কলকাতা, 13 জুলাই: বয়স 16 ৷ স্বপ্ন শিক্ষক হওয়ার। ভালোবাসে ফুটবল খেলতে। কিন্ত অল্প বয়সেই তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ ক্যানসার (Cancer Survivor Anish)। নাম অনিশ সান্যাল । রাজারহাট নারায়ণতলার বাসিন্দা ৷ প্রবল খরচার মধ্যেই চলছে তাঁর চিকিৎসা ৷
অনিশ সান্যাল দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া । জানুয়ারি মাস থেকে শারীরিক সমস্যার জন্য স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয় তাঁর । অনিশের মা টিনা দেবী জানিয়েছেন, "আমি দেখতাম শীতের মধ্যেও ও স্কুল থেকে এসে জামা কাপড় খুলে ফ্যান চালিয়ে বসে থাকতো । অসম্ভব গরম অনুভব করত অনিশ । খেতে চাইত না কিছু ।"
প্রথমে চিকিