কলকাতা, 3 ডিসেম্বর : নয় মাস আগেই ব্রিজ তৈরি হয়ে যেত ৷ রেলের গাফিলতিতেই কাজে দেরি হয়েছে ৷ মাঝেরহাট ব্রিজ উদ্বোধনে গিয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি আরও বলেন, "এই ব্রিজের জন্য কেন 34 কোটি টাকা নিয়েছে রেল ? ব্রিজের অনুমতি দেওয়া ও ভাঙচুরের বিষয়টি দেখতে রেল 34 কোটি টাকা নিয়েছে৷ পোর্ট ট্রাস্ট 77 লাখ টাকা নিয়েছে৷ টালা ব্রিজ ভাঙার জন্যও 55 কোটি টাকা নিয়েছে রেল ৷ প্রশ্ন করুন কেন টাকা নেওয়া হয়েছে ৷"
মাঝেরহাট ব্রিজ উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে ব্রিজ তৈরির জন্য রেলের টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে তুলোধনা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "যারা এত বড় বড় ভাষণ দিয়ে গেলেন, তাঁদের যদি আমি জিজ্ঞাস করি, এই ব্রিজ করার জন্য রেল কেন আমাদের থেকে 34 কোটি টাকা নিয়েছে৷ কার টাকা নিয়েছে? কেন নিয়েছে জিজ্ঞেস করুন? কাজটা করতে নয় মাস দেরি করেছে, সঙ্গে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে 34 কোটি টাকা নিয়েছে এই ব্রিজের অনুমতি ও ভাঙচুরের বিষয়টি দেখার জন্য ৷ এরাই আবার বড় বড় কথা বলে৷"
এদিন রেলের পাশাপশি ব্রিজ তৈরিতে পোর্ট ট্রাস্টও 77 লাখ টাকা নিয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, "পোর্টের বড় বড় গাড়ি, ট্রাক যাচ্ছে রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে৷ কিন্তু আমরা সব রক্ষণাবেক্ষণ করি৷ পোর্ট ট্রাস্টও 77 লাখ টাকা নিয়েছে৷ যেন মনে হচ্ছে ব্রিজটা আমার ঘরে নিয়ে যাচ্ছি৷" এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী টালা ব্রিজের প্রসঙ্গ তোলেন৷ তিনি বলেন, টালা ব্রিজ ভাঙার জন্যও 55 কোটি টাকা নিয়েছে রেল৷ এরপরই মঞ্চ থেকে জনগনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "বুঝতে পারছেন! দেওয়ার ক্ষমতা নেই ৷ ভাত দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিল মারার গোষাই ৷"
দ্বিতীয় হুগলি সেতুর আদলে তৈরি করা হয়েছে মাঝেরহাট ব্রিজ ৷ পুরানো ব্রিজের তুলনায় দৈর্ঘে্য বড়৷ আগের মাঝেরহাট ব্রিজ ছিল দুই লেন৷ নতুন ব্রিজ চার লেনের৷ বৃদ্ধি করা হয়েছে ভাড় বহনের ক্ষমতাও৷ আগে যেখানে ব্রিজের ভাড় বহনের ক্ষমতা ছিল 155 মেট্রিকটন ৷ নতুন ব্রিজের ভাড় বহনের ক্ষমতা 355 মেট্রিকটন৷ ব্রিজটি দৈর্ঘে্য লম্বায় 650 মিটার ৷ এই ব্রিজ তৈরি করতে 311.76 কোটি টাকার খরচ হয়েছে বলে আজ জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি আরও বলেন, পুরোটাই রাজ্য সরকারের টাকা৷
সম্প্রতি মাঝেরহাট ব্রিজ চালুর দাবিতে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা ৷ বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়৷ বিক্ষোভের জেরে তাঁকে কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে বলে ওইদিন দাবি করেন তিনি ৷ আজ মাঝেরহাট ব্রিজ উদ্বোধনে এসে নাম না করে ওই দিনের ঘটনা নিয়েও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি নতুন ব্রিজের নামকরণ আগেই করেছিলেন ৷ আজ ফের একবার সেই নাম মনে করিয়েদেন তিনি ৷ তিনি বলেন, সুভাষচন্দ্র বসুর নামে আগেই অনেক কিছু রয়েছে রাজ্যে ৷ আগামীদিনে আরও অনেক কিছু হবে ৷ মাঝেরহাট ব্রিজের নাম করা হয়েছে "জয় হিন্দ" ব্রিজ৷
2018 সালের 4 সেপ্টেম্বর ভেঙে পড়েছিল মাঝেরহাট ব্রিজ । এরপর সম্পূর্ণ নতুন করে মাঝেরহাট ব্রিজ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্যের পূর্ত দপ্তর । ফলে আশা করা হচ্ছিল, পুজোর আগে চালু হবে নতুন এই মাঝেরহাট ব্রিজ । কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ায় ব্রিজ চালুর বিষয়ে সংশয় দেখা দেয় । লকডাউনের মেয়াদ বাড়ায় সেই সংশয় আরও বাড়ে । অবশেষে দুই বছর তিন মাস পর চালু হল মাঝেরহাট ব্রিজ ৷