শিলিগুড়ি, 21 জানুয়ারি : ঝুলিতে রয়েছে একাধিক সোনার পদক । গত কয়েক বছরে রাজ্য ও দেশের হয়ে বহু খেলাতেই জিতেছে ওরা । পরিকাঠামোর অভাব সত্ত্বেও ঘরে তুলেছে স্বর্ণ পদক । তবুও ওদের ঘরে আজ অন্ধকার । অভাবের তাড়নায় এখন খো খো ছাড়তে চান একাধিক জাতীয় স্তরের সোনাজয়ী খেলোয়াড় ।
শিলিগুড়িতে খো খো খেলার নাম নিতেই উঠে আসে সালমা মাঝি, জ্যোতি বিশ্বকর্মা, মাম্পি সরকার, অঞ্জলি মুণ্ডার নাম । খুব সকালে অথবা স্কুল ছুটির পর শিলিগুড়ির সারদামণি স্কুলের মাঠে গেলেই দেখা মিলবে এদের। কেউ জাতীয় স্তরে খেলে বহুবার পদক এনেছেন । কেউ আবার সাফ গেমসেও সোনা পেয়েছেন । গরীব পরিবার থেকে উঠে আসা শিলিগুড়ি মহকুমার এই খো খো খেলোয়াড়দের অধিকাংশেরই আর্থিক অবস্থা এখন ভালো নয় । অভাবের সঙ্গে লড়াই করে খেলতে হচ্ছে তাঁদের । জোটে না পুষ্টিকর খাবার । তাই খেলা ছাড়তে চাইছেন অনেকেই ।
শালুগাড়ার সিংহিঝোড়ার বাসিন্দা সালমা মাঝি । সালমার বাবা দুমরা মাঝি, মা ইমনিয়া মাঝি ৷ তাঁরা দু’জনেই শ্রমিকের কাজ করেন । তবুও মেয়ের পড়াশোনায় খামতি রাখেননি ৷ মেয়েকে কলেজে পড়িয়েছেন তাঁদের সামান্য সঞ্চয় থেকেই ।বর্তমানে কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সালমা । পড়াশোনার পাশাপাশি চালছে খেলাধুলোও । 2016 সাফ গেমসে সোনা জয়ী ভারতীয় খো খো দলের অন্যতম সদস্য সালমা । সালমা বলেন, "ছোটো থেকে খেলছি । বহু পদক এনেছি । আমার স্বপ্ন পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করা আর দেশের হয়ে খেলা । কিন্তু বাধা অর্থ । যে সাফ গেমসে আমি ভারতীয় দলে অংশ নিয়ে সোনা জিতেছিলাম, সেই দলের সদস্যদের যারা অন্য রাজ্য থেকে এসেছিল, তারা সকলেই চাকরি পেয়ে প্রতিষ্ঠিত । পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছে খেলাধুলোও । ওই সময়ে আমি নাবালিকা থাকায় চাকরি পাইনি । এখন সাবালিকা হলেও চাকরি জোটেনি । কতদিন এভাবে আর টানব? বাবা ও মা একসময়ে উৎসাহ দিতেন । এখন তাঁরাও চাইছেন খেলা ছেড়ে অন্তত বেসরকারি কোনও কাজে ঢুকি ৷ যাতে ঘরের জন্য যদি দুটো পয়সা আনতে পারি ।"
অন্যদিকে 2016-তে সাফ গেমস ছাড়াও গত কয়েক বছরে একাধিকবার জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন মনোজ সরকার । তাঁর বাবার মুদিখানার দোকান আছে । পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি খো খো খেলেন মনোজ । মনোজে বলেন, "আমরা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে খেলতে আসি । রোজ দুই বেলা প্রশিক্ষণ নিই । কিন্তু সত্যি বলতে কী, আসা-যাওয়ায় খরচটুকুও জোটানো কঠিন কাজ । অন্য রাজ্যে খো খো খেলতেন যাঁরা, তাঁরা এখন বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান বা নিজের রাজ্যে চাকরি পেয়েছেন । আমরা এসব কিছুই পাইনি । তাই এখন হতাশ হয়ে পড়ছি । এখন পরিবার চাইছে সংসারের হাল ধরি । ভাবছি খেলা ছেড়ে দেব ।"
খো খো কোচ পলাশ পাল আক্ষেপ করে বলেন, "শিলিগুড়ি শুধু টেবল টেনিসের শহর নয় । গত কয়েক বছরে জাতীয় দলের অনেক খো খো খেলোয়াড় উঠে এসেছে এই শহর থেকেই । কিন্তু প্রচার আর আর্থিক সাহায্য মেলেনি । তাই হারিয়ে যাচ্ছে খেলোয়াড়রা । ধরে রাখা যাচ্ছে না তাদের । আমরা নিজেদের পকেট থেকে ওদের বাড়ি থেকে আসা-যাওয়ার ভাড়াটা দিই । এভাবে কতদিন চলবে জানি না ।"
খেলোয়াড়দের চাকরি না পাওয়ার সমস্যা তো আছেই, পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জন্য সামান্য খেলার মাঠটুকুও অনেক সময় মেলে না তাঁদের । অপেক্ষা করতে হয় স্কুল ছুটির জন্য । তারপর প্রায় সন্ধ্যায় অল্প আলোয় শুরু হয় প্র্যাকটিস । রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বা সাংসদ রাজু বিস্তাকে জানিয়েও লাভ হয়নি বলে জানান শিলিগুড়ি খো খো অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ভাস্কর দত্ত মজুমদার । তিনি আক্ষেপ করে বলেন, "নুন আনতে পানতা ফুরোচ্ছে জাতীয় স্তরের খো খো খেলোয়াড়দের ।"