কলকাতা, 17 নভেম্বর : চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে যে বিপুল দুর্নীতি হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে কার্যত মেনেই নিল রাজ্য সরকার। একইসঙ্গে এই ঘটনা কলকাতা হাইকোর্টর প্রাক্তন কোনও বিচারপতির তত্ত্বাবধানে তদন্ত করা হোক, এমনই পরামর্শ আজ বিচারপতিকে দেওয়া হল রাজ্যের তরফে। আপাতত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আগামিকাল বেলা 2টোর মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ৷
ডি-গ্রুপে বেনিয়ম নিয়োগের যে অভিযোগ, তার পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন কলকাতা হাইকোর্টে জানায় যে তারা এমন কোনও নিয়োগপত্র দেয়নি ৷ এসএসসি'র এই বক্তব্যের স্বপক্ষে আগামিকাল হলফনামা দিতে বলা হলো রাজ্যকে। আপাতত পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত 25 জনের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
2016 সালে রাজ্য সরকার প্রায় 16 হাজার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ করে ৷ যে পরীক্ষা নিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। 4 মে, 2019 ছিল নিয়োগপত্র প্রদানের শেষ তারিখ। কিন্তু মামলাকারীদের অভিযোগ, এরপরেও একাধিক ব্যক্তি চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসেবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় নিযুক্ত হয়েছেন। এইরকম 25 জনের নিয়োগ পত্রের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মামলাকারীরা হাতে পেয়েছেন বলে দাবি। গতকাল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিষয়টি শোনার পর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং বুধবার সকালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিবকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন স্কুল সার্ভিস কমিশন এই ধরনের আদৌ নিয়োগ করেছে কিনা তা জানার জন্য।
আরও পড়ুন : ইডি-সিবিআইয়ের আঞ্চলিক অধিকর্তার বিরুদ্ধে বিধানসভায় স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব তৃণমূলের
সকালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিব এসে জানান, সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফ এই ধরনের কোন নিয়োগপত্র কাউকে দেওয়া হয়নি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই বক্তব্য শোনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি বলেন, যদি কোনও অনিয়ম পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশনের সমস্ত কর্মচারীকে দফতর থেকে বের করে দেওয়া হবে বলেও নির্দেশ দেন তিনি। কমিশনের যে আঞ্চলিক দফতরগুলো রয়েছে তারা কোনও সুপারিশ করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখে বেলা 3টের মধ্য়ে জানাতে বলেন বিচারপতি।
বেলা 3টের সময় মামলার শুনানিতে রাজ্যের তরফে আইনজীবী সম্রাট সেন ও কিশোর দত্ত বলেন, "আঞ্চলিক কমিশনের তরফ এই ধরনের কোনও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি।" পাশাপাশি তাঁরা বলেন, "প্রয়োজনে কলকাতা হাইকোর্ট প্রাক্তন কোনও বিচারপতির তত্ত্বাবধানে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করুক।"
আরও পড়ুন : 1 জানুয়ারি রাজ্যে পালিত হবে ছাত্রছাত্রী দিবস, ঘোষণা মমতার
অন্যদিকে মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, এই 25 জন ছাড়াও আরও অন্তত 500 জনের এই ধরনের নিয়োগপত্র তারা হাতে পেয়েছেন ৷ তবে রাজ্যের তরফে আইনজীবীদের প্রস্তাবে সম্মতি দেন তিনি।
এরপরেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, আগামিকাল বেলা 2টোর মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের কেন্দ্রীয় অফিস ও আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলো তাদের দাবির স্বপক্ষে হলফনামা পেশ করুক ৷ আপাতত আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই 25 জনের বেতন বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি মামলাকারীকে এই 25 জন যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের নাম-ঠিকানা পূর্ণাঙ্গ বিবরণ আগামিকাল আদালতকে জমা দিতে বলা হয়েছে।