কলকাতা, 23 অগস্ট: কথায় বলে শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু । সেই তত্ত্বে ভর করেই এ বার দিলিপের প্রতি সমব্যথী তৃণমূল । দলের মুখপত্র জাগো বাংলার পাতায় তাঁর প্রতি সমবেদনা ধরা পড়ল সম্পাদকীয় কলমে (TMC on Dilip Ghosh)। বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে সামনে রেখে এ বার রাজনীতির মঞ্চে অবতীর্ণ হল তৃণমূল (TMC Mouthpiece on Dilip)।
জাগো বাংলার সম্পাদকীয় কলমে আজ কী লেখা হয়েছে দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh) নিয়ে ? লেখা হয়েছে, 'বিজেপিতে এখন ঘোর কোন্দল ।' বরাবরই সংবাদমাধ্যমে থাকা দিলীপ ঘোষ এখানে আলোচনায় । আরও লেখা হয়েছে, কে কার মুখ দেখতে চাইছেন, আর কে কার মুখ দেখতে পছন্দ করছেন না এ এখন পরিষ্কার । দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি, বর্তমান সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি এবং ভোটের লড়াইয়ে সফল দিলীপ ঘোষকে কোণঠাসা করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে । হেস্টিংসের পার্টি অফিসে বৈঠক চলছে, তাঁর থাকার কথা অথচ তাঁকে ডাকা হচ্ছে না । তাঁকে বৈঠকের ভুল সময় দেওয়া হয়েছিল । কে করছেন ? অমিত মালব্য ।'
দিলীপ ঘোষের পক্ষে বলতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নিশানায় যে একমাত্র বিজেপির আইটি সেলের নেতা অমিত মালব্য এমন ভাবলে ভুল হবে । এর পাশাপাশি এ দিন আক্রমণ করা হয়েছে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও । এই নিবন্ধে আবার তার জন্য রয়েছে চোখাচোখা বিশেষণও । সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী প্রসঙ্গে ঠিক কী লেখা হয়েছে ! লেখা হয়েছে, 'কার প্ররোচনায় করছেন (অমিত মালব্য) ? বর্তমান রাজ্য সভাপতি । তিনি সবে আড়াই-তিন বছর রাজনীতিতে এসেই রাজ্য সভাপতি বনে গিয়েছেন । ফলে ধরাকে সরা জ্ঞান করে দিলীপের পিছনে হাত ধুয়ে লেগেছেন । যতবার ভোট এসেছে ততবার হেরেছেন । জমানত জব্দ হয়েছে । তারপরেও জ্ঞানচক্ষু উন্মীলন হয়নি । সুকান্তর সঙ্গে আবার দলবদলু, গিরগিটি পেগাসাস অধিকারীর ব্যাপক লড়াই । কে বড় ? রাজ্য সভাপতি না পরিষদীয় নেতা ? সে দেখাতে গিয়ে দলের মধ্যে 17টা গোষ্ঠী তৈরি করেছেন । নিট ফল বাংলার রাজনীতিতে এরা অপাংক্তেয় হয়ে দিল্লির জেঠুদের কাছ থেকে তদন্তকারী এজেন্সি ধার নিয়েছে । কিন্তু সে দিয়ে কতদিন চলবে ? সে রসদ ফুরোলে বিজেপির খালি কলসিটা টং-টং আওয়াজ করবে ।'
আরও পড়ুন: হেস্টিংসে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে অনুপস্থিত দিলীপ ঘোষ, তুঙ্গে জল্পনা
মোটের উপর এখন প্রশ্ন, রাজ্যের শাসক দলের কী এমন প্রয়োজন পড়ল, যাতে বিরোধী দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে হল । রাজনৈতিক মহল এক একজন, একে একেক ভাবে ব্যাখ্যা করছে । বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায় এই ঘটনায় দিলীপ ঘোষকে খুশি করার একটা ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন । এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রতি দলীয় নেতৃত্বের বঞ্চনা রয়েছে, এমনটা দেখিয়ে তাঁকে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে টানার এটা একটা কৌশল হতে পারে । অন্যদিকে এমনও হতে পারে বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে পরস্পরের বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে যে দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের প্রতি সমালোচনার ঝাঁঝ যাতে কমে তারও প্রয়াস এটা হতে পারে ।
এ দিকে মঙ্গলবারও দিলীপ ঘোষ ক্লাবগুলিকে টাকা দেওয়া নিয়ে সরকারের সমালোচনা করতে ছাড়েননি । এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠতেই পারে শাসকদলের দিলীপের পক্ষ নেওয়ার কৌশল আদৌও কতটা কার্যকরী হতে পারে !