মালদা, 11 জুন : "সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পেলেই রামমন্দির গড়তে সবার আগে এগিয়ে যাবে কংগ্রেস । আমরা বলব, গড়ো মন্দির । আমাদের কোনও আপত্তি নেই । দেশের লোক যদি চায় তবে ওটা হবেই । তা আমাদের পছন্দ হোক বা না হোক ।" আজ সাংবাদিক বৈঠকে এই মন্তব্য করলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরি । রাজ্যের পাশাপাশি দেশে কংগ্রেসের খারাপ ফলের বিষয়টি মেনে নেন তিনি । জানান, মানুষের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ আর আগের মতো নেই । দলের প্রতি দায়বদ্ধ এমন লোকজনেরও অভাব দেখা দিয়েছে । তবে তিনি আশাবাদী, কংগ্রেস আবার ঘুরে দাঁড়াবে ।
রাজ্যে 42টি সিটের মধ্যে মাত্র দু'টিতে জিতেছে কংগ্রেস । বহরমপুরে অধীর চৌধুরি ও দক্ষিণ মালদায় আবু হাসেম খান চৌধুরি ওরফে ডালু । ডালু জিতেছেন খুব সামান্য মার্জিনে । তাই ভোটের ফল ঘোষণার পর জেলার রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠতে শুরু করে তাহলে কি এবার গণির গড়ে কংগ্রেসের বিদায় যাত্রা শুরু হয়ে গেল ? আজ সেই নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বসে মালদা জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব । সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোস্তাক আলম, আবু হাসেম খান চৌধুরি, জেলার দুই কংগ্রেস বিধায়ক মোত্তাকিন আলম ও ভূপেন্দ্রনাথ হালদার সহ অন্যরা ।
বৈঠক শুরুর আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ডালু বলেন, "পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই তৃণমূলের বিকল্প খুঁজছিল সাধারণ মানুষ । মানুষ ভেবেছে কংগ্রেস এখনও তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে তৈরি নয় । তাই তারা BJP-কে ভোট দিয়েছে । কিন্তু ভোটে জিতে BJP যে ট্রেন্ড ব্যবহার করছে তা দেশের পক্ষে, জাতির পক্ষে খুব খারাপ । আবেগে ভর করে দেশ চালানো যায় না ।"
ভোটের নিজেদের হারের কথা স্বীকার করে ডালু জানান, বর্তমানে তাঁরা মানুষের কাছ থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছেন । তাঁরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না । তার উপর এখন দলে দায়বদ্ধ কর্মীর সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে । ফলে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষ ও দলের মধ্যে ।
আগে যেভাবে কংগ্রেস কর্মীরা দলে দলে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে, ঠিক তেমনভাবেই এখন BJP-তে যোগ দিচ্ছে । এই দলবদল ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নেবেন ? প্রশ্নের উত্তরে ডালু বলেন, "রাহুল গান্ধি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন । কিন্তু তাঁর কথায় মানুষ খুব একটা কান দেয়নি । এর সঙ্গে BJP ধর্মের সুড়সুড়ি দেওয়া শুরু করেছিল । সারাদেশে তারা একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছিল, কংগ্রেস থাকলে রামমন্দির হবে না । কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের ইনস্ট্রাকশন পেলে কংগ্রেস সবার আগে রামমন্দির গড়তে এগিয়ে যাবে । আমরাই বলব, গড়ো মন্দির । আমাদের কোনও আপত্তি নেই ।"
ডালু আরও বলেন, "আমাদের প্রথম শত্রু অশিক্ষা, দ্বিতীয় শত্রু খাদ্যাভাব ৷ সঙ্গে রয়েছে আর্থিক অনটন । শিক্ষার আলো নেই বলেই মালদায় BJP ভোট পেয়েছে । যিনি BJP-র সাংসদ হয়েছেন তিনি এতদিন বামপন্থী ছিলেন । সাংসদ হওয়ার লোভে দল পালটেছেন । আসলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ ও প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ভোট লুট করেছেন । সেই লুট কংগ্রেস বা বামেরা প্রতিহত করতে পারেনি । তাই লোকসভা নির্বাচনে সবাই জয় শ্রীরাম বলেছে । তবে BJP-র উত্থান হলেও রাজ্যে কংগ্রেস আবার ঘুরে দাঁড়াবে ।"