কলকাতা, 18 জানুয়ারি : ষষ্ঠ সেমেস্টারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই অন্য সকলের মতো পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু, সকলের রেজ়াল্ট প্রকাশিত হলেও নিয়মের গেরোয় তা পাননি তাঁরা। তাই জানুয়ারির মধ্যে ফলপ্রকাশের দাবিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ বিভিন্ন কলেজের পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখালেন কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে । এদিন কলেজ পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে দীর্ঘক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট বন্ধ রাখা হয়। যার জেরে সমস্যায় পড়েন বিভিন্ন কাজে আসা পড়ুয়া ও অন্যরা।
গত বছর কোরোনা আবহে জুন মাসের পরিবর্তে অক্টোবর মাসে হয় ষষ্ঠ তথা স্নাতকের চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা। ফল প্রকাশিত হয় ওই মাসেরই শেষের দিকে। তারপরে বাকি থাকা অন্তর্বর্তী সিমেস্টার এবং সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা নেয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু, নিয়মের গেরোয় চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা দিয়েও রেজাল্ট পাননি জয়পুরিয়া কলেজের বি.কমের প্রায় 70 জন পড়ুয়া। জানা গিয়েছে যে উপস্থিতি কম থাকা বা ফর্ম ফিলাপ না করার কারণে দ্বিতীয় বা চতুর্থ সিমেস্টারে নন-কলেজিয়েট হয়ে যান ওই পড়ুয়ারা। সিবিএসসি-এর নিয়ম অনুযায়ী, চতুর্থ সিমেস্টারের পরীক্ষা দেওয়ার পরেই ষষ্ঠ সিমেস্টারের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যোগ্য বলে ধরা হয় তাঁদের। কিন্তু, এই বছর চতুর্থ সিমেস্টারের পরীক্ষা দেওয়ার আগেই ষষ্ঠ সিমেস্টারের পরীক্ষা হয়ে যায়। যেহেতু, ওই পড়ুয়ারা চতুর্থ সিমেস্টারের পরীক্ষা দেওয়ার আগেই ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষা দেন, তাই তাঁদের ষষ্ঠ সিমেস্টারের পরীক্ষা গ্রাহ্য করা হবে না বলে জানানো হয়। ফলে, নিয়মের গেরোয় ফেঁসে যান ওই পড়ুয়ারা।
নভেম্বর মাস থেকেই তাঁদের ফল প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে জয়পুরিয়া কলেজের ওই পড়ুয়ারা। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি, কলেজের সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেও কাজ হয়নি। তাই আজ জয়পুরিয়া-সহ আরও কয়েকটি অধীনস্থ কলেজের পড়ুয়ারা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অভিযানের ডাক দেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বহু ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন মিছিল করে। মিছিল চলাকালীন হঠাৎ কিছু পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে গেট বন্ধ করে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। ফলে, বিক্ষোভকারীদের একাংশ ভিতরে ও একাংশ বাইরে হয়ে যায়। বাইরে জমায়েতকারী পড়ুয়ারা স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ভিতরে ঢুকে পড়া ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন দ্বারভাঙা বিল্ডিংয়ে ঢুকে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে দেন।
বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের তরফে কৌস্তভিক সর্দার বলেন, "আমরা জয়পুরিয়া কলেজের থেকে এসেছি। অক্টোবর মাসে আমরা ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষা অনলাইনে দিয়েছি। আমাদের বলা হয়েছিল, আমাদের রেজাল্ট আসবে। কিন্তু, 22 অক্টোবর সবার রেজাল্টের সঙ্গে আমাদের রেজাল্ট আসেনি। তারপরে আমরা অনেকবার কলেজের কাছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এসেছি। কিন্তু, রেজাল্ট পাইনি। তিনমাস পরেও সদুত্তর না পেয়ে আজ আমরা এসেছি। আমরা নিয়ম কী করে জানব? আমাদের অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করিয়েছে, কনফার্মেশন দিয়েছে, তারপরেই আমরা পরীক্ষা দিয়েছি। তারপরেও আমাদের রেজাল্ট আসছে না।" বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের দাবি, জানুয়ারি মাসের মধ্যেই তাঁদের রেজাল্ট প্রকাশ করতে হবে।
আরও পড়ুন : 8 দফা দাবিতে লাগাতার অবস্থানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতি
এদিন দুপুর সাড়ে 12টা থেকে বিকেল 4টে পর্যন্ত চলে এই বিক্ষোভ। প্রথমদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট বন্ধ রাখা হয়। যার জেরে সমস্যায় পড়েন বিভিন্ন কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা মানুষজনেরা। অবশেষে বাইরে বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা জোর করে ভিতরে না ঢোকার প্রতিশ্রুতি দিলে বড় গেটের মধ্যে থাকা ছোট গেটটি মানুষের যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হয়। আর ভিতরে দ্বারভাঙা বিল্ডিংয়ে চলতে থাকে বিক্ষোভ। ঘন্টাখানেক বিক্ষোভ চলার পর ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিনিধিদলকে ডেকে পাঠান সহ-উপাচার্য আশিস চট্টোপাধ্যায়। পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল গিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন তাঁর সঙ্গে। অবশেষে আলোচনা শেষে আজকের মতো আশ্বস্ত হয়ে বিকেল 4টে নাগাদ ফিরে যান বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা।