কলকাতা, 28 জানুয়ারি : দীর্ঘদিন ধরে চলা অনশন-আন্দোলনের জেরে 2019 সালে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি মেনে নিয়েছিল রাজ্য সরকার। প্রকাশিত হয়েছিল বেতন বৃদ্ধির সরকারি নির্দেশিকা। অভিযোগ, তারপরেও অব্যাহত রয়েছে বেতন বৈষম্য। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে সিনিয়ররা জুনিয়র শিক্ষকদের থেকে কম বা সমান বেতন পাচ্ছেন। তাই আজ ফের পথে নামল উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (ইউইউপিডাব্লুএ)। এদিন রাস্তায় নেমে মিছিলের পাশাপাশি বিকাশ ভবনে গিয়ে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কমিশনারের সঙ্গেও দেখা করেন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের প্রতিনিধিদল।
বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে আজ ইউইউপিডাব্লুএ-র তরফে সুবোধ মল্লিক স্কয়্যার থেকে ধর্মতলায় শহিদ মিনার পর্যন্ত মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেই ডাকে এদিনের মিছিলে অংশগ্রহণ করেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় হাজার জন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে শুরু হয়ে এসএন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলায় শহিদ মিনারে পৌঁছে শেষ হয় মিছিল। তারপর সেখানেই হয় প্রতিবাদ সভা।
ইউইউপিডাব্লুএ-র সভাপতি সন্দীপ ঘোষ বলেন, "সারা ভারতবর্ষে প্রাথমিক শিক্ষকদের যোগ্যতামান নির্ধারণ করে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। সেই অনুযায়ী বেতন কাঠামো হয়। সেদিক থেকে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ অনেক পিছিয়ে। আমরা কেন্দ্রীয় হারে বেতন কাঠামোর দাবিতে 2017 সাল থেকে লড়াই করে আসছি। 2019 সালের জুলাই মাসে আমরা অনশন করি। অনশনে সরকার বাধ্য হয়ে 2019 সালের 26 জুলাই 3 লাইনের একটা সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, ট্রেন্ড শিক্ষকদের গ্রেড-পে 2600 থেকে 3600 হল। নন-ট্রেন্ড শিক্ষকদের গ্রেড-পে 2900 হল। আমরা তারপরে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারও করে নিই। কিন্তু, পরবর্তীকালে দেখা যায় এই নির্দেশিকার ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তাতে চরম অন্যায় হচ্ছে আমাদের সঙ্গে। এই বঞ্চনাটা এত বড় যে 2011 সাল থেকে 2020 সাল পর্যন্ত বেতন প্রায় এক হয়ে গেছে। সিনিয়ররা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।"
মূলত, 2019 সালের 26 জুলাইয়ে প্রকাশিত সরকারি নির্দেশিকা সংশোধন করা এবং সিনিয়র ও জুনিয়রদের মধ্যে বেতনের ফারাক ঠিক রাখতে 2006 সালের 1 জানুয়ারি থেকে ন্যাশনাল এফেক্ট দেওয়ার দাবি তোলা হয় এদিনের কর্মসূচি থেকে। মিছিলের পাশাপাশি এদিন নিজেদের দাবিদাওয়া সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে বিকাশ ভবনে রওনা দেন চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। জানা গিয়েছে, সেখানে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কমিশনার অনিন্দ্যনারায়ণ বিশ্বাস তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন।
আরও পড়ুন : কাল 5টা পর্যন্ত টেট-এর মামলাকারীদের অফলাইনে আবেদনের সুযোগ হাইকোর্টের
ইউইউপিডাব্লুএ-র প্রতিনিধি দল জানায় যে কমিশনার তাঁদের দাবিকে ন্যায্য বলে মেনে নিয়েছে এবং দাবি পূরণে প্রয়োজনীয় ফাইল যথাস্থানে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সঙ্গে কমিশনার তাঁদের থেকে পাঁচদিন সময় চেয়েছেন দাবির প্রেক্ষিতে উত্তর দেওয়ার জন্য। আন্দোলনকারীদের তরফে কমিশনারকে জানানো হয়েছে, পাঁচ নয়। প্রয়োজনে সাতদিন সময় নিয়ে জানাতে। কিন্তু, সেই উত্তর সদর্থক না হলে আগামীতে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তাঁরা। প্রতিনিধিদল বিকাশ ভবন থেকে শহিদ মিনারের জমায়েতে এসে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে সদর্থক আলোচনার কথা জানানোর পর বিকেল 4টে 15 নাগাদ এদিনের মতো কর্মসূচি শেষ করেন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকারা।