কলকাতা, 12 সেপ্টেম্বর : ভবানীপুরে অবাঙালি ভোটাররাই লক্ষ্য তৃণমূল কংগ্রেসের ৷ ভবানীপুর উপ-নির্বাচন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই ৷ সেই লড়াইয়ে মুখ্য পাথেয় হিসাবে ভবানীপুরের গুজরাতি, মাড়োয়ারি এবং পঞ্জাবি ভোটারদেরই গণ্য করছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁদের নিয়ে তিনি নিজে দু'টি বৈঠকও করবেন ৷
একুশের নির্বাচনে নন্দীগ্রামে পরাজয়ের পর ভবানীপুরে প্রেস্টিজ ফাইট মমতার । ঘরের মাঠে রেকর্ড ফল করে অতীতের ক্ষত মুছতে চান মমতা । তাই উপনির্বাচন ঘোষণার পরদিন থেকেই ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । কিন্তু ঘরের মাঠে মমতার জয়ের পথে কাঁটা হতে পারে অবাঙালি ভোটব্যাঙ্ক । একুশের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জিতলেও অবাঙালি ভোটব্যাঙ্কের একটা বড় অংশের সমর্থন পেয়েছে বিজেপি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন না একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক । তাই রেকর্ড জয়ের লক্ষ্যে এই অবাঙালি ভোটব্যাঙ্ককেই পাখির চোখ করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ।
চলতি সপ্তাহে অবাঙালিদের নিয়ে দু'টি মিটিং করবেন মমতা । যদিও কবে মিটিং হবে সে সম্পর্কে দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি । তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্ত থেকেই পরিষ্কার যে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গুজরাতি, মাড়োয়ারি, পঞ্জাবি ভোটারদের নিয়ে তিনি আলাদা করে প্ল্যান করছেন । সর্বোপরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে এবার তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে বেশি করে সময় দিচ্ছেন তা স্পষ্ট । নন্দীগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে, জিতবেন এই নিশ্চয়তা নিয়ে বসে থাকতে চাইছেন না তিনি । গত সপ্তাহে চেতলার অহীন্দ্র মঞ্চের কর্মিসভাতেই তিনি বার্তা দিয়েছিলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়াচ্ছেন মানে জিতে যাবেন এমনটা যেন না ভাবা হয় । বরং যাঁকে ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা যেন ভালভাবে পালন করেন ।"
যদি ভবানীপুরের ভোট বিন্যাস দেখা হয়, তাহলে এই বিধানসভাকে 'মিনি ইন্ডিয়া' বললে বোধহয় ভুল হবে না । কারণ এই বিধানসভা কেন্দ্রে যেমন বাঙালি ভোটার রয়েছেন তেমনই রয়েছেন অবাঙালি ভোটার । এখানে যেন নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান-এর সঠিক মিলন ঘটেছে । তৃণমূলের তরফ থেকে সকলকেই এবারের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশের চাইছেন । আর তাই এলাকার জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে নেতা-মন্ত্রীরা সকলেই পালা করে করে মানুষের দরজায় ছুটছেন ।
ভবানীপুর বিধানসভা জুড়েই উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছেন গুজরাতি, মাড়োয়ারি এবং পঞ্জাবিরা । তৃণমূলের ভোট ম্যানেজারদের বক্তব্য অনুযায়ী, অবাঙালি ভোটারদের মধ্যে এখানে সবথেকে বেশি সংখ্যায় রয়েছেন গুজরাতি ভোটাররাই । ভবানীপুর বিধানসভার অন্তর্গত কলকাতা পৌরনিগমের 70 এবং 72 নম্বর ওয়ার্ডে অধিকাংশ গুজরাতির বাস । শুধু 70 নম্বর ওয়ার্ডে মোট ভোটারদের প্রায় 45 শতাংশই গুজরাতি । 72 নম্বর ওয়ার্ডে তা প্রায় 40 শতাংশ । 63, 71 এবং 74 নম্বর ওয়ার্ডে মাড়োয়ারিদের বাস । আবার 77 নম্বর ওয়ার্ডে বেশি রয়েছেন বাংলা ও ঊর্দুভাষী মুসলিমরা ৷ পাশাপাশি 82 নম্বর ওয়ার্ডে মুসলিম ভোটারের সংখ্যা প্রায় 55 শতাংশ ।
ভবানীপুরে এই অবাঙালি ভোটাররাই বিজেপির বড় ভরসা । একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও 70 এবং 74 নম্বর ওয়ার্ডে মূলত এই অবাঙালি ভোটের জোরেই এগিয়ে ছিল বিজেপি । বাকি ছ'টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল তৃণমূল । এবারেও ভবানীপুরে অবাঙালি হিন্দু ভোটকেই টার্গেট করেছে বিজেপি । একইভাবে গুজরাতি, পঞ্জাবি, মাড়োয়ারি, বিহারি সম্প্রদায়ের ভোটকে নিজেদের দিকে টেনে কাঙ্ক্ষিত জয়ের মার্জিন আরও বাড়িয়ে নেওয়াই তৃণমূল সুপ্রিমোর লক্ষ্য । তাই প্রচারে কোনও খামতি দিচ্ছেন না তৃণমূল নেতারা । তৃণমূল নেত্রী নিজেও নামছেন । এখন দেখার শেষ পর্যন্ত এই প্রচার ইভিএমের বাক্সে আদৌ তৃণমূল সুপ্রিমোকে কোনও বাড়তি সুবিধা করে দিতে পারে কিনা ৷
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee : বার্ষিক আয় বেড়েছে 5 লাখ, কমেছে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ; হলফনামা মমতার