শিলিগুড়ি, 14 ডিসেম্বর : করোনার জেরে টানা দু'বছর বন্ধ রাজ্যের সমস্ত গ্রন্থাগারের (library problem) দরজা । যার ফলে উইপোকায় খেয়ে নষ্ট করেছে প্রায় দু'কোটি বই । আবার কর্মীর অভাবে বন্ধ হয়েছে সাড়ে তিনশো গ্রন্থাগার । করোনার পর সব স্বাভাবিক হতেই এখন মাথায় হাত রাজ্যের জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার দফতরের (govt taking initiative to reform library department)।
ক্ষতির পরিমাণ প্রায় আট থেকে দশ কোটি টাকার । তবে বিষয়টি শুধু টাকার অঙ্কের নয় । নষ্ট হয়ে যাওয়া বইগুলির মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক ও প্রাচীন কিছু বইও । যেগুলো টাকা দিয়েও আর মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে । এই অবস্থায় করোনার সংক্রমণ কমার পর গ্রন্থাগার খুললেও গ্রন্থাগার পরিচালনায় বেশ বেগ পেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে ।
2020 সালের প্রথম দিক থেকে রাজ্যে করোনা থাবা বসাতেই সংক্রমণ এড়াতে সমস্ত গ্রন্থাগার বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার । গ্রন্থাগার বন্ধ করলেও নির্দেশিকা জারি করে অন্তত 15 দিন অন্তর গ্রন্থাগার খুলে পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু সেই নির্দেশ শুনেছে ক'জন ? যার ফলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ পাঠকমহলের ।
আরও পড়ুন: Librarian Recruitment : রাজ্যের দেড় হাজার গ্রন্থাগারিক নিয়োগ, ঘোষণা গ্রন্থাগার মন্ত্রীর
কিন্তু এ বার করোনার সংক্রমণ কমে আসায় ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে গ্রন্থাগারগুলি । পাঠকদের ফের মূল স্রোতে ফেরাতে বইমেলার আয়োজন করছে রাজ্য সরকার । যে সব বই উইপোকায় খেয়ে নষ্ট করেছে সেইসব বইগুলির তালিকা তৈরি করা শুরু হয়েছে । প্রয়োজনে সেইসব বই কেনার পাশাপাশি না কিনতে পারা বইগুলোকে ডিজিটালের মাধ্যমে ই-বুক পরিষেবায় পাঠকদের জন্য তৈরি করারও ব্যবস্থা হচ্ছে । পাশাপাশি গ্রন্থাগারে কর্মী নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরের তরফে ।
লেখক বীরেন চন্দ এ বিষয়ে বলেছেন, "করোনা আবহে গ্রন্থাগারের ঠিকমতো পরিচর্যা না করায় যে পরিমাণ বই নষ্ট হয়েছে তা অপূরণীয় ক্ষতি । কর্মী নিয়োগের অভাবে বন্ধ হয়েছে একাধিক গ্রন্থাগার । এই অবস্থায় কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ করে সমস্যার সমাধান করবেন বলে আশা করছি ।"
রাজ্যের জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী (Siddiqullah Chowdhury) বলেন, "করোনার সময় গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় দু'কোটি বই নষ্ট হয়েছে । প্রত্যেক জেলার গ্রন্থাগার আধিকারিকদের যে সব বই নষ্ট হয়েছে, সেগুলির তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । প্রয়োজনে সেইসব বই ফের কেনা হবে বা সেগুলোকে ডিজিটালাইজেশন করা হবে ।"
আরও পড়ুন: জাতীয় গ্রন্থাগারে শাহ-র অনুষ্ঠানে মাত্রা ছাড়া ভিড়, ক্ষুব্ধ কর্মচারী ইউনিয়ন
এ ছাড়াও তিনি জানান, "কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী কর্মী নিয়োগের জন্য সবুজ সংকেত দিতেই কাজ শুরু হয়েছে । খুব অল্প সময়ে রাজ্যের সমস্ত জেলায় কর্মী নিয়োগ হবে ।"
গ্রন্থাগার বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, সারা রাজ্যে 2 হাজার 480টি গ্রন্থাগার রয়েছে । ইতিমধ্যে কর্মীর অভাবে 350টির মতো গ্রন্থাগার বন্ধ । এ দিকে, দু'কোটি বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বই নষ্ট হয়েছে পুরুলিয়া জেলায় । ওই জেলায় প্রায় 70 হাজার বই নষ্ট হয়েছে । করোনার পর গ্রন্থাগারগুলির হাল ফেরাতে জেলা প্রতি দু'কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার । তা থেকে গ্রামীণ গ্রন্থাগার 10 হাজার, মহকুমা গ্রন্থাগার 15 হাজার ও জেলা গ্রন্থাগার 35 হাজার টাকা করে অনুদান পাবে । পাশাপাশি সারা রাজ্যে 737 জন নতুন কর্মী নিয়োগ করবে সংশ্লিষ্ট দফতর ।