ETV Bharat / city

Bangladesh Liberation War 1971 : মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে স্মৃতিমেদুর সাংবাদিক, শঙ্কিত ইতিহাসবিদ

মুক্তিযুদ্ধের (Bangladesh Liberation War 1971) 50 বছর পূর্তি পালন করছে বাংলাদেশ ৷ সেই উপলক্ষে, ঘটনার সাক্ষী এক সাংবাদিকের মুখোমুখি হল ইটিভি ভারত ৷ 50 বছর আগের স্মৃতিচারণ করলেন তিনি ৷ মুক্তিযুদ্ধ ও বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে মতামত জানালেন বিশিষ্ট এক ইতিহাসবিদও ৷

reacton of bangladesh liberation war 1971
Bangladesh Liberation War 1971 : মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে স্মৃতিমেদুর প্রাক্তন সাংবাদিক, শঙ্কিত ইতিহাসবিদ
author img

By

Published : Dec 16, 2021, 10:12 PM IST

কলকাতা, 16 ডিসেম্বর : মুক্তিযুদ্ধের (Bangladesh Liberation War 1971) 50 তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সরকার ৷ প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ রক্ষা করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৷ এমনকী, সম্প্রতি পড়শি এই দুই রাষ্ট্র একত্রে ‘মৈত্রী দিবস’ পালন করেছে ৷ বস্তুত, একাত্তরের সেই যুদ্ধ বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করলেও তাতে ভারতের অবদান ছিল সবথেকে বেশি ৷ তাই বাংলাদেশের এই জয়ের সঙ্গে আপাদমস্তক জড়িয়ে রয়েছে ভারতের আবেগ, শৌর্য এবং পরাক্রম ৷ জড়িয়ে রয়েছেন এ দেশের বীর সেনারা ৷ আর জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের জন্য এপার বাংলার ভালবাসা ৷

আরও পড়ুন : Ram Nath Kovind Bangladesh Visit : বাংলাদেশ সফরের প্রথম দিনে হাসিনার সঙ্গে বৈঠক কোবিন্দের

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এখনও টাটকা বহু মানুষের মনে ৷ তাঁদেরই একজন সাংবাদিক মানস ঘোষ ৷ তাঁর মুখোমুখি হলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে আবেগে ভাসলেন বহু বছর পিছনে ফেলে আসা প্রবীণ সাংবাদিক ৷ বাকিটা বরং আমরা তাঁর জবানিতেই বোঝার চেষ্টা করি ৷ মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে মানস বলেন, ‘‘আমার বয়স তখন খুবই কম ৷ খবরের কাগজে রিপোর্টারি করতাম ৷ প্রথমটায় অফিস আমাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাতে রাজি হয়নি ৷ পরে অবশ্য অনুমতি মেলে ৷ তবে 16 ডিসেম্বর, যেদিন ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, তখন আমি সেখানে ছিলাম না ৷ কিন্তু, এর পরদিন খুলনায় যে আর একদল পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করেছিল, আমি সেটা চাক্ষুষ করেছি ৷ যশোর থেকে যশোর রোড হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী খুলনার দিকে যাচ্ছিল ৷ তখন ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের পিছন পিছন তাড়া করে ৷ আমিও সেই দলে ছিলাম ৷ এরপর খুলনায় ঢোকার আগে শিরমণিপুরতলা বলে একটি জায়গা আছে ৷ যেখানে পাকিস্তানি সেনারা পাঁচদিন ধরে লড়াই চালিয়ে গিয়েছি? ৷ তাতে দু’পক্ষেরই প্রচুর ক্ষতি হয় ৷ সেই মৃত্যুমিছিল ভাষাতীত ৷’’

