কলকাতা, 4 এপ্রিল : কোনও রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে কি না, তা মুখের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই বলে দেওয়া সম্ভব। অন্যদিকে, মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা না হলে, বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। কোন, কোন রোগ ? কী ভাবেই বা মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা সম্ভব ? এমন বিভিন্ন বিষয়ে বলেছেন ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (IDA)-র রাজ্য সম্পাদক, চিকিৎসক রাজু বিশ্বাস।
মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখলে, কী ভাবে শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব ? চিকিৎসক বললেন, "মুখ হচ্ছে শরীরের এমন এক জায়গা, যেখান দিয়ে সংক্রমণ প্রবেশ করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে মুখের স্বাস্থ্য যদি সঠিকভাবে রক্ষা করা না হয়, তা হলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ মুখের মাধ্যমে আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণে আমাদের মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা করা খুবই দরকার।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "কারও মুখ যদি সুস্থ থাকে, তা হলে আমরা একবারে বলে দিতে পারি যে তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ। কারও মুখে যদি পায়েরিয়া থাকে, কিংবা পাথর জমতে থাকে, মুখের স্বাস্থ্য খুব খারাপ, মাড়ির অবস্থা খারাপ, মাঝে মধ্যে রক্তক্ষরণ হয়। দেখা যায় সার্বিকভাবে তিনি অসুস্থ রয়েছেন।"
খাবার চিবিয়ে খাওয়ার জন্য যে দাঁতগুলি রয়েছে, সেই দাঁতগুলির উপরও আমাদের পুষ্টির বিষয়টি নির্ভর করে। কিন্তু, দাঁতে যদি ক্যাভিটি থাকে ? সেই বিষয়ে তিনি বলেন, "যেমন, ডানদিকের একটি দাঁতে যদি ক্যাভিটি থাকে, সেখানে নিরবিচ্ছিন্নভাবে যন্ত্রণা হতে থাকে। রোগী সাধারণত অবহেলা করেন। তবে, তিনি ডানদিক দিয়ে আর খেতে পারেন না। এর ফলে অটোমেটিক্যালি তিনি তাঁর খাদ্যাভ্যাস বদল করে বাঁদিক দিয়ে খেতে থাকেন। এর ফলে চিবানোর কাজটি তখন সঠিকভাবে হয় না। ডানদিকে চিবানোর কাজটি হচ্ছে না, সেখানে ধীরে ধীরে পাথর জমা হতে থাকে। এবং বাঁদিকে বেশি চাপ পড়ার কারণে, সেখানকার দাঁতগুলি নিরবিচ্ছিন্নভাবে ক্ষয়ে যেতে থাকে।" তিনি বলেন, "এর ফলে শরীরের যে TM জয়েন্ট রয়েছে, সব থেকে বেশি জটিল এই জয়েন্টে নিরবিচ্ছিন্নভাবে যন্ত্রণা হতে থাকে। যন্ত্রণার জন্য রাতে ঘুম হয় না। সঠিকভাবে খাবার না চিবানোর জন্য পুষ্টি সঠিকভাবে হয় না, খাবার হজমও সঠিকভাবে হয় না।"
চিকিৎসক রাজু বিশ্বাস বলেন, "সার্বিকভাবে আমরা মনে করি, একজন মানুষ তখনই শারীরিকভাবে সুস্থ যদি তাঁর মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।" সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে কতটা সচেতন ? মানুষ অনেকটা সচেতন আপাতত হচ্ছেন। কারণ, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উপায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এই কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "আগে দাঁত, অবহেলার বিষয়ের মধ্যে ছিল। কয়েক বছর আগেও আই, মেন্টাল এবং ডেন্টাল, এই তিনটি খুব অবহেলার বিষয় ছিল। এখন এই সব বিষয়ে প্রভূত উন্নতি হয়েছে।"
মুখের স্বাস্থ্য দেখে কী ভাবে বোঝা যাবে শরীরে অন্য কোনও সমস্যা রয়েছে কি না? চিকিৎসক বলেন, "বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা যেটা দেখেছি, হয়তো দাঁত তোলার আগে জানতে চাওয়া হচ্ছে, অন্য কোনও অসুখ তাঁর রয়েছে কি না। কোনও হিস্ট্রি দিচ্ছেন না রোগী। তখন আমাদের মনে হল, রোগীর দাঁত কেন নড়ল ? মাড়ি এবং দাঁতের সংযোগস্থলে এত সমস্যা কেন ? আমাদের সন্দেহ থেকে তখন রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা রক্ত পরীক্ষা করতে চান না।"
তিনি আরও বলেন, "এমনও শুনতে হয়েছে, কোনও ডাক্তারের কাছে গেলে নড়া দাঁত তুলে দেন। কিন্তু, তার জন্য কেন রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে ? শেষ পর্যন্ত রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গেল, এই রোগীর হাই ব্লাড সুগার।" জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কার্ডিয়োলজিকাল সমস্যা বিভিন্ন সময় ওরাল হাইজিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। রক্তের রোগের বিষয়ে দেখা যায়, মাড়িতে বিভিন্ন রকমের দাগ রয়েছে। এটা দেখে বোঝা যায়, প্লেটলেট কাউন্ট যখন কমে যায় তখন তার প্রভাব মাড়িতে দেখা দেয়। এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক রাজু বিশ্বাস বলেন, "কোনও চিকিৎসক যদি অবহেলা করে না থাকেন, খালি চোখে দেখার মতো বিষয় এটি। মাড়ি, মুখের গঠন সার্বিকভাবে শরীরের বিভিন্ন রোগের ইঙ্গিত দেয়। বোঝা যায়, শরীর খারাপ হতে চলেছে।"
মুখের স্বাস্থ্য কী ভাবে সুরক্ষিত রাখা যাবে ? চিকিৎসক বলেন, "রাতে খাওয়ার পর ব্রাশ করা আমাদের প্রাথমিক কাজ। ব্রাশ করার পরে আর কিছু না খেয়ে ঘুমোতে যাওয়া। সকালে উঠে ব্রাশ না করলেও হবে। স্বাভাবিক ভাবে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। ব্রেকফাস্টে যদি ভাত খেয়ে অফিসে বের হন অথবা অফিসে গিয়ে খান, তখন একবার ব্রাশ করে নিতে হবে হবে।" এর ফলে ওরাল হাইজিন খুব ভালো থাকবে। এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "ওরাল হাইজিন সঠিকভাবে রক্ষা করা হচ্ছে কি না, তা দেখে নেওয়ার জন্য অবশ্যই বছরে দুবার ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া প্রয়োজন। শিশুদের যখন দুধের দাঁত উঠে যায়, সেই সময় থেকে একদম বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত যতক্ষণ মুখে দাঁত রয়েছে এই পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। বছরে দু'বার না হলেও, অন্তত একবার ওরাল হাইজিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন।