কলকাতা, 8 অক্টোবর : সব্যসাচী দত্ত (Sabyasachi Dutta) তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরায় দলের অন্দরে দেখা দিয়েছে চাপা অসন্তোষ ৷ সব্যসাচীর তৃণমূলে যোগদান পর্ব চলাকালীন বৃহস্পতিবার বিধানসভা চত্বরে দেখা মেলেনি সুজিত বসুর (Sujit Bose) ৷ উল্লেখ্য, সব্যসাচী বিজেপিতে থাকাকালীন একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিলেন এই সুজিতই ৷ একইসঙ্গে, অনুপস্থিত ছিলেন রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়ও ৷ যদিও শাসকশিবিরের একাংশ মনে করছে, এই মন কষাকষি সাময়িক ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সম্মতি ছিল বলেই ফের তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরতে পেরেছেন সব্যসাচী ৷ এক্ষেত্রে দলনেত্রী কথাই শেষ কথা ৷ অতএব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবই মিটে যাবে ৷ ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থ ভৌমিক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যেকোনও রাজনৈতিক দলই সবসময় সমষ্টিগত সিদ্ধান্তের উপর চলে ৷ এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ক্ষোভ, বিক্ষোভ থাকতেই পারে ৷ তবে সেই ক্ষোভ, বিক্ষোভ দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় ৷’’
আরও পড়ুন : Sabyasachi Dutta : ‘আবেগ’ ভুলে তৃণমূলে ফিরলেন সব্যসাচী
সুজিত বসু বনাম সব্যসাচী দত্ত ৷ বিধাননগরের রাজনীতিতে এই দু’জনের টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের ৷ অতীতে এক দলে থাকলেও সুজিত এবং সব্যসাচীর সম্পর্ক বরাবরই ছিল সাপে-নেউলে ৷ বিগত বিধানসভা নির্বাচনে ইভিএম-এর লড়াইয়ে অবশ্য শেষ হাসি হেসেছিলেন সুজিতই ৷ তবে সেই হাসি দীর্ঘস্থায়ী হল না ৷ কারণ, সেই ঘটনার পাঁচ মাসের মধ্যেই তৃণমূলে ‘ঘর ওয়াপসি’ হল সব্যসাচীর ৷ তৃণমূল সূত্রের খবর, সব্যসাচী দত্তের ঘরে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হতেই এর বিরুদ্ধে নিজের মতামত দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন সুজিত ৷ একইভাবে বিধাননগর পৌরনিগমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসক তথা রাজ্যের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়ও এই নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন ৷ যদিও সব্যসাচী দলে ফেরার দিন এই দু’জনই ছিলেন নীরব ৷
বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুকুল রায় (Mukul Roy) ও সব্যসাচী দত্তের লুচি-আলুর দম পর্ব রাজ্য রাজনীতিতে হইচই ফেলে দিয়েছিল ৷ সেই সময় ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) বারবার চেষ্টা করেও সব্যসাচী দত্তকে ধরে রাখতে পারেননি ৷ মুকুলের ডাকে সাড়া দিয়ে বিজেপিতে নাম লেখান সব্যসাচী ৷ এরপর বৃহস্পতিবার বিধানসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে পতাকা বদল করে আবার ঘাসফুলশিবিরে ফেরেন সব্যসাচী ৷ কিন্তু পদ্মশিবির ছেড়ে তৃণমূলে ফিরলেও আগের মতো সক্রিয় ভূমিকায় তাঁকে দেখা যাবে কি ? দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে, এবার দলে ফিরে বিধাননগর বা রাজারহাটে তাঁর পুরোনো জায়গা আদৌ ফিরে পাবেন তো সব্যসাচী ?
এই প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সব্যসাচীর তৃণমূলে ফিরে আসায় যে দলের অন্দরে গৃহযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই ৷ বিশেষ করে সুজিত বসু ও তাপস চট্টোপাধ্যায়রা চাইবেন না দলে ফিরে আবার তাঁদের উপর খবরদারি করুন সব্যসাচী দত্ত ৷ আসলে এইভাবে বারবার দলবদল করলে যেকোনও নেতারই গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয় ৷ পাশাপাশি, এতে দলের ভারসাম্যও ঠিক থাকে না ৷ এখন দেখার, সুজিত বসু, তাপস চট্টোপাধ্যায়রা, কীভাবে সব্যসাচী দত্তের ঘরে ফেরাকে গ্রহণ করেন ৷’’
আরও পড়ুন : Sabyasachi Dutta: পদ্ম ছেড়ে ফের ঘাসফুলে সব্যসাচী
অন্যদিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস বরাবরই এক ব্যক্তির দল ৷ এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শেষ কথা ৷ কাজেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তাঁকে ফিরিয়ে এনেছেন, বাকিদের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই ৷ সে দিক থেকে তাপস চট্টোপাধ্যায় ও সুজিত বসুরা নিরুপায় ৷ তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে ৷ যেমন বৃহস্পতিবারই সৌগত রায় এর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন ৷ তবে আমার মনে হয়, এই ক্ষোভ বড় আকার নেওয়ার আগেই সামলে নেওয়া হবে ৷’’