ETV Bharat / city

ঘাস লাগানো ঘিরে কোটি টাকার দুর্নীতি ! তৃণমূলের প্রধানের বিরুদ্ধে চিঠি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে - letters to pmo

নদীবাঁধ রুখতে ভিটিভার ঘাস লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । তাতেই কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তৃণমূলের প্রধানের বিরুদ্ধে ।

নদীবাঁধ রুখতে ভিটিভার ঘাস লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল
author img

By

Published : Jul 10, 2019, 1:51 AM IST

Updated : Jul 10, 2019, 2:00 AM IST

মালদা, 10 জুলাই : নদীর পাড়ে থাকা ঘাসের দাম কত? মনে হয় না, এনিয়ে কারও তেমন মাথা ব্যথা থাকবে । ও ঘাস তো গোরু-ছাগলের খাদ্য বলে উড়িয়ে দেবেন সবাই । কিন্তু সেই ঘাসকে কেন্দ্র করে যখন কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তখন সবাই নড়েচড়ে বসতে বাধ্য । এবার গঙ্গাপাড়ের ঘাস নিয়ে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে । শুধু মুখে বলাই নয়, এই নিয়ে গ্রামবাসীরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন BDO, মহকুমাশাসক, জেলাশাসক, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও । প্রশাসন অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দু'দিনের মধ্যে কোনও ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন গ্রামবাসীরা । যদিও এই অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে রাজি হননি BDO । তবে তিনি গ্রামবাসীদের এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন । ঘটনাটি কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের পঞ্চানন্দপুর এক গ্রাম পঞ্চায়েতের ।

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

গঙ্গাভাঙনের সৌজন্যে পঞ্চানন্দপুরের নাম এখন রাজ্যবাসীর কাছে পরিচিত । নব্বইয়ের দশকে ভয়াবহ গঙ্গাভাঙনে নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে একের পর এক গ্রাম । গোটা একটি গ্রাম পঞ্চায়েত মালদা জেলার মানচিত্র থেকে মুছে গেছে । এক রাতে ভিটেমাটি হারিয়ে রাস্তার ভিখারি হয়েছেন অনেক বিত্তবান মানুষ । সময়ের সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা কমলেও পুরোনো স্মৃতি এখনও বয়ে চলেছেন এলাকার মানুষজন । বর্ষা আসলেই আতঙ্কে তাঁদের বুক কেঁপে ওঠে । গত বর্ষায় কয়েকটি জায়গায় সামান্য ভাঙন হয়েছিল । তাতেই তাঁরা মনে করছিলেন পূর্বের স্মৃতি । ফের বর্ষা এসেছে । বাড়তে শুরু করেছে গঙ্গার জলস্তর । তারই মধ্যে পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে ভাঙনরোধের কাজে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ । যদিও প্রধানের শওহরের দাবি, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে । রাজনৈতিক কারণে এসব অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে ।

প্রায় আড়াই দশক পঞ্চানন্দপুর এক গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল কংগ্রেসের দখলে । গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই গ্রাম পঞ্চায়েত কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল । নতুন প্রধান হন রিজিয়া বিবি । যদিও তিনি নামেই প্রধান, পঞ্চায়েতের সমস্ত কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করেন তাঁর শওহর মুকুল হোসেন । গঙ্গার ভাঙনরোধের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন । তার মধ্যে একটি ছিল গঙ্গার পাড়ে ভিটিভার ঘাস লাগানো । এই ঘাস বাংলা ভাষায় কুশ নামে পরিচিত । ঘাসের শিকড় মাটির বহু নীচ পর্যন্ত চলে যায় । তাই এটি নদীভাঙন রোধে ভালো কাজ করে । পৃথিবীর অনেক দেশেই নদীভাঙন রোধ করার জন্য এই ঘাস ব্যবহার করা হয় । কালিয়াচক দুই এবং মানিকচক ব্লকে গঙ্গার ভাঙনরোধের জন্য ভিটিভার প্রকল্প রূপায়ন করেন তৎকালীন জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী । এতে কাজও হয় । নদীর পাড়ে এই ঘাস লাগানোয় গঙ্গার ভাঙন অনেকাংশেই রোধ করা গেছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে ।

