কলকাতা, 27 জুলাই: কোরোনায় ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুর ঘটনা ও মানুষের অমানবিক মুখ দেখে আতঙ্কিত রাজ্যের বিরোধী দলের নেতারা । কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি বিবেকানন্দের জীব সেবার কথা উল্লেখ করে শঙ্কাপ্রকাশ করেছেন । অন্যদিকে এই বাংলা অচেনা বলে মন্তব্য করলেন CPI(M) নেতা সুজন চক্রবর্তী।
বেহালা, বনগাঁ এবং সোনারপুরে একের পর এক ঘটনায় উদ্বেগে রাজ্যের বিরোধী দলের নেতারা । কোথাও দীর্ঘক্ষণ ঘরের মধ্যেই পড়ে থাকছে কোরোনা আক্রান্তের দেহ, কোথাও হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে তোলার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। অ্যাম্বুলেন্স থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে রোগীর। এই দৃশ্য দেখে মন্বন্তরের ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার অহেতুক ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্যই আজ মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াতে পারছে না।
সুজনবাবু বলেন, "শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের বলার পরও কোন সুরাহা হচ্ছে না । 15-17 ঘণ্টা ধরে মৃতদেহ বাড়িতে পড়ে থাকছে । তুলে নিয়ে গিয়ে সৎকার করার লোক নেই। মন্বন্তরের সময় বাংলার যা অবস্থা হয়েছিল ফের সেদিকেই এগোচ্ছে রাজ্য । মানুষের বিপদে মানুষ দাঁড়াতে পারছে না । মানুষকে সাহায্য করার পরিবর্তে রাজ্য সরকার ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলছে রাজ্যবাসীকে। একগুচ্ছ হেল্পলাইন নম্বর চালু করলেও বিপদের সময় ফোনগুলি কেউ তোলে না। মুখ্যমন্ত্রী সহ তার দপ্তরের সচিবদের একাধিকবার ফোন করলেও কেউ তা ধরেন না। ফোন বন্ধ থাকে অথবা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়।"
তিনি আরও বলেন, " আমরা তৈরি রয়েছি। সরকারি নির্দেশ এলেই আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে । বাম ছাত্র-যুব চিকিৎসক সহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করার জন্য প্রস্তুত। সরকার কেবল জানাক আমরাও সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করব। কোরোনা ভাইরাসের এই দুঃসময়েও রাজ্য সরকার বিভিন্ন ক্লাবগুলোকে টাকা দিয়েছে । যাদের টাকা দিয়েছে তাদের বলুক মানুষের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াতে। মানুষকে ভয় পাওয়ানোই সরকারের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। "
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি বলেন, "গত চার মাস ধরে রাজ্যের অবস্থা ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা বারবার বলছি মানুষের টেস্ট প্রয়োজন। বহু রাজ্য এগিয়ে গেলেও কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে রয়েছে । কেন এই অবস্থা ? রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচুর সময় পেয়েছে রাজ্য । এদিকে ক্রমশ অমানবিক হয়ে উঠছে পশ্চিমবঙ্গ । 65 বছরের বৃদ্ধ হাসপাতালে যেতে গিয়ে মারা গেলেন। তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার জন্য সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে এলেন না। রাজ্যের এই ছবি দেখে ভয় হচ্ছে। আতঙ্কের আবহ তৈরি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। সারা পৃথিবীর কাছে এবং গোটা দেশের কাছে খারাপ বার্তা যাবে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে।"
রাজ্যে কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে অধীরবাবু বলেন, " দিল্লি, গোয়া, কর্নাটক, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলি নিজেদের রাজ্যে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে । দিল্লিতে বর্তমানে সুস্থতার হার 88 শতাংশ। অথচ পশ্চিমবঙ্গে সেই হার অনেক কম, 50 থেকে 60 শতাংশ। অতি ভয়ংকর জায়গা থেকেও মহারাষ্ট্র নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গের পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবায় অবহেলা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, লুট, কাটমানি আছে অথচ মানুষের সেবার পরিবেশ নেই।"