মানস ঘোষের এই বর্ণনা যেন সত্যিই একাত্তরের স্মৃতিকে জীবন্ত করে তুলছিল ৷ এত বছর পরেও সবটুকু মনে রয়েছে তাঁর ৷ প্রবীণ সাংবাদিকের বলা ঘটনাক্রম যেন কোনও পিরিয়ড ফিল্মের এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যের উত্তরণ ৷ তিনি বলেন, ‘‘শিরমণিপুরতলায় পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানের নেতৃত্বে যুদ্ধ চলছিল ৷ অন্যদিকে, এসবের মধ্যেই 16 ডিসেম্বর ঢাকায় শত্রুপক্ষ ততক্ষণে আত্মসমর্পণ করে ফেলেছে ৷ ভারতীয় বাহিনীর তরফে জেনারেল দলবীর সিং বারবার ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানকে সেকথা জানান ৷ কিন্তু, হার মানতে রাজি ছিলেন না ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান ৷ শেষমেশ পাঁচদিন পর রণে ভঙ্গ দেন তিনি ৷ তবে শর্ত ছিল একটাই, তাঁর বাহিনীর একজনের গায়েও হাত দেওয়া যাবে না ৷ আত্মসমর্পণের আগে তাঁদের জন্য বিরাট ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল ৷ বিরিয়ানি, চিকেন চাপ থেকে সুরা, মেন্যুতে বাদ ছিল না কিছুই ৷ এমনকী দুই দলের সেনা আধিকারিক ও জওয়ানরা যেভাবে একসঙ্গে মিলেমিশে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছিলেন, তা দেখে আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম ৷ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার পর তাদের সেফ হাউসে রাখা হয়েছিল ৷’’

মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে স্মৃতিমেদুর সাংবাদিক, শঙ্কিত ইতিহাসবিদ

আরও পড়ুন : Bangladesh welcomes President Kovind: ঢাকায় সপরিবারে রাষ্ট্রপতি, উষ্ণ অভ্যর্থনা বাংলাদেশের

এ তো গেল এক প্রত্যক্ষদর্শী যুবার স্মৃতিরোমন্থন ৷ কিন্তু, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বর্তমান সমাজে তার প্রভাব নিয়ে ইতিহাস কী বলছে ? তারই ব্যাখ্যা দিলেন ইতিহাসবিদ আশিস দাস ৷ তিনি মনে করেন, আজ থেকে 50 বছর আগে যে ভাবনা ও বিশ্বাসকে পাথেয় করে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছিল, বর্তমানে তার কিছুটা হলেও বিচ্যুতি ঘটেছে ৷

আশিস বলেন, ‘‘অনেক লম্বা লড়াইয়ের শেষে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ ৷ একবা দিল্লির সংবর্ধনা সভায় বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ভারত কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে এতটা সাহায্য করল ? এই দুই দেশের মিল কোথায় ? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, মিলটা নীতির ৷ বাংলাদেশ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিও একই আদর্শে বিশ্বাসী ৷ কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যখন স্বাধীন বাংলাদেশের 50 বছর পূর্তি হচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সেই নীতি থেকে বাংলাদেশের কিছু ক্ষেত্রে বিচ্যুতি ঘটেছে ৷ সাম্প্রতিককালে দুর্গাপুজোর সময় সেখানে যে অশান্তি ছড়িয়েছে, তা একেবারেই কাম্য নয় ৷’’

কলকাতা, 16 ডিসেম্বর : মুক্তিযুদ্ধের (Bangladesh Liberation War 1971) 50 তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সরকার ৷ প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ রক্ষা করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৷ এমনকী, সম্প্রতি পড়শি এই দুই রাষ্ট্র একত্রে ‘মৈত্রী দিবস’ পালন করেছে ৷ বস্তুত, একাত্তরের সেই যুদ্ধ বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করলেও তাতে ভারতের অবদান ছিল সবথেকে বেশি ৷ তাই বাংলাদেশের এই জয়ের সঙ্গে আপাদমস্তক জড়িয়ে রয়েছে ভারতের আবেগ, শৌর্য এবং পরাক্রম ৷ জড়িয়ে রয়েছেন এ দেশের বীর সেনারা ৷ আর জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের জন্য এপার বাংলার ভালবাসা ৷

আরও পড়ুন : Ram Nath Kovind Bangladesh Visit : বাংলাদেশ সফরের প্রথম দিনে হাসিনার সঙ্গে বৈঠক কোবিন্দের