এই ঘাস লাগানো প্রকল্পে রিজিয়া বিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? জোহরুল আলম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "গোটা রাজ্য জানে পঞ্চানন্দপুর গঙ্গাভাঙন কবলিত এলাকা । ভাঙনরোধের জন্য রাজ্য সরকার ভিটিভার প্রকল্প গ্রহণ করে । এই ঘাস লাগানো হলে ভূমিক্ষয় রোধ হয় । পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান আঞ্জুনারা বেগমের আমলে এই কাজ ঠিকমতোই হত । কিন্তু তৃণমূলের রিজিয়া বিবি প্রধান হওয়ার পর থেকেই এই প্রকল্পে দুর্নীতি চলছে । ছ'মাস আগে নদীর ধারে ভিটিভার ঘাস লাগানোর জন্য যে স্কিম তৈরি করা হয়েছে, তাতে কোনও কাজই হয়নি । এই প্রকল্পে 17টি স্কিমের প্রতিটিতে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রধান । সকুল্লাপুর শ্মশানঘাট থেকে পঞ্চানন্দপুর ফেরিঘাটের মধ্যে রয়েছে চারটি স্কিম । কোনও কাজ না করেই এই চারটি স্কিমে তোলা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা । আমরা এনিয়ে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে অভিযোগ জানিয়েছি । কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রশাসন কোনও তদন্ত করেনি । আমরা প্রশাসনকে সাফ জানিয়ে দিচ্ছি, আগামী দু'দিনের মধ্যে এই নিয়ে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নিলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব । শুধু ঘাস নিয়ে দুর্নীতিই নয়, রিজিয়া বিবির বিরুদ্ধে ভুয়ো জবকার্ড তৈরি করে আর্থিক দুর্নীতিসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে ।"

এবিষয়ে আরেক গ্রামবাসী আলি আবদুল্লা বলেন, "এলাকার নিকাশি নালা তৈরি করার জন্য সাড়ে চার লাখ টাকার একটি প্রকল্প ছিল । সেই প্রকল্পে কোনও কাজ না করেই পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান । ভুয়ো জবকার্ড তৈরি করে সেই টাকা তোলা হয়েছে ।" গ্রামবাসী শেখ রিন্টুর অভিযোগ, "সরকারি স্কিমে নিজের জমিতে আমরা আট জন সবজি চাষ করেছি । সেই স্কিমের 2 লাখ 31 হাজার টাকার মধ্যে আমরা মাত্র 1600 টাকা পেয়েছি । অথচ এই স্কিমে আমার 1 লাখ 71 হাজার টাকা পাওয়ার কথা । আজ দেব, কাল দেব বলে ঘোরাচ্ছে প্রধানের শওহর । আমার মনে হয়, বাকি টাকা প্রধান তুলে নিয়েছেন ।"

রিজিয়া বিবি ক্যামেরার সামনে আসেননি । তাঁর শওহর মুকুল হোসেন বলেন, "যারা দুর্নীতির এই অভিযোগ তুলছে, আসলে তারাই দুর্নীতিতে যুক্ত । গত 25 বছর ধরে ওরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত । আমরা আইন মেনে কাজ করেছি । তার প্রমাণও আমাদের কাছে আছে । এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, মিথ্যে । কিছু কিছু স্কিমের ভিটিভার এখনও আছে । তবে কিছু জায়গায় রোদের তাপে গাছ নষ্ট হয়েছে । বেড়া ভেঙে গোরু-ছাগলও অনেক গাছ নষ্ট করেছে । মোট 17টি স্কিমের প্রতিটিতে যে 7 লাখ 50 হাজার টাকা দেখানো হচ্ছে, সেখানে ভিতরে ঢুকে দেখতে হবে বাড়তি টাকা কিসের রয়েছে । ঘাস কেনার বিল BDO দপ্তর থেকে হয় । শ্রমিকদের বিল আমরা করি । গত ফেব্রুয়ারিতে এই স্কিমগুলির কাজ করা হয়েছে । আমরা সেই গাছ দেখাশোনাও করছি । যারা 2 কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে, তারা জানে না, আমরা অত টাকার কাজই করিনি । এক বছরেও আমরা অত টাকার কাজ করতে পারব না । আর মাত্র 10 মাস আগে আমরা চার্জ পেয়েছি । আসলে এই অভিযোগের পিছনে আছে বিদায়ী প্রধান । পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় সে এখন পাগল হয়ে গেছে । ও নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত । নিজেকে বাঁচাতে ও এখন এই অভিযোগ তুলছে । আমরাও ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করব ।" মুকুলসাহেব স্বীকার করে নেন, বিবি পঞ্চায়েত প্রধান হলেও তিনিই সব কাজ পরিচালনা করেন ।

এই নিয়ে প্রশাসনিক কোনও কর্তা ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে চাননি । তবে কালিয়াচক 2-এর BDO সঞ্জয় ঘিসিং জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী দু'দিনের মধ্যে তিনি তদন্তকারী দলকে ঘটনাস্থলে পাঠাচ্ছেন । অন্যদিকে মোথাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক, তৃণমূল নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিব বলেন, "প্রধানের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি প্রমাণিত হলে দল কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।"

