কলকাতা, 26 অগস্ট: দুর্নীতির অভিযোগে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি নিয়ে এমনিতেই অস্বস্তিতে রয়েছে তৃণমূল সরকার ৷ আমলা থেকে শুরু করে পুলিশ, এমন কী জেলা প্রশাসন এই দুই দুর্নীতির গেরোয় নবান্নের জন্য 'দুয়ারে অস্বস্তি' নিয়ে হাজির হয়েছে । বিভিন্ন মামলায় একের পর এক বিষয়ে রাজ্যের আমলা থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত কর্তা-ব্যক্তিদের তলব করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিগুলি ।
ঠিক এই অবস্থাতেই গত 18 অগস্ট দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে জেলায়, দুর্নীতির কোন স্পর্শ প্রমাণিত হলে তা বরদাস্ত করা হবে না (Mamata Banerjee message against corruption) । সেদিনই দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর-এর নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এবার সেই পথে আরও কোমর কষছে নবান্ন । দুর্নীতির কোনও শিকড় থেকে থাকলে তা যাতে গোড়া থেকে উপরে ফেলা যায়, তাই এবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে যেসব কর্মী একই অফিসে তিন বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছেন, তাঁদের অবিলম্বে বদলি করতে হবে । এই নিয়ম কঠোরভাবে পালন করতে হবে সমস্ত জেলাতেই (WB Govt new decision to reduce corruption) ।
আরও পড়ুন: জেলে গিয়ে পার্থকে জেরা ইডির, শান্ত মেজাজেই সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন তৃণমূল বিধায়ক
শুধু তা নয়, সরকারের এই নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়িত করে সেই রিপোর্ট পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কাছে পেশ করতে হবে । প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের জায়গায় এই মুহূর্তে পঞ্চায়েত এবং গ্রাম উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব নিয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন প্রদীপ মজুমদার । জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের কাজকর্মে স্বচ্ছতা আনতে এই সিদ্ধান্ত তারই মস্তিষ্কপ্রসূত । ইতিমধ্যেই তিনি এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েছেন । তারপরই নবান্নের তরফে এই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যেক জেলার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । আসলে নবান্ন মনে করছে, পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির বিভিন্ন অফিসগুলি দুর্নীতির আখড়া । সেখানে ভালো মানুষ নেই এমন কথা ভাবা ভুল । একইসঙ্গে কিছু এমন মানুষ রয়েছেন যাঁরা নেতাদের অজ্ঞতার সুজোগ নিয়ে দুর্নীতির জাল বুনছেন । নিজেরাও কামাচ্ছেন এবং ওই সদস্যদেরও ক্রমেই দুর্নীতির অংশ করে তুলছেন (corruption in Panchayat level)।
আরও পড়ুন: কৌশিকী অমাবস্যায় ডিম ছুঁলেন না অনুব্রত, খেলেন নিরামিষ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকার চাইছে এই ধরনের সরকারি কর্মচারী ও নেতাদের শনাক্ত করতে এবং সরাসরি পঞ্চায়েতের কাজকর্ম থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রাখতে । তবে নবান্নের এক আধিকারিক এর কথায়, মুখে যতটা সহজ বলে মনে হচ্ছে কাজটা বাস্তবে এত সহজ নয় । এই ধরনের শুদ্ধিকরণের পদ্ধতি রাজনৈতিকভাবে সরকারের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে । বিশেষ করে এই ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসলে সরকার এবং শাসক দলকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে । কিন্তু বাস্তবিকই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন । একদম তৃণমূল স্তর থেকে অর্থাৎ পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি থেকে জেলা, নবান্ন সর্বত্রই একটা দুর্নীতি মুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে । আর সেক্ষেত্রে সরকারের এই পদক্ষেপ যথেষ্ট ইতিবাচক বলেই মনে করছে ওয়াকিবহালমহল । প্রসঙ্গত বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত ভোট ৷ তার আগে পঞ্চায়েত স্তরে এই ধরনের সিদ্ধান্ত দলের উপর কি প্রভাব ফেলে, সেদিকেও নজর থাকবে ।