কলকাতা, 6 জানুয়ারি : এখন পর্যন্ত আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কতজনকে টাকা দেওয়া হয়েছে এবং কতজন টাকা পায়নি তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে সিএজি-কে তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট । পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সিএজির সঙ্গে যেন সমস্তরকমের সহযোগিতা করা হয়। নির্দেশ দিয়েছিল প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণাণ ও অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
চলতি বছরের 16 মে ঘূর্ণিঝড় আমফানের জন্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা । ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার । কিন্তু সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বহু মানুষ । এই দাবিতে 3 অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন কাকদ্বীপের বাসিন্দা খয়রুল আনম শেখ । তাঁর বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমফানে । কিন্তু তিনি কোনও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টে। পাশাপাশি আরও চার-পাঁচটি মামলা একই দাবিতে দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে।
আদালতে মামলা হওয়ার পর রাজ্য সরকারের তরফে 6 ও 7 অগাস্ট আবেদনপত্র জমা নেওয়ার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয় । ওই দুই তারিখে কোরোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে মানুষ আবেদনপত্র জমা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ব্লক অফিসে জমায়েত করে । কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্য বিকেল চারটে বাজতে না বাজতেই আবেদন নেওয়া বন্ধ করে দেয় এমনকী পুলিশ দিয়ে আবেদনকারীদের জোর করে হটিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছিল।
সাইক্লোন আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা বণ্টনে যে দুর্নীতি হয়েছে তার ব্যাখ্যা চেয়ে একাধিকবার রিপোর্ট তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের তরফে মামলার শুনানিতে হাজির ছিলেন না কেউ । ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের সচিবকে অক্টোবরে আদালতে হাজির হয়ে জানানোর নির্দেশ দিয়েছিল কেন এতদিনেও রিপোর্ট রেডি করতে পারেনি তারা।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল এখন পর্যন্ত কতজন মানুষ আমফান ক্ষতিপূরণ পেয়েছে । তার বিস্তারিত বিবরণ সহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে রাজ্যের ওয়েবসাইটে। পাশাপাশি আবেদন সত্ত্বেও যাঁরা এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি তাঁদের চিহ্নিত করতে। কিন্তু মামলার শুরু থেকেই রাজ্যের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি।
প্রথম থেকেই রাজ্যের আচরণে অসন্তুষ্ট ছিল আদালত। এরপরই 1 ডিসেম্বর সিএজি তদন্তের নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় এই সংস্থাকে যাতে রাজ্য সরকার সমস্ত রকমের সহযোগিতা করে সেই নির্দেশ দেয় । এরপর 4 ডিসেম্বর রাজ্য সরকার মৌখিকভাবে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে গিয়ে এই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছিল । কিন্তু প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের সেই আর্জি খারিজ করে দিয়েছিল এবং রাজ্য সরকার চাইলে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে বলে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছিলেন। এরপর আজ আবার রাজ্য সরকার লিখিতভাবে সিএজি তদন্তের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাল।