কলকাতা, 10 অক্টোবর : কংগ্রেসের সভাপতি পদের নির্বাচনে (Congress President Election) সম্মুখসমরে কংগ্রেসের দুই সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গে (Mallikarjun Kharge) ও শশী থারুর (Sashi Tharoor) ৷ এই দু’জনের মধ্যে মল্লিকার্জুনের পক্ষেই থাকবে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস ৷ প্রকাশ্যে নেতারা এই নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটলেও, এটাই বিধানভবনের মনোভাব বলেই সূত্রের খবর ৷ ওই সূূত্র বলছে যে শশী থারুরকেও স্বাগত জানানো হবে ৷
কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচনে প্রচারে সোমবার কলকাতায় আসেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মল্লিকার্জুন খাড়গে । প্রদেশ কংগ্রেস রাজ্য দফতর বিধান ভবনের দলীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মিনিট কুড়ি বৈঠক করেন তিনি । সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ খাড়াগে সমর্থনের পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন । ঠিক তেমনই, প্রদেশ কংগ্রেসের রাজ্য ও জেলাস্তরের একাধিক নেতাও খাড়গেকে সমর্থনের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন ।
এদিন বেলা 12টা নাগাদ বিধান ভবনে আসেন খাড়গে ৷ তাঁকে স্বাগত জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী, কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, নেপাল মাহাতো, অসীম সাহা-সহ একাধিক জেলার সভাপতি । বহু ব্লক সভাপতিও উপস্থিত ছিলেন ।
দলীয় নির্বাচনী আইন মেনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Chowdhry) খাড়গের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না । এমনকি সাংবাদিক বৈঠকেও মল্লিকার্জুনের সঙ্গে অনুপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে তাঁকে । সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বৈঠকের মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না ।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচনে প্রদেশ কংগ্রেসের ভোটব্যাংক মল্লিকার্জুনের দিকেই ঝুঁকছে বেশি । প্রদেশ কংগ্রেসের 543 জন এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন । যাঁদের মধ্যে অধিকাংশ রাজ্য সদর দফতর অতুল্য ঘোষ কক্ষে নির্বাচনী বৈঠকে মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ।
বৈঠক শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ইভিটি ভারতের সঙ্গে আলাপচারিতায় খাড়গেকে সমর্থনের পক্ষে একাধিক যুক্তি দিয়েছেন । যেমন, মল্লিকার্জুন খাড়গে এমনই একজন রাজনীতিবিদ যিনি ব্লক সভাপতি পদ থেকে শুরু করে রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা হয়েছেন । দীর্ঘ 55 বছরের রাজনৈতিক জীবনে ন’বারের বিধায়ক দু’বারের সাংসদ । সর্বভারতীয় কংগ্রেসের উচ্চতম কমিটিতেও তিনি আছেন ।
এমনকি তিনি নিজেও কংগ্রেস সভাপতি পদে রাহুল গান্ধিকে (Rahul Gandhi) চেয়েছিলেন । কিন্তু গান্ধি পরিবারের কেউ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় শেষ পর্যন্ত তাঁকেই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হয়েছে । তাছাড়া তিনি গান্ধি পরিবারের ঘনিষ্ঠ ৷ রাহুল গান্ধির ঘনিষ্ঠ বৃত্তেই তাঁকে দেখা যায় ৷ তাই খাড়গের দিকেই সমর্থন থাকবে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতাদের ৷
এদিন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠক করেন খাড়গে ৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন শেষে উদয়পুর ঘোষণাকে বিষয়টি বাস্তবায়িত করা হবে । মহিলা, তফশিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্তদের দলীয় সংগঠনে 50 শতাংশ সংরক্ষণ করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হবে । এক ব্যক্তি পাঁচ বছরের বেশি কোনও পদে থাকতে পারবেন না । এটা নিজেদের ঘরের নির্বাচন । যা কিছু হবে সব নিজেরাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে । 'আমি' নই 'আমরা' সকলে মিলে কাজ করব । মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সবাইকে লড়তে হবে । বেকারত্ব নিয়ে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে, আটা, দুধ, ঘি এর ওপর জিএসটি লাগু নিয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, সবাই মিলে মোদি-শাহের বিরুদ্ধে লড়ব ।"
এদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর বক্তব্য, কংগ্রেসের জাতীয় নির্বাচনী নিয়মবিধি অনুযায়ী, খাড়গেকে এদিন স্বাগত জানানো হয়েছে । আগামিকাল অর্থাৎ 11 অক্টোবর শশী থারুরের কলকাতায় নির্বাচনী প্রচারে আসার কথা থাকলেও মুলায়ম সিং যাদবের মৃত্যুতে তিনি আসতে পারছেন না । তার সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে ৷
আগামী 14 অক্টোবর নির্বাচনী প্রচারে শশী কলকাতায় আসবেন বলে সূত্রের দাবি । এ বিষয়ে অধীর রঞ্জন চৌধুরীর বক্তব্য, নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী তিনি যেদিনই আসুন না কেন, প্রদেশ কংগ্রেস তাঁকে (শশী) স্বাগত জানাবে ।
আরও পড়ুন : কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচনের প্রচারে কলকাতায় মল্লিকার্জুন খাড়গে