মালদা, 29 জুলাই : টাঙনের জলোচ্ছাস ও ভাঙনে প্রবল সমস্যায় পড়েছে পুরাতন মালদার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচটি গ্রামের মানুষ ৷ জলবন্দী হয়ে পড়েছে গ্রামগুলির কয়েকশো পরিবার৷ গোটা এলাকার চাষের জমি চলে গিয়েছে জলের তলায়৷ জলে ডুবেছে এলাকার নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্পগুলিও৷ এলাকায় পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে ৷ গ্রামবাসীদের পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে৷ এই পরিস্থিতিতে নৌকাই ভরসা তাঁদের৷ যদিও বিষয়টি তাঁদের নজরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান ৷ তাঁর দাবি, ইতিমধ্যেই তাঁরা দুর্গত গ্রামগুলিতে ত্রিপল বিলি করতে শুরু করেছেন ৷
এবারের আগাম বর্ষায় উত্তরবঙ্গ জুড়ে চলছে টানা বৃষ্টি ৷ ফলে উত্তরবঙ্গের নদীগুলির সঙ্গে মালদা জেলার প্রতিটি নদীর জলস্তর বাড়ছে ৷ জল বাড়ছে টাঙনেরও ৷ এর ফলে গত 15 দিন ধরে মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাড়ইপাড়া, চর লক্ষ্মীপুর, শিবগঞ্জ, বিধানগড় ও সিন্ধিয়া গ্রামের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে ৷ শুধু নদীর জলস্তর বৃদ্ধিই নয়, ওই এলাকায় টাঙনের ভাঙনও শুরু হয়েছে ৷ ফলে একদিকে যেমন পাঁচটি গ্রাম এখন জলের তলায়, তেমনই বেশ কয়েকটি বাড়ি নদীর উপর কার্যত ঝুলছে ৷ বিধানগড়ের বাসিন্দা সুকুমার সরকার বলেন, “প্রায় 15 দিন ধরে নদীর জল এলাকায় ঢুকে পড়েছে ৷ চাষের জমি জলে তলিয়ে গিয়েছে ৷ খুব সমস্যার মধ্যে রয়েছি ৷ বাড়িতে গোরু-ছাগলের খাবারও নেই ৷ ইতিমধ্যে আমার দুটি ঘর নদীতে তলিয়ে গিয়েছে ৷ এখন একটা ঘর কোনওরকমে বেঁচে রয়েছে ৷ এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ আমাদের পরিস্থিতি দেখতে আসেনি ৷ তবে আজ সকালে পঞ্চায়েত থেকে একটা করে পলিথিন দেওয়া হয়েছে ৷ এমনিতেই কোরোনা আবহে আমরা সমস্যায় ছিলাম ৷ তার উপর নদীর রুদ্রমূর্তি আমাদের একেবারে পথে বসিয়ে দিয়েছে ৷ কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না ৷”
এলাকার আরও এক বাসিন্দা দ্বিজেন সরকার বলেন, “বন্যায় এলাকার পানীয় জলের উৎসগুলি জলের তলায় চলে গিয়েছে৷ নৌকা করে হাঁড়ি-কলসি নিয়ে গিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে পানীয় জল আনতে হয় ৷ আমরা সবাই কৃষিজীবী ৷ ধান, পাটের জমি এখন জলের নীচে ৷ প্রবল সমস্যায় দিন কাটাচ্ছি ৷ এই পরিস্থিতিতে গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য একবার এলাকায় এসে পরিস্থিতি দেখে গিয়েছেন ৷ কিন্তু কোনও সাহায্যের আশ্বাস দিতে পারেননি ৷ অন্য সময় সব নেতাদের দেখতে পাওয়া যায় ৷ কিন্তু বিপদের সময় তাঁদের কাউকে দেখতে পাওয়া যায়নি ৷ বর্তমান অবস্থায় আমরা একটু সরকারি সাহায্যের দাবি করছি ৷”
মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শুভলক্ষ্মী গায়েন বলেন, “এই পঞ্চায়েতের পাঁচটি গ্রামে টাঙনের জল ঢুকে পড়েছে৷ যেদিন এলাকায় নদীর জল ঢুকতে শুরু করে, সেদিনই আমি গোটা ঘটনা BDO-কে জানাই৷ তিনি আপাতত 200টি ত্রিপল অনুমোদন করেছেন৷ ইতিমধ্যে পঞ্চায়েতে বৈঠক করে আমি একটি কমিটি তৈরি করেছি ৷ কমিটিতে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মীরা রয়েছেন ৷ সেই কমিটি এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতদের তালিকা তৈরি করছে ৷ তালিকায় নাম থাকা দুর্গতদের কুপনের মাধ্যমে ত্রিপল বিলি করা হচ্ছে ৷ জলবন্দী গ্রামগুলির জন্য এখনও পর্যন্ত আমরা দুটি নৌকার ব্যবস্থা করেছি ৷ সেই নৌকার মাধ্যমেই জলবন্দী মানুষজন যাতায়াত করছে ৷ দুর্গত গ্রামগুলিতে পানীয় জলের কিছুটা সমস্যা রয়েছে ৷ গ্রামবাসীরা নৌকা করে পানীয় জল সংগ্রহ করছে ৷ দুর্গতদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াও আমরা শুরু করেছি ৷”