মালদা, 4 জানুয়ারি : ছাত্র ভরতিকে কেন্দ্র করে ফের উত্তপ্ত গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ৷ বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়কে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠল কয়েকজন ছাত্রের বিরুদ্ধে ৷ ঘটনায় গতকাল ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অধ্যাপক ৷ বর্তমানে তিনি মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ এদিকে, এই ঘটনার পর কয়েকজন ছাত্রও মালদা মেডিকেলে ভরতি রয়েছে ৷
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সঙ্গে জাতীয় সেবা প্রকল্পের(NSS) দায়িত্বভার সামলান সৌরেনবাবু ৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ ভরতি সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর ঘরে উপস্থিত হয় কয়েকজন ছাত্র । পাশাপাশি NSS-এ নাম নথিভুক্ত করানোর কথাও বলে তারা । কিন্তু এবিষয়ে কিছু করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন সৌরেনবাবু । এরপর তাঁকে চাপ দিতে থাকে ছাত্ররা ৷ কিন্তু সৌরেনবাবু সাফ জানিয়ে দেন, বিষয়টি তাঁর হাতে নেই ৷ শেষমেশ সৌরেনবাবুর ওপর চড়াও হয় ছাত্ররা ৷ তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ করা হয় বলেও অভিযোগ ৷ গতরাতেই সৌরেনবাবুকে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতি করা হয় ৷
সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমি আমার ঘরে কাজ করছিলাম ৷ সেইসময় কয়েকজন ছাত্র এসে আমাকে একটি অভিযোগ জমা দেওয়ার কথা বলে ৷ আমি তাদের বলেছিলাম, এসব ভরতির বিষয় প্রোগ্রাম অফিসার দেখেন ৷ কো-অর্ডিনেটর ভরতি করেন না, তিনি শুধু নোটিশ দেন ৷ ভরতি করেন প্রোগ্রাম অফিসার ৷ কিন্তু ছাত্ররা কোনও কথা শুনতে রাজি হয়নি ৷ উলটে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকে ৷ ঘণ্টা দেড়েক আমি ওই ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম ৷ কিন্তু ছাত্ররা পরিকল্পনা করে এসেছিল ৷ ধাক্কাধাক্কির মধ্যে কেউ একজন আমার উপর হাত চড়াও হয় ৷ এমনিতেই আমি উচ্চরক্তচাপ ও মধুমেহ রোগে আক্রান্ত ৷ সেই মুহূর্তে আর চাপ নিতে পারিনি ৷ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া উচিত ৷ যারা এই সব ঘটনায় মদত যোগাচ্ছে, সরকারের উচিত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া ৷ এই ঘটনা শুধু আমার সঙ্গে নয়, আরও অনেকের সঙ্গেই ঘটেছে ৷ আমি লিখিতভাবে রেজিস্ট্রারকে জানানোর পাশাপাশি ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি ৷”
এদিকে, এই ঘটনার পর কয়েকজন ছাত্রও মালদা মেডিকেলে ভরতি রয়েছে ৷ ছাত্রদের তরফে মহম্মদ ফরিদ মণ্ডল বলে, "বেশ কিছু ছাত্রের NSS থেকে নাম বাদ পড়েছে ৷ আমরা একটি আবেদনপত্র নিয়ে স্যারের কাছে গেছিলাম ৷ কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কিছু করতে পারবেন না বলে, জানিয়ে দেন স্যার।" এরপর মহম্মদের কথায় উঠে আসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয় । মহম্মদ জানায়, এই ঘটনার সময় একটি গোষ্ঠী এসে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ৷ পরে তারা রেজিস্ট্রারের কাছে ওই আবেদনের কপি জমা দিতে যায় ৷ সেই সময় টুকাই গোষ্ঠীর ছেলেরা ছাত্রদের উপর চড়াও হয় ৷ ঘটনায় দু'জন জখম হয় । বর্তমানে, তারা মালদা মেডিকেলে ভরতি রয়েছে ৷
মহম্মদ নিজেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত । তার অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার পেছনে এই গুটিকয়েক ছেলে রয়েছে ৷ সৎভাবে কাজ করতে গেলেই টুকাই গোষ্ঠীর লোকজন বাধা দেয় ৷ টুকাইয়ের বিরুদ্ধে ফাইল চুরির অভিযোগ রয়েছে ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও গণতন্ত্র নেই ৷”