কলকাতা, 2 অক্টোবর: নতুন ফিল্মের হল না পাওয়া, প্রতিবাদী নাটকের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাওয়া নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক হয়ে থাকে (Chandan Sen on intellectuals)। এবং এই সমস্যার পেছনে অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায় শাসক-বিরোধী দ্বন্দ্ব ৷ শাসক ঘনিষ্ঠ না হওয়ার কারণেও এ ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ ওঠে । আর এ বিষয়েই ইটিভি ভারতের এক প্রশ্নের উত্তরে নাট্যকার-অভিনেতা চন্দন সেন বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন । তাঁর বক্তব্য, রাজার অনুগ্রহ চাওয়া শিল্পীর সংখ্যা সব সরকারের আমলেই থেকেছে । তা সে বামফ্রন্ট সরকার হোক কিংবা তৃণমূল সরকার । আর এর ফলেই শিল্প-সংস্কৃতিতে বাধার সৃষ্টি হয়েছে । নেমে এসেছে আক্রমণ । যা কখনওই কাম্য নয় । কারণ যে কোনও শিল্পী, অভিনেতা বা সংস্কৃতি জগতের মানুষের কাজ প্রতিস্পর্ধার বলেই তাঁর যুক্তি (Chandan Sen)।
শনিবার ছাত্র সংগ্রাম পত্রিকার শারদ সংখ্যার উদ্বোধনে এসে চন্দন সেন আরও বলেন, "আমি সর্বক্ষণ ভয়ে থাকি, নতুন ছেলে মেয়েরা আমাকে দেখে হাসবে না তো ৷" ভয়ের কারণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অভিনেতা বলেন, সংস্কৃতি জগতে মানুষের যে প্রতিস্পর্ধা তা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে । এর ফলে শিল্প সাহিত্য বা সমাজে বিশালাকার আক্রমণ নেমে আসছে । পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা হচ্ছে । 100টার উপরে ভাটনগর পুরস্কার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস মুছে ফেলে নতুন ইতিহাস গড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে । ধর্মীয়ভাবে নতুন ইতিহাস লেখার চেষ্টা হচ্ছে । এগুলি শুধু সাংস্কৃতিক আক্রমণ নয়, রাজনৈতিক আক্রমণের সূত্র ধরে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপরে আক্রমণ । বাঙালি পরিচয়ের উপর আক্রমণ ।"
আরও পড়ুন: বিদেশে সম্মানিত চন্দন সেন, রাশিয়ার ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে মিলল শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার
কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় শাসকের আমলে নানা দুর্নীতি ও অপশাসনের অভিযোগ উঠেছে ৷ তার বিরুদ্ধে শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের সেভাবে প্রতিবাদী আন্দোলন বা সরব হতে দেখা যাচ্ছে না কেন ? এই প্রশ্নের জবাবে চন্দন সেন বলেন, "রাজানুগ্রহ । পৃথিবী সৃষ্টির আদি থেকেই রাজানুগ্রহ ছিল । এখনও আছে । আগামীতেও থাকবে । কিছু মানুষ আছেন যাঁরা সর্বক্ষণ ভয়ে থাকেন রাজানুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হওয়ার । আর ঠিক এ কারণেই প্রতিবাদ আন্দোলনে সরব হওয়া থেকে শিল্পী সংস্কৃতি জগতের মানুষ পিছিয়ে পড়ছেন ।"
চন্দন সেনের দাবি তিনি বুদ্ধিজীবী নন । এ বিষয়ে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেন, "আমি শ্রমিক । আমি বুদ্ধিজীবী নই । কিন্তু সর্বক্ষণ ভয়ে থাকি বা ঘরে ফিরে ভয়ে থাকি বাড়ির লোক কিংবা আমি থিয়েটার রুমে রিহার্সাল রুমে ঢুকলে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আমাকে দেখে হাসবে না তো ?তাঁরা হেসে বলবে না তো যে, আপনার মতো বা আপনাদের মতো কিছু লোকজনের জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়েছে ৷ আমাদের সংস্কৃতি নষ্ট হয়েছে, বাঙালির ঐতিহ্য নষ্ট হয়েছে !"