কলকাতা, 2 নভেম্বর : পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সবুজ ঝড় অব্যাহত ৷ যত সময় এগোচ্ছে, ততই সেই ঝড় যেন সাইক্লোনে পরিণত হচ্ছে ৷
যেমনটা হল আজ, মঙ্গলবার ৷ রাজ্যের চার বিধানসভা আসনের চারটেতেই জিতল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) ৷ প্রতিটি আসনেই লিড বেড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের ৷ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনটি আসনে আবার বিজেপির (BJP) জমানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৷
আরও পড়ুন : Abhishek Banerjee: উপনির্বাচনে ধুলিসাৎ বিজেপিকে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়ে কটাক্ষ অভিষেকের
ফলে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দল যেভাবে জাতীয় লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছিল, তা আগামিদিনে আরও বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে ৷ বিশেষ করে দলের দুই কান্ডারি মমতা ও অভিষেকের প্রতিক্রিয়াতেও তার ইঙ্গিত রয়েছে ৷
জাতীয় স্তরেও তৃণমূলের লড়াই বিজেপির সঙ্গে ৷ বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে একজোট করে 2024-এর লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে উৎখাত করতে চায় তারা ৷ সেই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জয় নিয়ে বলেছেন, ‘‘এই জয় মানুষের জয় ৷ এতে প্রতিফলিত হল যে বাংলা বারবার ঘৃণার রাজনীতি ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে একতা এবং উন্নয়নকেই বেছে নেয় ৷’’
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee : চার আসনের উপনির্বাচনে মানুষের জয়, টুইট মমতার
অন্যদিকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) সরাসরি এই জয় নিয়ে বিজেপিকে বিঁধেছেন ৷ তাঁর কথায়, "এটা প্রকৃত অর্থেই শব্দবাজিহীন দীপাবলি ৷ বিজেপির নেতাকর্মীদের জানাই শুভ দীপাবলি ৷"
স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গের এই সাফল্যকে সামনে রেখে তারা জাতীয়স্তরে এগিয়ে যেতে পারবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এই জয় কাঙ্খিত ছিল । তবে এত বিপুল ভোটে জয় পেতে পারে ভাবা যায়নি । অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এই নির্বাচন ।’’
আরও পড়ুন : Khardaha Bypoll : খড়দায় জয়ী শোভনদেব
কেন তিনি এই কথা বলছেন, তা বুঝতে গেলে আজকের পরিসংখ্যানে নজর দিতেই হবে ৷ কোচবিহারের দিনহাটা আসনে 84 শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ ৷ জিতেছেন দেড় লক্ষের বেশি ব্যবধানে ৷ ওই আসনে কয়েক মাস আগে বিজেপি জিতেছিল ৷ জয়ের ব্যবধান ছিল 57 ৷ কিন্তু লক্ষাধিক ভোট পেয়েছিল তারা ৷ কিন্তু এবার শোচনীয় ফল হয়েছে তাদের ৷
শান্তিপুরেও জিতেছিল বিজেপি ৷ কিন্তু সেই আসনও ধরে রাখতে পারেনি তারা ৷ শান্তিপুরে হারলেও কিছুটা হলেও মান বাঁচাতে পেরেছে বিজেপি ৷ কারণ, সেখানে তাদের জমানত বাজেয়াপ্ত হয়নি ৷ কিন্তু দিনহাটাতে হয়েছে ৷
আরও পড়ুন : Dinhata Bypoll : দিনহাটায় দেড় লক্ষাধিক ভোটে জিতলেন তৃণমূলের উদয়ন
গোসাবা ও খড়দাতেও একই পরিস্থিতি ৷ সেখানে দু’টি আসন আগে তৃণমূলের দখলে ছিল ৷ সেখানে তৃণমূলই জিতেছে ৷ কিন্তু ঘাসফুল শিবিরের ভোট বেড়েছে ৷ বৃদ্ধি পেয়েছে জয়ের ব্যবধানও ৷ এই দুই আসনেও জমানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বিজেপির ৷
যা দেখে রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এই রেজাল্টের প্রভাব অবশ্যই আগামী ভোটে পড়বে । এই ভোটের ফল বলে দিচ্ছে স্থানীয় বিজেপি পায়ের তলার মাটি শক্ত নয় ৷’’
আরও পড়ুন : Gosaba Bypoll : মার্জিন পাঁচগুণ বাড়িয়ে গোসাবা উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল
আর এই বিষয়টিকেই সামনে রেখেই যে আগামিদিনে দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী প্রচার আরও জোরদার করবে, তাও স্পষ্ট তৃণমূলের কথায় ৷ দলের মুখপাত্র তথা বিধায়ক তাপস রায় জানান, একের পর এক নির্বাচনে প্রমাণিত, দেশে বিজেপিকে যদি কেউ আটকাতে পারে, তারা হল তৃণমূল । এর প্রভাব অবশ্যই জাতীয় ক্ষেত্রে রয়েছে । যত সময় যাচ্ছে বিজেপি বিরোধী মুখ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তত অপরিহার্য হয়ে উঠছেন ৷