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এখনও টাটকা বহু মানুষের মনে ৷ তাঁদেরই একজন সাংবাদিক মানস ঘোষ ৷ তাঁর মুখোমুখি হলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে আবেগে ভাসলেন বহু বছর পিছনে ফেলে আসা প্রবীণ সাংবাদিক ৷ বাকিটা বরং আমরা তাঁর জবানিতেই বোঝার চেষ্টা করি ৷ মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে মানস বলেন, ‘‘আমার বয়স তখন খুবই কম ৷ খবরের কাগজে রিপোর্টারি করতাম ৷ প্রথমটায় অফিস আমাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাতে রাজি হয়নি ৷ পরে অবশ্য অনুমতি মেলে ৷ তবে 16 ডিসেম্বর, যেদিন ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, তখন আমি সেখানে ছিলাম না ৷ কিন্তু, এর পরদিন খুলনায় যে আর একদল পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করেছিল, আমি সেটা চাক্ষুষ করেছি ৷ যশোর থেকে যশোর রোড হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী খুলনার দিকে যাচ্ছিল ৷ তখন ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের পিছন পিছন তাড়া করে ৷ আমিও সেই দলে ছিলাম ৷ এরপর খুলনায় ঢোকার আগে শিরমণিপুরতলা বলে একটি জায়গা আছে ৷ যেখানে পাকিস্তানি সেনারা পাঁচদিন ধরে লড়াই চালিয়ে গিয়েছি? ৷ তাতে দু’পক্ষেরই প্রচুর ক্ষতি হয় ৷ সেই মৃত্যুমিছিল ভাষাতীত ৷’’

মানস ঘোষের এই বর্ণনা যেন সত্যিই একাত্তরের স্মৃতিকে জীবন্ত করে তুলছিল ৷ এত বছর পরেও সবটুকু মনে রয়েছে তাঁর ৷ প্রবীণ সাংবাদিকের বলা ঘটনাক্রম যেন কোনও পিরিয়ড ফিল্মের এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যের উত্তরণ ৷ তিনি বলেন, ‘‘শিরমণিপুরতলায় পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানের নেতৃত্বে যুদ্ধ চলছিল ৷ অন্যদিকে, এসবের মধ্যেই 16 ডিসেম্বর ঢাকায় শত্রুপক্ষ ততক্ষণে আত্মসমর্পণ করে ফেলেছে ৷ ভারতীয় বাহিনীর তরফে জেনারেল দলবীর সিং বারবার ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানকে সেকথা জানান ৷ কিন্তু, হার মানতে রাজি ছিলেন না ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান ৷ শেষমেশ পাঁচদিন পর রণে ভঙ্গ দেন তিনি ৷ তবে শর্ত ছিল একটাই, তাঁর বাহিনীর একজনের গায়েও হাত দেওয়া যাবে না ৷ আত্মসমর্পণের আগে তাঁদের জন্য বিরাট ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল ৷ বিরিয়ানি, চিকেন চাপ থেকে সুরা, মেন্যুতে বাদ ছিল না কিছুই ৷ এমনকী দুই দলের সেনা আধিকারিক ও জওয়ানরা যেভাবে একসঙ্গে মিলেমিশে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছিলেন, তা দেখে আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম ৷ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার পর তাদের সেফ হাউসে রাখা হয়েছিল ৷’’

মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে স্মৃতিমেদুর সাংবাদিক, শঙ্কিত ইতিহাসবিদ

আরও পড়ুন : Bangladesh welcomes President Kovind: ঢাকায় সপরিবারে রাষ্ট্রপতি, উষ্ণ অভ্যর্থনা বাংলাদেশের

এ তো গেল এক প্রত্যক্ষদর্শী যুবার স্মৃতিরোমন্থন ৷ কিন্তু, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বর্তমান সমাজে তার প্রভাব নিয়ে ইতিহাস কী বলছে ? তারই ব্যাখ্যা দিলেন ইতিহাসবিদ আশিস দাস ৷ তিনি মনে করেন, আজ থেকে 50 বছর আগে যে ভাবনা ও বিশ্বাসকে পাথেয় করে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছিল, বর্তমানে তার কিছুটা হলেও বিচ্যুতি ঘটেছে ৷

আশিস বলেন, ‘‘অনেক লম্বা লড়াইয়ের শেষে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ ৷ একবা দিল্লির সংবর্ধনা সভায় বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ভারত কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে এতটা সাহায্য করল ? এই দুই দেশের মিল কোথায় ? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, মিলটা নীতির ৷ বাংলাদেশ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিও একই আদর্শে বিশ্বাসী ৷ কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যখন স্বাধীন বাংলাদেশের 50 বছর পূর্তি হচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সেই নীতি থেকে বাংলাদেশের কিছু ক্ষেত্রে বিচ্যুতি ঘটেছে ৷ সাম্প্রতিককালে দুর্গাপুজোর সময় সেখানে যে অশান্তি ছড়িয়েছে, তা একেবারেই কাম্য নয় ৷’’

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.