কলকাতা, 13 জুন : নূপুর শর্মার মন্তব্যের (Nupur Sharma Controversial Comment) ইস্যুর বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে যে বিক্ষোভ আন্দোলন চলছে, তা নিয়ে এবার মামলা হল কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) ৷ এই নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ঠেকাতে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন ব্যর্থ বলে কলকাতা হাইকোর্টে দাবি করেছেন মামলাকারীরা (Case File Against Bengal Government on Prophet Remarks Row Agitation) ৷ অন্যদিকে রাজ্য সরকারের তরফে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা আদালতে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ৷ তিনি জানিয়েছেন যে প্রতিবাদ বিক্ষোভের জেরে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত রাজ্য (State government to compensate people affected by recent violence) ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, পয়গম্বর মহম্মদকে (Prophet Remarks Row) নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে ৷ তার প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় চলছে বিক্ষোভ ৷ এই নিয়ে মামলাকারী আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত জানিয়েছেন, পার্ক সার্কাস, হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করা হয়েছে । পাঁচলা, উলুবেড়িয়ার পরিস্থিতির ফটোগ্রাফ তিনি জমা দিয়েছেন আদালতে । তাঁর দাবি, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে । সাধারণ মানুষের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হচ্ছে । প্রশাসন তেমন কিছুই করতে পারছে না । নদীয়ার বেথুয়াডহরিতে গতকাল ফের রেল অবরোধ করা হয় । রাজ্যের এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ডাকার ব্যাপারে দ্বিধা থাকা উচিত নয় । রাজ্য পুলিশ এদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ।
তাঁর আরও বক্তব্য, বিভিন্ন জায়গায় সাময়িক সময়ের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বটে । কিন্তু তাতে কিছুই হবে না । রাজ্য পুলিশ যদি সমর্থ না হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, তাহলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নেওয়া দরকার ৷ উস্কানির নেপথ্যে কারা, তা জানার জন্য এনআইএ-কে তদন্তভার দেওয়া উচিত ৷
অন্যদিকে আরেক মামলাকারী দেবদত্ত মাঝির তরফে আইনজীবী সুরজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘9 জুন যা হয়েছে, রাজ্য প্রসাসনের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না একে । জাতীয় সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করা হয়েছে । এটা সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা । মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল । পুলিশ কিছুই করতে পারেনি । জাতীয় সড়ক 11 ঘণ্টা অবরোধ মানে কী সাংঘাতিক প্রভাব পড়তে পারে, তা অনুমান করা সম্ভব নয় । পুলিশ কোনও এফআইআর করেনি । একজন ব্যাক্তি এই ব্যাপারে একটা এফআইআর করেছেন ।’’
তাঁর অভিযোগ, কলকাতা পুলিশের একটা পোস্টে পথ অবরোধ তুলে নেওয়ার কথা দায়সারা ভাবে উল্লেখ করা হয় ৷ কিন্তু এই ঘটনাকে তিনি জাতীয় সম্প্রীতির উপর ভয়ানক আশঙ্কার বলে মন্তব্য করেছেন ৷ তিনিও এনআইএ তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন ৷ তাঁর দাবি, পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলে হাজার হাজার মানুষ কয়েক মিনিটের মধ্যে জমায়েত হতে পারে না । এর তদন্ত হওয়া দরকার ৷ উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন তসলিমা নাসরিনের লেখা একটি বইয়ের বিরুদ্ধে পার্ক সার্কাসে বিক্ষোভের ঘটনার কথা ৷ সেদিনের সেই বিক্ষোভ থামাতে সেনার সাহায্য নিয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার ৷
আরেক মামলাকারী আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল বলেন, "নির্দিষ্ট ধর্মের লোকজনের ঘর বাড়িতে বাঙচুর করা হয়েছে । মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে ।’’ অন্য এক মামলাকারী আইনজীবী সুবীর সান্যাল জানান, মুর্শিদাবাদে মিষ্টির দোকানে ভাঙচুর করা হয়েছে । গোটা রাজ্যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে । পার্টি অফিস ভাঙচুর হয়েছে । রাস্তা অবরোধ, থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে । দোকানপাট ভাঙচুর, আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
অন্যদিকে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেন ৷ পরিবর্তে তিনি রাজ্য এই নিয়ে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার খতিয়ান তুলে ধরেছেন ৷ তিনি জানান, রাজ্যে 10 জুন পর্যন্ত 214 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । 26টি এফআইআর দায়ের হয়েছে । ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে হাওড়া, বেলডাঙা, রেজিনগর, শক্তিপুরে । লালগোলা এক্সপ্রেসে পাথর ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ । শেষ 36 ঘণ্টায় তেমন অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি । তাঁর দাবি, অন্য রাজ্যে এই ইস্যুতে অনেক বেশি বিক্ষোভ হচ্ছে ৷
তিনিও তসলিমা নাসরিনের প্রসঙ্গ টানেন ৷ জানান, তসলিমার নাসরিনের বইয়ের ঘটনায় টানা দু’দিন শহরের কেন্দ্রে প্রতিবাদ আন্দোলন চলছিল । সেই কারণে সেনা নামানো হয়েছিল ।
তখন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব জানতে চান, ‘‘পাবলিক প্রাইভেট সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে । সেই ভিত্তিতে আপনারা রিকভার করতে পারবেন তো ?’’ উত্তরে অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে ৷
আরও পড়ুন : Calcutta High Court: গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করেছে প্রশাসন! শুভেন্দু-সুকান্তকে মামলার অনুমতি দিল আদালত