মালদা, 12 অগাস্ট : অঞ্চল সভাপতি করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে 2 লাখ টাকা নিয়েছেন প্রাক্তন ব্লক সভাপতি ! অভিযোগ করলেন এক তৃণমূল কর্মী । প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় টাকা চাইতে যান । কিন্তু, তাঁর উপর নির্যাতন করা হয় । বিচার চাইতে যান কালীঘাট । তৃণমূল সুপ্রিমোর বাড়ি । ব্লক সভাপতির এহেন কাজকর্মের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান তাঁর কাছে । কালীঘাটের পরামর্শ মেনে জেলায় ফিরে দলের উপরমহলে সব কথা জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি । টাকা ফেরত পেতে শেষ পর্যন্ত পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি । ঘটনার প্রেক্ষিতে অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল । বিশেষ করে রাজ্যজুড়ে যখন কাটমানি নিয়ে রব উঠেছে, তখন দলের ভিতরেই এমন অভিযোগে অস্বস্তি গোপন করতে পারেননি জেলা তৃণমূল সভানেত্রীও । তিনি এই ঘটনায় তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন । একই আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপারও ।
ঘটনাটি হবিবপুর ব্লকের । কয়েকদিন আগে পর্যন্ত সেই ব্লকের তৃণমূল সভাপতি ছিলেন বুলবুলচণ্ডী গ্রামের বাসিন্দা প্রভাস ওরফে বট চৌধুরি । সম্প্রতি জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর পুরোনো ব্লক কমিটি ভেঙে অস্থায়ী একটি কমিটি গঠন করেছেন । 8 জনের সেই কমিটিতে রয়েছেন প্রভাসবাবুও । তাঁর বিরুদ্ধেই 2 লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন ঋষিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের লোনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাবলু মণ্ডল । পুলিশ সুপারের কাছে দায়ের করা অভিযোগপত্রে তিনি জানিয়েছেন, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের মাস তিনেক আগে প্রভাসবাবু তাঁকে দলের অঞ্চল সভাপতি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর কাছ থেকে 2 লাখ টাকা ঘুষ নেন । দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও প্রভাসবাবু তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন না করায় তিনি টাকা ফেরত চান । এরপর গত 29 মার্চ ভরা বাজারে তাঁকে নির্যাতন করে প্রভাসবাবুর লোকজন । এনিয়ে তিনি হবিবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি । তাই শেষ পর্যন্ত টাকা ফেরত পেতে তিনি পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন ।
ইটিভি ভারতকে বাবলু বলেন, "ঋষিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে আমাদের বুথে পর পর দু'বার তৃণমূল প্রার্থী জিতলেও পঞ্চায়েত প্রধানের আসন CPI(M)-কে ছেড়ে দেন তৎকালীন ব্লক তৃণমূল সভাপতি উজ্জ্বল মিশ্র । পরে তাঁকে সরিয়ে ব্লক সভাপতি করা হয় প্রভাস চৌধুরিকে । প্রভাসবাবু আমাকে দলের অঞ্চল সভাপতি করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন । কিন্তু তার জন্য লাখ দুয়েক টাকা চাঁদা লাগবে বলে জানান । পঞ্চায়েত ভোটের 3 মাস আগে আইহোতে থাকা একটি জায়গা বিক্রি করে এবং কিছু জমি বন্ধক রেখে সেই টাকা আমি প্রভাসবাবুকে দিয়েছিলাম । ব্যাঙ্ক থেকেও আমাকে ঋণ নিতে হয়েছিল । গ্রামের মানুষজন সেসব খবর জানে । আমি সব প্রমাণ দিতে পারব । কিন্তু কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চাই । তাই ভরা বাজারে প্রভাসবাবুর লোকজন আমাকে মারধর করে । গোটা বিষয়টি নিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে গিয়েও অভিযোগ জানিয়েছি । সেখান থেকে আমাকে বিষয়টি নিয়ে মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয় । আমি গৌরবাবুর কাছে যাই । তিনি আমাকে এলাকার নেতা দিলীপ মণ্ডলের কাছে যেতে বলেন । কিন্তু দিলীপবাবু জানান, তিনিই এই মুহূর্তে দলে ঝামেলায় রয়েছেন । এখন আমাকে কোনও সাহায্য করতে পারবেন না । বট চৌধুরি আমাকে পাত্তা দেন না । BJP-কে সঙ্গে নিয়ে চলেন । আমি মৌসম নুর সহ দলের উপরমহলের প্রত্যেককে এবিষয়ে জানালেও এখনও নিজের টাকা ফেরত পাইনি । তাই টাকা ফেরত পেতে শেষ পর্যন্ত পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি ।"
যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বাবলুকে পাগল বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন প্রভাস । তিনি বলেন, "এই ছেলেটি পাগল । আগে BJP করত । পরে কোন দল করে তা আমি নিজেও জানি না । ও আমার বাড়িতে কয়েকবার এসে অঞ্চল সভাপতি করে দেওয়ার দাবি করে । ওর কথাবার্তা আর আচরণ দেখে আমার তখনই মনে হয়েছিল, পাগল । সম্প্রতি হবিবপুর থানায় আমাদের ঋষিপুর অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছে । এধরনের লোক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করে । আমি গোটা ঘটনাটি দলের জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি । জেলা নেতৃত্ব আমাকে জানিয়েছে, এরপরেও বাড়াবাড়ি করা হলে আমি যেন ওর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করি । এই ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে জেলা নেতৃত্ব । তবে এই ঘটনা এখনও আমি রাজ্য নেতৃত্বকে জানাইনি । ওই লোকটি জেলা নেতৃত্বের কাছেও গেছিল । সমাজে চলতে গেলে অনেকে অনেক কিছুই বলতে পারে । তবে দেখতে হবে, যে এসব অভিযোগ করছে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটা । ও একেবারেই মানসিক ভারসাম্যহীন।"
গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা তৃণমূল । অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুরও । তিনি বলেন, "সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকেই বিষয়টি জানতে পারলাম। দলীয়ভাবে আমরা নিশ্চয়ই এব্যাপারে তদন্ত করব । অভিযোগের সত্যতা কতটা রয়েছে সেটাও আমাদের জানতে হবে । যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব । আর যেহেতু ওই ব্যক্তি পুলিশের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন, তাই পুলিশও নিশ্চয়ই আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে । তবে এই অভিযোগে জেলায় তৃণমূল যে ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে, তা আমার মনে হয় না । কারণ, যিনি অভিযোগ করেছেন, তিনি দলের কাছ থেকে বিচার পাচ্ছেন কি না তা দেখতে হবে । আরও দেখতে হবে, এরকম ঘটনা আদৌ ঘটেছে কি না । কারণ, এখন অনেক ভুয়ো অভিযোগও জমা পড়ছে । কিন্তু এরকম ঘটনা সত্যি হয়ে থাকলে আমরা তো ব্যবস্থা নেবই, না ঘটলেও আমরা ব্যবস্থা নেব । যাতে ভবিষ্যতে কেউ মিথ্যে অভিযোগ না জানাতে পারে ।"
এপ্রসঙ্গে পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, তাঁর দপ্তরে জমা পড়া সমস্ত অভিযোগই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয় । এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না ।