মালদা, 17 অক্টোবর: নিজেদের দেশে পেট চলে না ৷ তাই ভালো উপার্জনের আশায় ভারতে ঢুকেছিলেন বাংলাদেশের দুই মহিলা (Two Bangladeshi Women) ৷ সীমান্ত পারাপারে তাঁদের সাহায্য করেছিল দুই দেশের দুই দালাল ৷ কিন্তু, তখনও তাঁরা কল্পনা করতে পারেননি যে তাঁদের সঙ্গে কী হতে চলেছে ! ওই দুই মহিলার দাবি, মোটা টাকা আয়ের লোভ দেখিয়ে তাঁদের মুম্বইয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ তারপর বিক্রি করে দেওয়া হয় সেখানাকার একটি পতিতাপল্লিতে (Human Trafficking) ৷ কোনও মতে সেখান থেকে পালিয়ে মালদায় চলে আসেন ওই দুই মহিলা ৷ সীমান্তে গিয়ে কাঁটাতারের বেড়া পার করিয়ে দেওয়ার জন্য করেন বিএসএফ জওয়ানদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেন ৷ কিন্তু আইনের কাছে অসহায় জওয়ানরাও ৷ তাঁরা দুই মহিলাকেই মালদা (Malda) থানার হাতে তুলে দেন ৷
ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আদমপুর বিওপি এলাকায় ৷ শনিবার স্থানীয় মানুষজন অপরিচিত দুই মহিলাকে সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখেন ৷ এরপর হঠাৎ ওই দুই মহিলা সীমান্তে মোতায়েন বিএসএফ জওয়ানদের কাছে যান ৷ জানান, তাঁরা বাংলাদেশি ৷ উপার্জনের আশায় দালালের মাধ্যমে ভারতে এসেছিলেন ৷ কিন্তু তাঁদের মুম্বইয়ের এক পতিতাপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয় ৷ কোনওক্রমে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছেন তাঁরা ৷ এখন দেশে ফিরতে চান ৷ এরপর শনিবারই দুই মহিলাকে মালদা থানার হাতে তুলে দেয় বিএসএফ ৷ সেদিনই তাঁদের জেলা আদালতের মাধ্যমে দু'দিনের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ ৷ সেই হেফাজতের মেয়াদ শেষে সোমবার দু'জনকে ফের আদালতে পেশ করা হয় ৷ আদালত সূত্রে খবর, দুই মহিলাকেই 14 দিনের জন্য জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ৷
আরও পড়ুন: গাঁজা পাচার করে জেলে স্বামী, পাচারে নেমে গ্রেফতার স্ত্রীও !
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই মহিলার মধ্যে একজনের বয়স 33 বছর ৷ বছর দু'য়েক আগে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে ৷ বাংলাদেশের নাটোর জেলায় তাঁর বাড়ি ৷ আরেক মহিলা 35 বছর বয়সি ৷ তিনি ঢাকা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ৷ তবে, তাঁরা দু'জন একসঙ্গে ভারতে ঢোকেননি ৷ বিধবা মহিলা মাসখানেক আগে এদেশে আসেন ৷ অন্যজন দিন পনেরো আগে ভারতে পা রাখেন ৷ ওপারের দালালের মাধ্যমেই তাঁদের এদেশে আসা ৷ বাংলাদেশি দালাল তাঁদের সঙ্গে এক ভারতীয় দালালের কথা বলিয়ে দেয় ৷ তাঁদের গৃহ পরিচারিকার কাজে মোটা টাকা আয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ৷ সেই কারণেই তাঁরা দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন ৷
পরবর্তীতে মুম্বইয়ের পতিতাপল্লিতে দুই মহিলার দেখা হয় ৷ সূত্রের খবর, তাঁদের দু'জনকে একই জায়গায় বিক্রি করা হয়েছিল ৷ একসঙ্গেই থাকতে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের ৷ সেই সময়েই পতিতাপল্লি থেকে পালানোর ছক কষেন দু'জনে ৷ দিন সাতেক আগে সেই পরিকল্পনা সফল হয় ৷ একের পর এক ট্রেন বদলে মালদা পৌঁছন তাঁরা ৷ শনিবার ভোরে মালদা স্টেশন থেকে অটোয় আদমপুর সীমান্তে আসেন ৷
সোমবার আদালতে যাওয়ার পথে এক মহিলা বলেন, "আমাদের বাসাবাড়িতে কাজের কথা বলা হয়েছিল ৷ ওপারের এক দালাল আমাদের সঙ্গে এদেশের আর এক দালালের যোগাযোগ করিয়ে দেয় ৷ এপারের দালাল বলেছিল, মুম্বইয়ে বাসাবাড়িতে কাজ করে মোটা টাকা আয় করা যাবে ৷ কিন্তু মুম্বইয়ের পতিতালয়ে আমাদের প্রত্যেককে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয় ৷ আমরা সেখান থেকে কোনওরকমে পালিয়ে আসি ৷ বিএসএফ-এর কাছে গিয়ে সীমান্ত পার করিয়ে দিতে বলেছিলাম ৷ কিন্তু, ওরা আমাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয় ৷ আমরা দেশে ফিরে যেতে চাই ৷"
মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই মহিলার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ রয়েছে ৷ তাঁদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে ৷