মালদা, 6 নভেম্বর : সঞ্জয় রবিদাসকে মনে আছে? চাঁচলের কনুয়া এলাকার যে ছেলে জুতো সেলাই করে বাস্তবিকই চণ্ডীপাঠ করেছিল৷ বাবার অবর্তমানে চামড়া সেলাই করে সংসারের পেট চালানোর পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা বহাল রেখেছিল কনুয়া হাইস্কুলের ফার্স্ট বয় সঞ্জয়৷ জুতো সেলাই করেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছিল সে৷ শেষ পর্যন্ত এই লড়াইয়ের স্বীকৃতি পেতে চলেছে সঞ্জয়৷ রাজ্য সরকারের তরফে তাকে দেওয়া হচ্ছে "বীরপুরুষ" পুরস্কার। আগামী 20 নভেম্বর কলকাতার রবীন্দ্রসদনে উত্তরবঙ্গের আরও ছয় বীরের সঙ্গে রাজ্যের তরফে পুরস্কৃত করা হবে তাকে৷ সেকথা জানিয়েছেন জেলা সমাজকল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি৷ একথা শোনার পর আনন্দের ভাষা নেই সঞ্জয়ের৷
কনুয়া গ্রামের সঞ্জয় রবিদাসের বাবা জগদীশ রবিদাস 2003 সালে মারা যান৷ বাবার মৃত্যুর পর মা কল্যাণীদেবী জমিতে নিড়ানি দেওয়ার কাজ করে ছেলেকে মানুষ করতে শুরু করেন৷ পরবর্তীতে সঞ্জয়ও বাবার পুরোনো পেশা বেছে নেয়৷ কনুয়া বাজারে জুতো সেলাই করত সে৷ এদিকে ছোটো থেকেই অসম্ভব মেধাবী সে৷ কনুয়া হাইস্কুলে বরাবর ফার্স্ট হয়৷ শিক্ষকরাও তাকে পড়াশোনায় সবরকম সাহায্য করতেন৷ এভাবেই 2018 সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সে 465 নম্বর পায়৷ এবার সে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল৷ কিন্তু তার মধ্যেই দেশে হানা দেয় কোরোনা৷ শুরু হয়ে যায় লকডাউন৷ পরীক্ষা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়৷ বন্ধ হয়ে যায় তার ব্যবসাও৷ সেই সময়ই তার খবর ETV ভারতে প্রকাশিত হয়৷ পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা যায়, উচ্চমাধ্যমিকে সঞ্জয় 90 শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে৷
সংবাদমাধ্যমে সঞ্জয়ের খবর প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজরে আসে জেলা সমাজকল্যাণ দপ্তরের৷ দপ্তরের পক্ষ থেকে তার নাম এবারের "বীরপুরুষ" পুরস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়৷ সেই সুপারিশ গ্রহণ করে রাজ্য৷ দপ্তরের জেলা আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি আজ জানিয়েছেন, “চাঁচল 1 ব্লকের অলিহণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের সঞ্জয় রবিদাস এবার রাজ্য সরকারের বীরপুরুষ পুরস্কার পেতে চলেছে৷ আগামী 20 নভেম্বর কলকাতার রবীন্দ্রসদনে তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে৷ জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ের জন্যই তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে৷”এই খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত সঞ্জয়৷ সে জানিয়েছে, "এই পুরস্কার সামনের দিকে এগিয়ে যেতে, আরও লড়াই করতে তাকে প্রেরণা দেবে৷ দারিদ্রের কাছে আমি হার মানতে রাজি নই৷ আমাকে আরও বড় হতে হবে৷”