কলকাতা, 26 জুলাই : এসএসকেএম হাসপাতাল (SSKM Hospital), কয়েক বছর আগেও এই হাসপাতাল ছিল পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ৷ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে এই হাসপাতালেই সবচেয়ে ভালো মানের চিকিৎসা পাওয়া যায় বলেই মত সাধারণ রোগী থেকে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের ৷
কিন্তু হাইপ্রোফাইল এই হাসপাতালকে গত রবিবার কাঠগড়ায় তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) ৷ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তরা তদন্তের হাত থেকে বাঁচতে কেন বারবার ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিচ্ছেন, সেই প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি ৷ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ এসএসকেএমের সুনাম খারাপ করল বলেই মনে করছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক শারদ্বত মুখোপাধ্যায় ৷
তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য সবথেকে যেটা খারাপ হল বিচারপতি পর্যন্ত এই হাসপাতালের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন । যার কারণ যত দিন যাচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতাল ফাইভ স্টার আসামিদের গা ঢাকা দেওয়ার জায়গা হয়ে যাচ্ছে ।’’ তিনি যা বলছেন, আদালতও তার পর্যবেক্ষণে একই কথা জানিয়েছে ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন দুর্নীতি কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতা, তাঁদের অধিকাংশই এসএসকেএমে ভর্তি হয়েছেন ৷ জামিন পাওয়ার পর আর তাঁদের কোনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে দেখা যায়নি ৷ বিশেষ করে গত বছর নারদ কাণ্ডে (Narada Case) ধৃত ফিরহাদ হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় হেফাজতে থাকাকালীন এসএসকেএম হাসপাতালেই ভর্তি থেকেছিলেন ৷
অন্যদিকে গরুপাচার মামলা (Cattle Smuggling Case), ভোট পরবর্তী হিংসা (Post Poll Violence) মামলায় সিবিআইয়ের নোটিশ পাওয়ার পরই এসএসকেএমে ভর্তি হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল (TMC Leader Anubrata Mandal) ৷ বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিল যে সিবিআইয়ের (CBI) জেরার হাত থেকে বাঁচতেই অনুব্রত এই কৌশল নিয়েছেন ৷
সেই একই কৌশল নেওয়ার অভিযোগ ওঠে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের (Bengal Minister Partha Chatterjee) বিরুদ্ধে ৷ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে (Teachers Recruitment Scam) গ্রেফতার হওয়ার পর পার্থও এসএসকেএমে ভর্তি হয়েছিলেন ৷ যার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ইডি ৷ তখনই আদালতের তরফে এই পর্যবেক্ষণ করা হয় মামলার শুনানিতে ৷
1770 সালের আশপাশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে এই হাসপাতাল তৈরি হয় ৷ তখন নাম ছিল পিজি বা প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতাল ৷ পরে নাম পরিবর্তন করে এসএসকেএম হয়৷ আড়াইশো বছরে বহু স্বীকৃতি এসেছে এই হাসপাতালে ৷ যা নিয়ে চিকিৎসক শারদ্বত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এসএসকেএম হাসপাতাল, এটা কিন্ত শুধু একটা বাড়ি বা ইমারত নয় । পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসা স্বার্থ বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এসএসকেএম হাসপাতালের গুরুত্ব অন্যতম । তার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিকও বটে । এখানকার চিকিৎসকরা দিনের পর দিন চিকিৎসা বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন । তার প্রধান কারণ হল এখানে প্রত্যেকটা রোগের খুব ভালো চিকিৎসা হয় ৷’’
কিন্তু বর্তমানের পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে এসএসকেএমের চিকিৎসা পরিষেবার উপর পড়ছে বলেও তিনি মনে করেন ৷ ড. শারদ্বত মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এদের জন্য সত্যিকারের রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না । তাই উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও তা কাজে লাগছে না । প্রভাবশালীরা হাসপাতালে ভর্তি হলে তখন তাদের জন্য সব চিকিৎসকই ব্যস্ত হয়ে যায় ।’’
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, একজন চিকিৎসকের কাছে তো সব রোগীই সমান৷ তাহলে কেন এই পরিস্থিতি ? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ওই চিকিৎসক সরাসরি আঙুল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) দিকে ৷ তাঁর দাবি, প্রভাবশালীদের চিকিৎসা না করলে বদলির হুমকি দেওয়া হচ্ছে ৷ একজন ডাক্তার বিধায়ক ও ডাক্তার সাংসদই হুমকি দেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘এর ভয়েই ডাক্তাররা ওই বিচারাধীন আসামির চিকিৎসার নাটক করতে বাধ্য হন । এখানে ডাক্তারদের কোনো দোষ নেই । তাঁরা নিজেদের জান, প্রাণ এবং চাকরি বাঁচাতে এই কাজ করতে বাধ্য ।’’
আরও পড়ুন : Partha Chatterjee: নির্দেশের অংশ সংশোধনের আর্জি, পার্থর আবেদনে সাড়াই দিলেন না বিচারপতি