কলকাতা, 4 মার্চ : পৌর নির্বাচনে সেঞ্চুরি করেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস (TMCs Landslide Victory in Bengal Civic Elections) ৷ যে জয় নিয়ে গর্বিত তৃণমূল কংগ্রেসের ছোট থেকে বড় সব নেতা-নেত্রীই ৷ দলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ভোটের ফল ঘোষণার দিন দুপুরেই টুইট করে বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ দিয়েছেন ৷ তার পর কেটে গিয়েছে আরও 48 ঘণ্টা ৷ কিন্তু এখনও পৌরভোটের বিপুল সাফল্য নিয়ে নীরব তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) । প্রশ্ন উঠছে যে পৌরসভা নির্বাচনে যে তুমুল সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে, তার বিরুদ্ধেই কি তৃণমূলের নম্বর টু নীরবে প্রতিবাদ জানালেন (Why Abhishek Banerjee is Silent after TMC Landslide Win in Bengal Civic Polls 2022) ?
সম্প্রতি এক টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তৃণমূলের সংগঠন এবং তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে ভাবনাচিন্তা নিয়ে খোলাখুলিভাবে কথা বলেছিলেন অভিষেক । তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই সাক্ষাৎকারে একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সংস্কার । তা সে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ ঘিরেই হোক বা নির্বাচনে পেশী শক্তির ব্যবহার, সবক্ষেত্রেই সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তিনি ৷
আর সে সব মন্তব্য ঘিরেই দলের অন্দরে প্রাচীনপন্থীদের সঙ্গে সংঘাতের আবহও তৈরি হয় তাঁর । সমালোচকরা কেউ কেউ বলেন, এই সংঘাত আসলে ছিল কালীঘাট বনাম ক্যামাক স্ট্রিটের । এমনকি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হলেও তাঁর এই সংস্কারপন্থী চিন্তাধারায় নাকি মত ছিল না স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমোর । আর তারপরই আড়াআড়িভাবে বিভাজন লক্ষ্য করা যায় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনে । তার একদিকে ছিলেন যুব নেতাদের একটা বড় অংশ, আর অন্যদিকে ছিলেন প্রবীণদের একাংশ ।
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, যদিও পরবর্তীতে দলনেত্রী নিজে বসে একটা রফাসূত্র বের করার চেষ্টা করেন । কিছুদিনের জন্য পদহীন করে দেন ভাইপো অভিষেককে । তারপর থেকেই যেন কেমন নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন অভিষেক । বিধাননগর-সহ 4 পৌরনিগমের মোটেও তাঁকে সেভাবে প্রকাশ্যে আসতে দেখা যায়নি ।
সবচেয়ে বড় কথা, সদ্যসমাপ্ত 108টি পৌরসভার ভোটে রাজ্যের অন্যান্য প্রথম সারির নেতা যথাক্রমে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যদের যতটা সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছে, সেখানে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েও অভিষেক ছিলেন নির্লিপ্ত । আর তার এই নির্লিপ্ততা বা নীরবতাই রাজনৈতিক মহলের চোখে পড়েছে ।
যেভাবে সৌগত রায়ের মতো অভিষেকপন্থী নেতা নির্বাচনে পেশী শক্তির প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মনে করছেন, এ যেন ক্যামাক স্ট্রিটের অবস্থান । আর তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন এই নীরবতা তৃণমূলের প্রাচীন পন্থীদের আবার পুরনো অবস্থানে ফিরে যাওয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ নয়তো !
কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনের সময় বারবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল নেতৃত্বের একটা বড় অংশ যখন বলেছে অতীতের ন্যায় জোর করে ভোট করানোতে সায় নেই দলের । এরপরও যেভাবে 108টি পৌরসভার ভোট হল, রাজ্যবাসী শাসকদলের যে চেহারা পৌরভোটে দেখতে পেল, অভিষেকের এই নীরবতা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নয়তো ?
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee's comment after victory: জনাদেশ দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল, সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে মন্তব্য মমতার