কলকাতা, 21 সেপ্টেম্বর : কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত কৃষি বিলের বিরুদ্ধে আজ রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান রাজ্যের যুব কংগ্রেসের সদস্যরা । দীর্ঘক্ষণের এই বিক্ষোভে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাস্তা । সপ্তাহের প্রথম দিনে অফিস ছুটির পর বাড়ি যেতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন নিত্যযাত্রীরা।
কৃষি বিল নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয় রাজভবনের প্রধান ফটকের সামনে । প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ করেন যুব কংগ্রেসের কর্মীরা । দীর্ঘক্ষন পুলিশের সঙ্গে যুব কংগ্রেস কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয় । প্রায় 50 জন যুব কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেপ্তার করে লালবাজারের কেন্দ্রীয় লকআপে নিয়ে যাওয়া হয় । পরে অবশ্য তাঁদের জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয় ।
বিরোধীদের বক্তব্যকে নস্যাৎ করে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষক বিরোধী কৃষি বিলগুলির আইনে পরিণত করার চেষ্টা করছে । কৃষি বিলের ফলে রাজ্যের সমগ্র কৃষকরা কর্পোরেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে বলে মন্তব্য করেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভাপতি মহম্মদ শাদাব খান ।
রাজভবনের সামনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল দাহ করা হয় । যুব কংগ্রেস কর্মীরা খালি গায়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন । কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন কৃষি বিলের ফলে কৃষকের আত্মহত্যা বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা । বিরোধীদের মতামতকে উপেক্ষা করে, কেবলমাত্র গায়ের জোরে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন যুব কংগ্রেসের সভাপতি মহম্মদ শাদাব খান । তাঁর কথায়, "নরেন্দ্র মোদির হাতেই কৃষকদের গলায় ফাঁসির দড়ি পড়বে । নতুন কৃষি বিল চালু হলে আত্মহত্যা করবেন কৃষকরা । কর্পোরেট সংস্থা দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবে । কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবেন ।"
যদিও আজ এক ভিডিয়ো বার্তায় কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলির এহেন দাবি অমূলক বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী । বিরোধীরা বলছে, একবার এই বিল আইনে পরিণত হয়ে গেলে, ফসলের ন্যূনতম ন্যায্য মূল্য থেকে সরে যাবে সরকার । বদলে সেখানে আসবে আম্বানি, আদানির মতো বড় বড় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি । কিন্তু বিরোধীদের এই সব দাবিকে আজ আবারও উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী ।
আরও পড়ুন : "কৃষকদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয় পাচ্ছে বিরোধীরা", পালটা প্রধানমন্ত্রীর
বিরোধীদের পালটা আক্রমণ করে তিনি বলেন, "কৃষকদের উপর থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার ভয় পাচ্ছেন বিরোধীরা । মিথ্যা বলে ভুল বোঝানো হচ্ছে কৃষকদের ।" পাশাপাশি কৃষকরা যে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন না, সেই বিষয়েও আশ্বস্ত করেন । আবারও স্পষ্ট করে দেন, যে এই বিলগুলি কোনওভাবেই কৃষক বিরোধী নয় । তাঁর কথায়, অর্ডিন্য়ান্স চালু হওয়ার পর থেকে সরকারের কাছে যে তথ্য এসেছে তা থেকে স্পষ্ট, কৃষকরা অনেকক্ষেত্রেই উপকৃত হয়েছেন । মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও পশ্চিমবঙ্গে কৃষকরা যথেষ্ট পরিমাণে ডাল উৎপাদন করেছেন । গতবছরের তুলনায় 15-25 শতাংশ বেশি রোজগার হয়েছে এখানকার কৃষকদের ।
এ-প্রসঙ্গে আজ পরোক্ষভাবে কংগ্রেসকে তুলোধোনা করতেও ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী । বলেন , এরাই সেইসব লোক যাঁরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সংক্রান্ত স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ নিয়ে বছরের পর বছর বসে ছিলেন । তাঁদেরই আঁতে ঘা লাগছে বলে দাবি প্রধানমন্ত্রীর । প্রসঙ্গত, 2004 সালে UPA কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর আট সদস্যের একটি জাতীয় কমিশন তৈরি করা হয়েছিল, যাঁর কাজ কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা ।