মালদা, 28 এপ্রিল : বন্দিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে মালদা জেলা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে (Allegation of human rights violation in correctional home of Malda) । এ নিয়ে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন এক বিচারাধীন বন্দির মা । তাঁর অভিযোগ, সংশোধনাগারে তাঁর ছেলেকে শৌচালয়ের জল পান করতে হচ্ছে । এ নিয়ে প্রশাসনের কোনও প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা ।
অভিযোগকারীর নাম সোমা মজুমদার । মালদা শহরের গয়েশপুর কালীবাড়ি কলোনির বাসিন্দা তিনি (Allegation of Human Rights Violation)। তিনি বলেন, "পারিবারিক কারণে আমার ছেলের বিরুদ্ধে তাঁর শ্যালকের স্ত্রী একটি মিথ্যে মামলা রুজু করে । শুধু ছেলেই নয়, পুত্রবধূ এমনকি বউমার দিদি আর জামাইবাবুর বিরুদ্ধেও একই মামলা রুজু হয় । তার ভিত্তিতে পুলিশ আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় । তাঁকে আদালতে তোলা হলে তাঁর জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে । গত 23 এপ্রিল থেকে ছেলে জেলা সংশোধনাগারেই রয়েছে । সোমবার আমরা ছেলের সঙ্গে দেখা করতে যাই । সে আমাকে জানায়, তাঁকে শৌচালয়ের জল খেতে হচ্ছে । খাবারের মান খুব খারাপ । পিঁপড়ের মধ্যে সংশোধনাগারের মেঝেতে তাঁকে ঘুমোতে হচ্ছে । আমার প্রশ্ন, আমার ছেলে বলে নয়, সংশোধনাগারে বন্দিদের শৌচালয়ের জল কেন খেতে হবে ? জেলে বন্দিদের মানবাধিকার কেন লঙ্ঘিত হবে ? বন্দিরাও তো মানুষ ! আমি এ নিয়ে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি ।"
এ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা মঞ্চের তরফে জিষ্ণু রায়চোধুরী বলেন, "দীর্ঘদিন ধরেই সংশোধনাগার নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে । ফের অভিযোগ উঠেছে, বন্দিদের নিম্ন মানের খাবার দেওয়া হচ্ছে । শৌচালয়ের জল পান করতে হচ্ছে । সেলে বন্দিদের জন্য পানীয় জলের কোনও পাত্র রাখা হয়নি । অথচ সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, প্রতিটি জেলের সেলে পানীয় জলের পাত্র রাখতেই হবে । সেলগুলিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দিদের রাখা হয় । আর জেলকর্মীদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তো রয়েছেই । আমার দাবি, প্রতিটি সংশোধনাগারের সীমানা এবং ঘরের সংখ্যা বাড়ানো হোক । প্রতিটি বন্দির সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হোক ।"
মালদা জেলা আদালতের আইনজীবী তথা মানবাধিকার সংগঠন গৌড়বঙ্গ হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ারনেস সেন্টারের সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় দাসও এমন অভিযোগ শুনে বিস্মিত । তিনি বলেন, "শুধু মালদা নয়, গোটা রাজ্যের সংশোধনাগারগুলিতে ত্রুটির কারণে মাঝে মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে । সংশোধনাগারগুলিতে খাবার, পানীয় জল, ওষুধপত্র-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবের কথা শোনা যায় । এসব সমস্যা সমাধানে প্রশাসন, সরকার, এমনকি বিচার বিভাগেরও দায়িত্ব রয়েছে । আশা করি, মালদা জেলা সংশোধনাগারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তদন্তসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে ।"
আরও পড়ুন : Heat Wave in Malda : মালদায় তাপমাত্রার পারদ ছুঁল 43 ডিগ্রি, বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই