কলকাতা, 4 অক্টোবর : বায়োপসি টেস্ট না করিয়েই এক যুবতির বাঁ দিকের ব্রেস্টের টিউমার অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয় জেলাস্তরের বেসরকারি এক নার্সিংহোমে । অস্ত্রোপচারের পরে বায়োপসি টেস্ট করে 32 বছর বয়সি এই যুবতির ওই টিউমারে ক্যানসার ধরা পড়ে । এরপরে, ফের তাঁর ব্রেস্টে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন দেখা দেয় । এ দিকে, যুবতিকে বিভিন্ন চিকিৎসক পরামর্শ দেন, ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য অস্ত্রোপচার করে তাঁর বাঁ দিকের ব্রেস্ট সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে । অবশেষে, কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করে এই যুবতিকে ক্যানসার থেকে মুক্ত করা হল তাঁর বাঁ দিকের ব্রেস্ট সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে । এবং, তাঁর পিঠ থেকে মাংস নিয়ে ওই ব্রেস্ট রিকন্সট্রাকশন করে দেওয়া হল । এক কোভিড হাসপাতালে এ ভাবেই এক নন-কোভিড রোগীর অঙ্গহানি রুখে দেওয়া হল ।
5 সেপ্টেম্বর কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চালু হয়েছে ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন সার্জারির ক্লিনিক । এই ধরনের ক্লিনিক এ রাজ্যের অন্য কোনও সরকারি হাসপাতালে নেই । এই ক্লিনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, 23 সেপ্টেম্বর কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসেন যুবতি। এর পরে এই বিভাগ থেকে তাঁকে রেফার করে দেওয়া হয় এই হাসপাতালের ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি ক্লিনিকের ইনচার্জ, চিকিৎসক ধৃতিমান মৈত্রর কাছে । নার্সিংহোমে যুবতির চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র দেখার পরে এই চিকিৎসক এই যুবতির পেটে সিটি করান । এর রিপোর্টে জানা যায়, এই যুবতির বাঁ দিকের বগলের লিম্ফস নোডগুলি বাদে অন্য আর কোথাও ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েনি । এই যুবতির বাঁ দিকের ব্রেস্ট সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন ওই ইনচার্জ ।
পরে যুবতির কোভিড টেস্ট করানো হয় । টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে । 28 সেপ্টেম্বর এই যুবতির অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক ধৃতিমান মৈত্র । সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চলে এই অস্ত্রোপচার । এই অস্ত্রোপচারে তাঁর সঙ্গে ছিলেন তিন জন ট্রেনি ডাক্তার । তাঁরা হলেন, সুচিস্মিতা চক্রবর্তী, দিব্যশ্রী পাল এবং অভিষিক্তা মল্লিক । এই মুহূর্তে যুবতি ভালোই আছেন বলে জানা গেছে ৷ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে । ধৃতিমান মৈত্র বলেন, "এক নার্সিংহোমে ওই যুবতির বাঁ দিকের ব্রেস্টে আংশিকভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল । ওই অস্ত্রোপচারের আগে বায়োপসি টেস্ট করেও দেখা হয়নি । ক্যানসার পুরোপুরি নিরাময় হয়নি ৷ অবশেষে আমাদের এখানে সাড়ে চার ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচার হয় ৷ পিঠের থেকে মাংসপেশী নিয়ে তাঁর বাঁ দিকের ব্রেস্ট পুনর্নির্মাণ করে দিয়েছি । অস্ত্রোপচারের পর থেকে সাত দিন এই যুবতিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে । এর পরে হাসপাতাল থেকে তাঁর ছুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।"
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শুধুমাত্র অন্য হাসপাতালের বিভিন্ন চিকিৎসক নন, কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জিকাল অঙ্কোলজি বিভাগের এক চিকিৎসক-ও এই যুবতিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য তাঁর বাঁ দিকের ব্রেস্ট অস্ত্রোপচার করে সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে । তবে ধৃতিমান মৈত্র এব্যাপারে বলেন, "জেলাস্তরের বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও এই প্রাকটিস চলছে, ক্যানসার রয়েছে কি না বায়োপসি করে সেটা না দেখে, টিউমার দেখে অস্ত্রোপচার করে দেওয়া হয় । এভাবে অস্ত্রোপচার করে দেওয়া হলে ক্যানসার থেকে যায় । বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্রেস্ট সম্পূর্ণ বাদও দেওয়া হয় । অস্ত্রোপচারের আগে বায়োপসি করে ক্যানসার রয়েছে কি না যদি দেখে নেওয়া যায়, তাহলে ক্যানসার অনুযায়ী অস্ত্রোপচার-ও প্রথমেই করা যায় ।"
ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সার্জিকাল অঙ্কোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করেন । এর পরে প্রয়োজনে রিকনস্ট্রাকশন করেন প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগের চিকিৎসকরা । কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এই ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি ক্লিনিক চালু হওয়ার উদ্দেশ্যে যাতে ব্রেস্ট সংক্রান্ত পুরো চিকিৎসা এক স্থানে হয় । তাঁর কথায়, "কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এখন কোভিড হাসপাতাল হিসাবে চালু রয়েছে । এর মধ্যেও নন-কোভিড এই চিকিৎসা করা সম্ভব হল । মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট অত্যন্ত সেনসিটিভ ইশু । অন্য চিকিৎসকরা যেখানে এই যুবতির ব্রেস্ট সম্পূর্ণ বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন, সেখানে এই যুবতির ব্রেস্ট সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে রিকনস্ট্রাকশন করে দেওয়া সম্ভব হল ।"