মালদা, 10 জুলাই : নদীর পাড়ে থাকা ঘাসের দাম কত? মনে হয় না, এনিয়ে কারও তেমন মাথা ব্যথা থাকবে । ও ঘাস তো গোরু-ছাগলের খাদ্য বলে উড়িয়ে দেবেন সবাই । কিন্তু সেই ঘাসকে কেন্দ্র করে যখন কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তখন সবাই নড়েচড়ে বসতে বাধ্য । এবার গঙ্গাপাড়ের ঘাস নিয়ে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে । শুধু মুখে বলাই নয়, এই নিয়ে গ্রামবাসীরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন BDO, মহকুমাশাসক, জেলাশাসক, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও । প্রশাসন অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দু'দিনের মধ্যে কোনও ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন গ্রামবাসীরা । যদিও এই অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে রাজি হননি BDO । তবে তিনি গ্রামবাসীদের এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন । ঘটনাটি কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের পঞ্চানন্দপুর এক গ্রাম পঞ্চায়েতের ।

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

গঙ্গাভাঙনের সৌজন্যে পঞ্চানন্দপুরের নাম এখন রাজ্যবাসীর কাছে পরিচিত । নব্বইয়ের দশকে ভয়াবহ গঙ্গাভাঙনে নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে একের পর এক গ্রাম । গোটা একটি গ্রাম পঞ্চায়েত মালদা জেলার মানচিত্র থেকে মুছে গেছে । এক রাতে ভিটেমাটি হারিয়ে রাস্তার ভিখারি হয়েছেন অনেক বিত্তবান মানুষ । সময়ের সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা কমলেও পুরোনো স্মৃতি এখনও বয়ে চলেছেন এলাকার মানুষজন । বর্ষা আসলেই আতঙ্কে তাঁদের বুক কেঁপে ওঠে । গত বর্ষায় কয়েকটি জায়গায় সামান্য ভাঙন হয়েছিল । তাতেই তাঁরা মনে করছিলেন পূর্বের স্মৃতি । ফের বর্ষা এসেছে । বাড়তে শুরু করেছে গঙ্গার জলস্তর । তারই মধ্যে পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে ভাঙনরোধের কাজে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ । যদিও প্রধানের শওহরের দাবি, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে । রাজনৈতিক কারণে এসব অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে ।

প্রায় আড়াই দশক পঞ্চানন্দপুর এক গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল কংগ্রেসের দখলে । গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই গ্রাম পঞ্চায়েত কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল । নতুন প্রধান হন রিজিয়া বিবি । যদিও তিনি নামেই প্রধান, পঞ্চায়েতের সমস্ত কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করেন তাঁর শওহর মুকুল হোসেন । গঙ্গার ভাঙনরোধের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন । তার মধ্যে একটি ছিল গঙ্গার পাড়ে ভিটিভার ঘাস লাগানো । এই ঘাস বাংলা ভাষায় কুশ নামে পরিচিত । ঘাসের শিকড় মাটির বহু নীচ পর্যন্ত চলে যায় । তাই এটি নদীভাঙন রোধে ভালো কাজ করে । পৃথিবীর অনেক দেশেই নদীভাঙন রোধ করার জন্য এই ঘাস ব্যবহার করা হয় । কালিয়াচক দুই এবং মানিকচক ব্লকে গঙ্গার ভাঙনরোধের জন্য ভিটিভার প্রকল্প রূপায়ন করেন তৎকালীন জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী । এতে কাজও হয় । নদীর পাড়ে এই ঘাস লাগানোয় গঙ্গার ভাঙন অনেকাংশেই রোধ করা গেছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে ।

