কলকাতা, 21 ফেব্রুয়ারি : কোথাও যেমন হাসপাতাল থেকে সংক্রমণের কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তেমনই কোথাও আবার বেডসোর হওয়ার কারণেও মৃত্যু হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে আবার, রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। এমনই বিভিন্ন অভিযোগের ঘটনায় শহরের চারটি বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ছয় লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন।
স্বাস্থ্য কমিশন অর্থাৎ, ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন-এর চেয়ারপার্সন, বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, 2019-এর 2 সেপ্টেম্বর মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা 58 বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে ভর্তি করানো হয়েছিল আলিপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে। পরের দিন সেখানে তাঁর বাইপাস সার্জারি হয়। তবে, এই রোগীকে আর বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি পরিজনদের। কমিশন জানিয়েছে, হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশনের কারণে এই রোগীর মৃত্যু হয় ওই হাসপাতালে। এই ঘটনায় বেসরকারি ওই হাসপাতালকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছে কমিশন।
কমিশনের চেয়ারপার্সন জানিয়েছেন, যাদবপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে 77 বছর বয়সি এক প্রৌঢ়কে ভর্তি করানো হয়েছিল সিওপিডি-র কারণে। ওই হাসপাতলে 11 দিন থাকার পরে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এই রোগীকে। তবে, হাসপাতালে থাকার কারণে এই রোগীর বেডসোর হয়ে গিয়েছিল। এর পরে এই রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এই মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। তবে, এই ঘটনায় বেসরকারি ওই হাসপাতালকে এক লাখ টাকা অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছে কমিশন।
মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে গত 2019-এর নভেম্বর মাসে 67 বছর বয়সি এক প্রৌঢ়াকে ভর্তি করানো হয়েছিল। রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারপার্সন জানিয়েছেন, ওই হাসপাতালে এই রোগীর ব্রেন সার্জারি করা হয়েছিল। কিন্তু এই রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশনের কারণে এই রোগীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ওই হাসপাতালকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দমদম পার্ক এলাকার বাসিন্দা এক রোগীকে ভর্তি করাতে চায়নি মল্লিকবাজারে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতাল। স্বাস্থ্য কমিশনে দায়ের করা অভিযোগ জানানো হয়, পরিজনরা মনে করেছিলেন এই রোগীর স্ট্রোক হয়েছে। হাসপাতাল বলে এই রোগীর কার্ডিয়লজিক্যাল সমস্যা রয়েছে। এই কারণে, অ্যাম্বুলেন্স থেকে রোগীকে নামতে দেওয়া হয়নি। গত বছরের 2 এপ্রিলের এই ঘটনায় কমিশনের চেয়ারপার্সন জানিয়েছেন, রোগীর পরিজনরা তো জানবেন না কার্ডিওলজি, না নিউরোলজির সমস্যা। হাসপাতালে কোনও রোগীকে নিয়ে আসা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা দিতে হবে।
এর পরে যদি ওই হাসপাতাল না পারে, তা হলে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করে দিতে হবে। রোগীকে নিয়ে চলে যাওয়ার কথা বলতে পারে না হাসপাতাল। এই ঘটনায় বেসরকারি ওই হাসপাতালকে 1 লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
গত বছর মার্চ মাসে এক রোগীর চিকিৎসা হয়েছিল শরৎ বোস রোডের এক হাসপাতালে। এই রোগীর মৃত্যু হয়। রোগীর বেডসোর হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনায় ওই হাসপাতালকে 25 হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন।
আরও পড়ুন : এসএসকেএমে মায়ের রান্নাঘর, এবার থেকে 5 টাকায় ভরবে পেট
শুধুমাত্র কলকাতার হাসপাতাল নয়। মুর্শিদাবাদে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে 23 বছর বয়সি এক যুবতির সিজারিয়ান সেকশন করা হয়। তবে প্রসবের পরে প্রসূতির ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। কমিশনের চেয়ারপার্সন জানিয়েছেন, এই জটিলতা ধরতে পারেননি চিকিৎসকরা। ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় বেসরকারি ওই হাসপাতালকে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।