কলকাতা, 10 জুন : দীর্ঘ কয়েক দশকের রাজনৈতিক জীবন ৷ কিন্তু তার পরও অধরা ছিল ভোটের ময়দানে নেমে জয় ৷ অবশেষে 2021 সালের বিধানসভা ভোটে সেই জয় পেয়েছেন মুকুল রায় ৷
কিন্তু যে প্রতীক হাতে নিয়ে লড়ে জীবনে প্রথমবার ভোটের বৈতরণী পার হলেন রাজ্য রাজনীতির এই চাণক্য, তিনি কি সেই প্রতীকেই আস্থা রাখবেন নাকি পুরনো দলে ফিরবেন ? গত মে মাসের 2 তারিখের পর সময় যত এগিয়েছে, ততই এই প্রশ্ন আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হতে শুরু করেছে ৷
দলবদলের এই জল্পনাকে কার্যত নিজেই ইন্ধন জুগেয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি ৷ গত মাস খানেক ধরে তিনি যেন বিজেপিতে থেকেও নেই ৷ দলের কোনও কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যাচ্ছে না ৷ দলের অন্যরা যখন চাঁচাছোলা ভাষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমোলোচনায় সরব, তখন তিনি একেবারেই নিস্পৃহ ৷
আরও পড়ুন : হারের পর্যালোচনা বৈঠকে কেন অনুপস্থিত মুকুল-শুভেন্দু ?
সোশ্যাল মিডিয়াতেও নীরব ৷ যেখানে বিজেপির নেতারা কথায় কথায় টুইট করেন, সেখানে মুকুল রায় ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে মাত্র পাঁচটি টুইট করেছেন ৷ যাঁর মধ্যে দু’টির সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগই নেই ৷ আজ, বৃহস্পতিবার মুকুল রায় একটি টুইট করেন ৷ সেখানে তিনি প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে নিয়ে শোকপ্রকাশ করেন ৷
এর আগে 13 মে তিনি টুইট করেছিলেন ৷ সেদিন তিনি দলের নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন ৷ আরও একটি শুভেচ্ছা সংক্রান্ত টুইট করেছিলেন তিনি ৷ সেখানে তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে শুভেচ্ছা জানান ৷
বাকি দু’টি টুইটের একটিতে শুভেন্দু অধিকারীকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হওয়ার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ৷ সেই টুইটে একটি ছবিও রয়েছে ৷ যেখানে শুভেন্দু-সহ অন্য রাজ্য নেতাদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ৷
আরও পড়ুন : দুই দলের তৎপরতায় ফের মুকুলকে নিয়ে মুকুলিত জল্পনা
আর অন্য টুইটটি ছিল ভোটের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় করা তাঁর প্রথম মন্তব্য ৷ যেখানে বিজেপিতে থাকার বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন ৷ জানিয়েছিলেন যে তিনি বিজেপির আদর্শ থেকে সরছেন না ৷
কিন্তু তার পর থেকেই তিনি নিস্পৃহ ৷ এর মাঝে তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু রায় দলের সমালোচনা করে পোস্ট করেছেন ফেসবুকে ৷ তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁকে ফোন করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তার পরও কার্যত প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি ৷
এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌগত রায় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘অনেকেই দল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন নির্বাচনের আগে । আমি মনে করি তাঁরা দলের সঙ্গে এবং দলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন । তাই তাঁদের দলে ফেরানো হবে কি না সেই নিয়ে একমাত্র এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দোপাধ্যায়ই । কিন্তু একই সঙ্গে আমি বলব যে দলত্যাগীদের মধ্যে দুই ধরনের লোক ছিলেন । একদল যাঁরা দল ছাড়ার পরের দিন থেকেই প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান করা শুরু করেছিলেন, যেমন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বহুবার মুখ্যমন্ত্রীর বদনাম করেছেন এবং তাঁকে অপমান করেছেন । কিন্তু মুকুল রায় দল ছাড়লেও কোনওদিন মুখ্যমন্ত্রীর বদনাম করেননি বা তাঁকে অপমান করেননি ৷’’
আরও পড়ুন : মুকুল-জায়াকে দেখতে হাসপাতালে অভিষেক, শুভ্রাংশুর সঙ্গে কথা
ফলে নতুন করে জল্পনা ছড়িয়েছে মুকুল রায়কে নিয়ে ৷ তিনি কি তাহলে এবার বিজেপি ছেড়ে আবার তৃণমূলের পথ ধরবেন ? আপাতত এটা নিয়েই চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ৷