এই ঘাস লাগানো প্রকল্পে রিজিয়া বিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? জোহরুল আলম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "গোটা রাজ্য জানে পঞ্চানন্দপুর গঙ্গাভাঙন কবলিত এলাকা । ভাঙনরোধের জন্য রাজ্য সরকার ভিটিভার প্রকল্প গ্রহণ করে । এই ঘাস লাগানো হলে ভূমিক্ষয় রোধ হয় । পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান আঞ্জুনারা বেগমের আমলে এই কাজ ঠিকমতোই হত । কিন্তু তৃণমূলের রিজিয়া বিবি প্রধান হওয়ার পর থেকেই এই প্রকল্পে দুর্নীতি চলছে । ছ'মাস আগে নদীর ধারে ভিটিভার ঘাস লাগানোর জন্য যে স্কিম তৈরি করা হয়েছে, তাতে কোনও কাজই হয়নি । এই প্রকল্পে 17টি স্কিমের প্রতিটিতে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রধান । সকুল্লাপুর শ্মশানঘাট থেকে পঞ্চানন্দপুর ফেরিঘাটের মধ্যে রয়েছে চারটি স্কিম । কোনও কাজ না করেই এই চারটি স্কিমে তোলা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা । আমরা এনিয়ে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে অভিযোগ জানিয়েছি । কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রশাসন কোনও তদন্ত করেনি । আমরা প্রশাসনকে সাফ জানিয়ে দিচ্ছি, আগামী দু'দিনের মধ্যে এই নিয়ে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নিলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব । শুধু ঘাস নিয়ে দুর্নীতিই নয়, রিজিয়া বিবির বিরুদ্ধে ভুয়ো জবকার্ড তৈরি করে আর্থিক দুর্নীতিসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে ।"

এবিষয়ে আরেক গ্রামবাসী আলি আবদুল্লা বলেন, "এলাকার নিকাশি নালা তৈরি করার জন্য সাড়ে চার লাখ টাকার একটি প্রকল্প ছিল । সেই প্রকল্পে কোনও কাজ না করেই পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান । ভুয়ো জবকার্ড তৈরি করে সেই টাকা তোলা হয়েছে ।" গ্রামবাসী শেখ রিন্টুর অভিযোগ, "সরকারি স্কিমে নিজের জমিতে আমরা আট জন সবজি চাষ করেছি । সেই স্কিমের 2 লাখ 31 হাজার টাকার মধ্যে আমরা মাত্র 1600 টাকা পেয়েছি । অথচ এই স্কিমে আমার 1 লাখ 71 হাজার টাকা পাওয়ার কথা । আজ দেব, কাল দেব বলে ঘোরাচ্ছে প্রধানের শওহর । আমার মনে হয়, বাকি টাকা প্রধান তুলে নিয়েছেন ।"

রিজিয়া বিবি ক্যামেরার সামনে আসেননি । তাঁর শওহর মুকুল হোসেন বলেন, "যারা দুর্নীতির এই অভিযোগ তুলছে, আসলে তারাই দুর্নীতিতে যুক্ত । গত 25 বছর ধরে ওরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত । আমরা আইন মেনে কাজ করেছি । তার প্রমাণও আমাদের কাছে আছে । এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, মিথ্যে । কিছু কিছু স্কিমের ভিটিভার এখনও আছে । তবে কিছু জায়গায় রোদের তাপে গাছ নষ্ট হয়েছে । বেড়া ভেঙে গোরু-ছাগলও অনেক গাছ নষ্ট করেছে । মোট 17টি স্কিমের প্রতিটিতে যে 7 লাখ 50 হাজার টাকা দেখানো হচ্ছে, সেখানে ভিতরে ঢুকে দেখতে হবে বাড়তি টাকা কিসের রয়েছে । ঘাস কেনার বিল BDO দপ্তর থেকে হয় । শ্রমিকদের বিল আমরা করি । গত ফেব্রুয়ারিতে এই স্কিমগুলির কাজ করা হয়েছে । আমরা সেই গাছ দেখাশোনাও করছি । যারা 2 কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে, তারা জানে না, আমরা অত টাকার কাজই করিনি । এক বছরেও আমরা অত টাকার কাজ করতে পারব না । আর মাত্র 10 মাস আগে আমরা চার্জ পেয়েছি । আসলে এই অভিযোগের পিছনে আছে বিদায়ী প্রধান । পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় সে এখন পাগল হয়ে গেছে । ও নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত । নিজেকে বাঁচাতে ও এখন এই অভিযোগ তুলছে । আমরাও ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করব ।" মুকুলসাহেব স্বীকার করে নেন, বিবি পঞ্চায়েত প্রধান হলেও তিনিই সব কাজ পরিচালনা করেন ।

এই নিয়ে প্রশাসনিক কোনও কর্তা ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে চাননি । তবে কালিয়াচক 2-এর BDO সঞ্জয় ঘিসিং জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী দু'দিনের মধ্যে তিনি তদন্তকারী দলকে ঘটনাস্থলে পাঠাচ্ছেন । অন্যদিকে মোথাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক, তৃণমূল নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিব বলেন, "প্রধানের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি প্রমাণিত হলে দল কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।"

Intro:মালদা, ১৯ জুন : কয়েক দশক ধরে বেহাল এলাকার প্রধান রাস্তা৷ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে বার বার আবেদন জানিয়েও সেই রাস্তা সংস্কার হয়নি৷ অবহেলিত হতে হতে অবশেষে গর্জে উঠেছেন চাঁচল ১ ব্লকের ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা৷ বেহাল রাস্তা পুনর্নির্মাণের দাবিতে তাঁরা শুরু করেছেন পথ অবরোধ৷ তাঁদের দাবি, আর কোনও কথা নয়, এলাকায় আসতে হবে খোদ জেলাশাসককে৷ তা না হলে অবরোধ চলতেই থাকবে৷ অবরোধ তুলতে চাঁচল থানার আইসি'র নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে পুলিশ৷ পৌঁছেছেন চাঁচল ১ ব্লকের জয়েন্ট বিডিও৷ তাঁরা অবরোধ তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন৷ দুপুর ১২টা থেকে মাঝরাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে শুরু হওয়া অবরোধ চলছে এখনও৷Body:         চাঁচল-আশাপুর রাজ্য সড়কের পৌরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে গালিমপুর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘ সময় ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে রয়েছে৷ রাস্তাটি নির্মাণের পর পেরিয়ে গেছে কয়েক দশক৷ কিন্তু নির্মাণের পর রাস্তাটির আর কোনও সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর৷ এদিকে ওই রাস্তার উপরেই নির্ভর করেন ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ১২০টি গ্রামের কয়েক লক্ষ মানুষ৷ স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, কোনও নির্বাচন আসলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই রাস্তাটিকে ইশ্যু করে৷ নেতা-নেত্রীরা এই রাস্তা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন৷ কিন্তু ভোটের বাজনা মিলিয়ে যেতেই প্রতিশ্রুতিও বুদবুদের মতো উড়ে যায়৷ ফলে এই বেহাল রাস্তায় প্রতিনিয়ত সমস্যায় ভোগেন খরবা, কলিগ্রাম ও মোতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা৷
         আন্দোলনকারীদের পক্ষে আজ মহম্মদ দুলাল বলেন, "বহু বছর ধরে এই রাস্তাটি নিয়ে আমরা ভুগছি৷ কোনও বিধায়ক কিংবা সাংসদ এই রাস্তাটি আমাদের করে দেননি৷ প্রশাসনের কাছেও এই সমস্যা নিয়ে অনেকবার গিয়েছি৷ অনেকবার কথা হয়েছে, রাস্তার মাপ হয়েছে৷ কাজের কাজ কিছু হয়নি৷ রাস্তাটি নির্মাণে ১ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে৷ তাই গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষে এই রাস্তা করা সম্ভব নয়৷ কিন্তু ব্লক প্রশাসন কিংবা জেলাশাসকও এই রাস্তা নির্মাণে কোনও সহযোগিতা করেননি৷ আমাদের এই এলাকায় ভালো সবজি চাষ হয়৷ সেই সবজি নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মোটর বাইক বাজারে যায়৷ এই রাস্তার উপর ৪টি স্কুল ও মাদ্রাসা আছে৷ ব্যাংক আছে৷ দুটি হাসপাতাল আছে৷ প্রচুর লোক এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করে৷ কিন্তু বেহাল রাস্তার কোনও সুরাহা হচ্ছে না৷ শেষ পর্যন্ত আমরা এই রাস্তা অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি৷ নিয়ম মেনে নিজেদের আন্দোলনের কথা আমরা প্রশাসনের সর্বস্তরে জানিয়েছি৷ যতক্ষণ না জেলাশাসক এখানে এসে আমাদের রাস্তা পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ততক্ষণ আমাদের পথ অবরোধ চলতে থাকবে৷" একই বক্তব্য এলাকার বাসিন্দা আবদুল মালেক, মহম্মদ নূরজামানদেরও৷
Conclusion:         ঘটনাস্থলে উপস্থিত চাঁচল ১-এর জয়েন্ট বিডিও মোহন ভার্মা বলেন, "এই রাস্তাটি পুনর্নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদের কাছে আমরা প্রস্তাব পাঠিয়ে রেখেছি৷ এখন আমরা জেলা পরিষদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি৷ তবে একসঙ্গে গোটা রাস্তার কাজ করা সম্ভব হবে না৷ ধাপে ধাপে তা করতে হবে৷ সেই কাজ যাতে দ্রুত শুরু করা যায় তার চেষ্টা আমরা করব৷ একইসঙ্গে বর্ষায় এই রাস্তা দিয়ে যাতে ভালোভাবে চলাচল করা যায় তার জন্য পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে যতটা সংস্কার করা যায়, ততটা কাজ করার চেষ্টা করা হবে৷ এই রাস্তাটি এলাকার মূল রাস্তা৷ এলাকাবাসীরা যে দাবি তুলেছেন তা নায্য৷"
Last Updated : Jul 10, 2019, 2:00 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.