোকস্তব্ধ প্রত্যেকে ।
এই বিষয়ে প্রাক্তনী পায়েল সরকার সরব হলেন । তিনি বলেন, "আমি তো ইঞ্জিনিয়ারিং-বিভাগে ছিলাম না। ছিলাম ইতিহাসের ছাত্রী। আমাদের সময়ে সিনিয়ররা ক্লাসে লেখাপড়ার ব্যাপারে অনেক সাহায্য করেছেন। আমার সময়ে যে র্যাগিং হত না, তা নয়। তবে, এরকম ঘটনার কথা শুনিনি। আমি হস্টেলে থাকতাম না। বন্ধুদের কাছ থেকেও এমন ঘটনার কথা শুনিনি কখনও। কিন্তু এবার যেটা ঘটল সেটা যতটা দু:খজনক, ততটাই লজ্জার। আমি বলব, হস্টেলটা তো ক্যাম্পাসের বাইরে। একটাও সিসিটিভি ক্যামেরা নেই কেন? বাইরে থেকে কেউ এসেও তো খারাপ কাজ করে যেতে পারে। একটা ছেলে তিনদিনের জন্য সবে থাকতে শুরু করেছিল। তার মধ্যেই সব শেষ! কেন যথার্থ সিকিউরিটি সিস্টেম নেই? মুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা করেছে ইউনিভার্সিটি। ভালো-খারাপ সব দিকই আছে। এই ঘটনাটা ছিল খারাপ দিক। কর্তৃপক্ষর কাছ থেকে কোনও জোড়ালো বক্তব্য এখনও শুনতে পেলাম না কেন? এখনও কি কিছু বলার সময় হয়নি?"
পায়েল সরকার আরও বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল সিনিয়রদের সঙ্গে বোর্ডিং-এ থাকতে পারবে না ফ্রেশার্স বা নবীনরা। প্রত্যেকটা রাজ্য সেটা মেনে চলছে, আমাদের রাজ্য ছাড়া। মেনে চললে এই ঘটনা ঘটত না। কলেজ পড়ুয়াদের সাহস কী করে হয় পুলিশদের আটকানোর?"
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক প্রাক্তনী অভিনেত্রী গুলশনারা গাফিলতির অভিযোগ তুলেই বলেন, "ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে আমার দ্বিতীয় বাড়িতে। আমি হস্টেলে থাকিনি কখনও। তবে যাঁরা থাকত তাঁদের কাছ থেকেও শুনিনি। তবে যে তাঁরা এহেন কোনও ঘটনার শিকার হয়নি, এমনটাও আমি দাগিয়ে দিতে পারি না। নিশ্চয়ই এই ঘটনা আগেও হয়ে এসেছে। না হলে হঠাৎ করে এত বড় ঘটনা ঘটতে পারে না। প্রশাসনের গাফিলতি রয়েছে। ডিন অফ স্টুডেন্ট এবং হস্টেল সুপারকে এর উত্তর দিতেই হবে। তিনি কেন ওই রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন না? আমি শুধু প্রাক্তনী হিসেবে না, সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই সিস্টেমটার বদল চাই সর্বস্তরে। স্কুল, কলেজ, অফিস সর্বত্র র্যাগিং চলে। কেউ মোটা হলে, কেউ গরিব হলে, সব ক্ষেত্রেই নানা কথা শুনতে হয়। এই প্রসঙ্গে আরও একটা কথা বলব, যাঁদের গায়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা রয়েছে তাঁরাও কিন্তু ট্রমাটাইজড। তাঁরাও অনেক কথা শোনে যে, তোদের ইউনিভার্সিটি তো এরকম, ওরকম। এটাও এক প্রকার র্যাগিং। এটাও বন্ধ হওয়া দরকার। আমি আমার শিক্ষকদের কাছ থেকেই শিখেছি, অন্যায়ের প্রতিবাদ কীভাবে করতে হয়। আর তাই আজ প্রতিবাদে শামিল হয়েছি।"
আরও পড়ুন: 'বেঙ্গলি ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন অ্যাওয়ার্ড'-এ লিভিং লেজেন্ড পুরস্কার পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা অভিনেত্রী অমৃতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, "র্যাগিং স্কুল, কলেজ, অফিস সব জায়গাতেই হয়। যে ঘটনা আমার ইউনিভার্সিটিতে ঘটল, তাতে তো আমার বলতেই লজ্জা লাগবে যে, আমি ওখানকার প্রাক্তনী। ধৃতদের এমন শাস্তি হোক যে, এরকম করার আগে একবার অন্তত ভাববে ওরা। এখানে যারা পড়তে আসে তাঁরা বেশিরভাগই গ্রাম থেকে আসেন। তাঁরা এখানে এসে কী এমন হয়ে যান, যে এসেই র্যাগিং শুরু করে দেয়! এমন কী হল যে, একটা ছেলে ঝাঁপ দিল। নাকি কেউ ফেলে দিল? সেটা অবশ্য এখনও প্রমাণিত নয়। তাই বলতে পারি না। খুব খারাপ ঘটনা ঘটে গেল।"