কলকাতা, 6 জুন : রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা ৷ আর তার জন্য আসন্ন বাদল অধিবেশনে সংশোধনী বিল নিয়ে আসতে চলেছে রাজ্য সরকার ৷ আগেই মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ আগামী 10 জুন থেকে রাজ্য বিধানসভার বাদল অধিবেশন বসতে চলেছে ৷ মনে করা হচ্ছে সেখানেই আচার্য হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ সংক্রান্ত সংশোধনী নিয়ে আসা হতে পারে ৷ তবে, সংশোধনীটি বিধানসভায় নিয়ে আসার আগেই এই বিলের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে (Question is Being Raised Over Amendment Bill to Make CM as Chancellor) ৷ প্রশ্ন উঠছে, বিল রাজ্য বিধানসভায় পাস করালেও তা কি আইনি স্বীকৃতি পাবে ?
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ, তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমল মুখোপাধ্যায় সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ নিয়ম অনুসারে যে কোনও বিল পাশ করার আগে তা মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন ৷ মন্ত্রিসভাই ঠিক করে কবে বিল বিধানসভায় পেশ করা হবে ? এর পর এই বিলের উপর আলোচনা হয় বিধানসভায় ৷ তখন বিরোধী বিধায়করা চাইলে এর উপর সংশোধনী আনতে পারে ৷ অথবা তারা এই বিলকে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠানোর জন্য দাবি তুলতে পারেন ৷ এক্ষেত্রে সরকারপক্ষ চাইলে বিরোধীদের দাবি মেনে বিল স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠাতে পারে ৷ উভয়পক্ষের মত না মিললে বিরোধীপক্ষ ভোটাভুটি চাইতে পারে ৷ ভোটাভুটিতে সরকারপক্ষ জিতলেও এই বিল যে আইনে পর্যবসিত হবে, তার কোনও মানে নেই ৷ কারণ, এর পর এই বিল যাবে রাজ্যপালের কাছে ৷ এ ক্ষেত্রে রাজ্যপাল চাইলে এই বিলে সই করতে পারেন অথবা স্বাক্ষর না করে সরকারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারেন ৷ চাইলে রাজ্যপাল সরকারের কাছে বিল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ব্যাখ্যাও চাইতে পারেন ৷ ব্যাখ্যা মনঃপূত না হলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন রাজ্যপাল ৷’’
প্রশ্ন হল, মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার জন্য যে সংশোধনী বিল বিধানসভায় আনা হচ্ছে, তা রাজ্যপালের কাছে গেলে তিনি কি তা পাশ করাবেন ? কারণ, সেই সংশোধিত বিল আইনে পরিণত হলে রাজ্যপালকে আচার্যের গদি ছাড়তে হবে ৷ যা তিনি চাইবেন না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷ এমনকি সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেছেন, ‘‘যেই রাজ্যপাল হন না কেন রাজ্যপালের অধিকার খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে ৷ এভাবে রাজ্যপালের অধিকার খর্ব করা যায় না ৷ আমার কাছে বিলের কাগজপত্র এলে আমি গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখব ৷’’ তিনি এও জানান, ‘‘রাজ্য সরকার অর্ডিন্যান্স আনার কথা বলছে ৷ সে ক্ষেত্রেও রাজ্যপাল সই না করলে তা পাশ হবে না ৷’’
আরও পড়ুন : CM as Chancellor: এবার কৃষি-স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যও মুখ্যমন্ত্রী
এখানেই প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য সরকার আসন্ন অধিবেশনে যে বিল নিয়ে আসার কথা বলছে তার ভবিষ্যৎ কী ? সংবিধান বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, যে কোনও বিল রাজ্যপাল যদি একবার ফিরিয়ে দেন, তা সরকার পুনরায় বিধানসভায় পাশ করিয়ে রাজ্যপালের কাছে পাঠালে রাজ্যপাল তাতে সই করতে বাধ্য ৷ কিন্তু, রাজ্যপাল যদি সে ক্ষেত্রে বিলটি ফিরিয়ে না দিয়ে দীর্ঘদিন আটকে রাখেন ! সে ক্ষেত্রে বিলের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে ৷ ঠিক যেভাবে সম্প্রতি হাওড়া পৌরনিগম বিল রাজ্যপাল আটকে রেখেছেন ৷ একইভাবে যদি মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার ক্ষেত্রেও তা করা হয়, তাতে অসুবিধায় পড়তে পারে রাজ্য সরকার ৷ এক্ষেত্রে সংবিধানে রাজ্যপালকে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি, যার মধ্যে তাঁকে সই করতে হবে ৷ যদি রাজ্যপাল বিল বিবেচনার নামে অনন্তকাল ফেলে রাখেন, তাহলেও সরকার এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারবে না ৷