কলকাতা, 31 অগাস্ট : 14 অগাস্ট 2019 । হাসতে হাসতে BJP-তে গেলেন তিনি । সঙ্গে 'বিপদের বন্ধু' । সাংবাদিক বৈঠকে সর্বসমক্ষে বললেন, "যা কাজ দেবে তাই করব । শর্ত নিয়ে যোগদান করছি না । পদও চাই না । শুধু মন দিয়ে রাজনীতিটা করতে চাই ।"
কাট টু । 31 অগাস্ট 2019 । ঘনিষ্ঠ মহলে শোভন চট্টোপাধ্যায় বলছেন, "BJP থেকে নিষ্কৃতি চাই ।"
মাত্র 15 দিনেই ভোলবদল কেন ? রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে কি মানিয়ে নিতে পারছেন না একদা মমতার প্রিয়পাত্র শোভন চট্টোপাধ্যায় ? শোনা যাচ্ছে, 'বিপদের বন্ধু' বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কেউ কিছু বললেই তিনি রেগে যাচ্ছেন । আগে তৃণমূল নেতা, নেত্রীদের 'টিপ্পনি' সহ্য করতে পারেননি । ক্ষুব্ধ শোভন দলই ছেড়ে দেন । আশা করেছিলেন, BJP-তে এসে সময় ফিরবে ।
কোথায় কী ? শোভন এলেন । এলেন বৈশাখিও । মাঝে হঠাৎই চলে এলেন দেবশ্রী রায় । রায়দিঘির বিধায়ক তথা শোভনের 'অনেক পুরোনো বন্ধু' । বর্তমানে অবশ্য তাঁদের বন্ধুত্ব নেই বললেই চলে । দিল্লির সদর দপ্তরে দেবশ্রীকে দেখেই বেঁকে বসলেন দু'জন । বলে দিলেন, "দেবশ্রী এলে আমরা যোগ দেব না ।" বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেবশ্রীকে দলে জায়গা না দিয়েই ফেরত পাঠায় । শোনা যাচ্ছিল, দেবশ্রীকে BJP-তে যোগদান করাতে উদগ্রীব ছিলেন রাজ্য নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার । যদিও তিনি এবিষয়টি অস্বীকার করেন ।
এর মাঝেই দিন কাটছিল । কলকাতা ফিরলেন শোভন-বৈশাখি । রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠকও করলেন । কিন্তু, ভাষায় ভাষায় শুনছিলেন, দেবশ্রী আসছে দলে । তারপর থেকে মুখ দিয়ে রা কাটেননি । রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য চেষ্টা চালাচ্ছিল 'রাগ' কমানোর ।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র আবাসনে একটি বৈঠক হয় । সেখানে উপস্থিত ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়, বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেনন (সহকারী পর্যবেক্ষক) ও জয়প্রকাশ মজুমদার । বৈঠকে দু-এক কথাও শোনান কৈলাস । সূত্রের খবর, তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যে ছিলেন বৈশাখি । কৈলাস মনে করেন, দেবশ্রীকে দলে ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন বৈশাখি । সেই বাধা আর মানা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন ।
কৈলাসের বাক্য বিনিময় পছন্দ হয়নি শোভনের । ঘনিষ্ঠরা বলছেন, "বন্ধুর অপমান সহ্য করতে পারেন না শোভন । দিদিকেও ছেড়েছেন । কৈলাসদার কাছ থেকেও নিষ্কৃতি চেয়ে এসেছেন । বলেছেন, অমর্যাদা নিয়ে থাকতে চাই না ।" কার অমর্যাদা ? ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, বৈশাখির অমর্যাদাই শোভনের অমর্যাদা ।
শোভন-বৈশাখি দল ছেড়ে দেবেন ? এবিষয়ে ভাবতেই রাজি নন রাজ্য BJP-র সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু । তিনি বলেন, "আমরা কাউকে ধরে-বেঁধে আনিনি । তাড়িয়েও দিতে চাইনি । প্রত্যেককে সম্মান দিই । পার্টির কাছে উনি এবিষয়ে কিছু বলেননি । পার্টিতে কেউ চাকরি করতে আসেনি । প্রত্যেককে স্বাগত । শোভনদা ও বৈশাখিদিকে পার্টি থেকে বের করতে রাজি নই । কেউ যদি দল ছাড়তে চায় ছাড়তে পারে । পার্টি কারোর থেকে ছোটো নয় । আমাদের পার্টির কাছে সবার আগে দেশ, তারপর পার্টি, শেষে ব্যক্তি ।"
দেবশ্রী রায় কি BJP-তে যোগ দিচ্ছেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে সায়ন্তন বলেন, "উনি যদি BJP-তে যোগ দেন, তা হলে কেন নেব না ? আমাদের সঙ্গে তো ওঁর শত্রুতা নেই । বন্ধুত্বও নেই ।"