কলকাতা, 21 মে : বিরোধী পক্ষের সব হিসেব বদলে দিয়ে IFA-কেই বিদায় জানালেন সচিব উৎপল গাঙ্গুলি । ৩০ জুন তাঁর সচিব পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে । ২০০৭ থেকে তিনি সচিব রয়েছেন । এই পদে এটা তাঁর তৃতীয় টার্ম । সোমবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন বিদায়ী সচিব । সেখানে তিনি বলেন, “তিনটি টার্মে সচিব ছিলাম । ফের নির্বাচনে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমার বয়স এখন ৭৪ বছর । ১২ বছর সচিবের দায়িত্ব সামলেছি । এবারের মেয়াদ শেষে আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না । নির্বাচন হোক বা না হোক, আগামীতে আমি আর থাকছি না। নতুনদের প্রতি অনেক শুভেচ্ছা রইল। যে বা যারা এই চেয়ারে বসবেন তাঁদের সব রকমের সাহায্য করব ।”
৩০ জুনের মধ্যে IFA-র বার্ষিক সাধারণ সভা করতে হবে । উৎপলবাবু যে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালেন সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে তাঁর সরে দাঁড়ানোয় সচিব পদ ঘিরে চলতে থাকা অঙ্কে অনেক বদলের সম্ভাবনা । নিজে না দাঁড়ালেও নির্বাচন হলে উৎপলবাবু কোনও প্রার্থী দেবেন কি না, সেই বিষয়টি স্পষ্ট নয়। সেই সমস্ত প্রসঙ্গ তিনি সাংবাদিক বৈঠকে এড়িয়ে যান । এবার সচিব পদের নির্বাচনে দুই সম্ভাব্য প্রার্থী বিশ্বরূপ দে ও জয়দীপ মুখার্জি । সেই বিষয়ে উৎপলবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি কোনও প্রার্থীর নাম শুনিনি ।"
১৯৯৫ সালের পর IFA-তে সচিব পদে কোনও নির্বাচন হয়নি। ২৪ বছর পর IFA-তে ফের নির্বাচনের হাওয়া। এমনিতে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কুরেশি-গাঙ্গুলি কমিটির রিপোর্ট এখনও পেশ না হাওয়ায় উৎপলবাবুর টানা চারটি টার্মে সচিব পদে থাকতে কোনও অসুবিধা ছিল না । কিন্তু গত পাঁচ-ছয় বছর IFA প্রত্যাশিতভাবে চলছিল না আর তার যাবতীয় দায় বর্তেছিল সচিবের ওপর।
বঙ্গ ফুটবলের নিয়ামক সংস্থার আর্থিক অবস্থা যে ভালো নয় তা বিদায় বেলায় মেনে নেন উৎপলবাবু । নিজের সংস্থা ABD থেকে ৭৫ লাখ টাকা স্পনসরশিপ এনে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন। ২০১২-১৩ সাল থেকে ক্লাবগুলি টিফিন খরচ বাবদ অনুদান পেয়েছে মাত্র একবার । ইলিয়ট শিল্ড- বঙ্কিম কাপ দীর্ঘদিন বন্ধ । নার্সারি লিগও অনিয়মিত । পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনেক দিন হল কার্যত উঠে গিয়েছে । রেফারিদের অনেক টাকা বকেয়া । দুই- তিনটি বেসরকারি সংস্থা পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পাশে না থাকলে রেফারিরা মাঠে নামতেন কি না সন্দেহ । IFA-র মেডিকেল ইউনিটের জন্য হল্যান্ড থেকে আনা দুটি আধুনিক স্ট্রেচারের খোঁজ নেই । কলকাতা লিগের ডার্বি ম্যাচ হলে টিকিটের হিসেবে গরমিলও আর নতুন নয় ।
সব মিলিয়ে রাজ্য ফুটবলের নিয়ামক সংস্থার ছবিটা অনেকদিন ধরেই বিবর্ণ । সচিব চেষ্টা করেছিলেন হাল ফেরাতে । সম্ভব হয়নি ।
এবারও পঞ্চম থেকে দ্বিতীয় ডিভিশনে সাড়ে তিন হাজারের বেশি ফুটবলার সই করেছেন । রাজ্যে ফুটবলকে বাঁচাতে সচিব নির্বাচনের আগে বেশ কিছু ছোট ক্লাব কর্তা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসে IFA-তে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন। গত দুই মাসে তিন-চারবার নিজেদের মধ্যে মিটিং হয়েছে তাঁদের। ময়দানের ফুটবল ক্লাবগুলিকে জোটবদ্ধ করতে তারা উদ্যোগ নিয়েছিল । কিন্তু উৎপলবাবু সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে নতুন সমীকরণের জন্ম হল । ১৪ জুলাই কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ শুরু হবে । ডুরান্ড কাপ প্রথমবার কলকাতায় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় উৎপলবাবুর সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত বিরোধী শিবিরকে অপ্রস্তুত করেছে ।
ময়দানে একসময় হকি খেলতেন । গোলরক্ষক হিসেবে বিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়া ছিল কাজ । প্রশাসক হিসেবে বঙ্গ ফুটবলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণ না করতে পারার ব্যর্থতা নিয়েই সরে গেলেন উৎপলবাবু । বিদায় বেলায় আবেগতাড়িত তিন টার্মের সচিব । বললেন, "মেসি ম্যাচ আয়োজন করে তৃপ্তি পেয়েছিলাম সবচেয়ে বেশি ।"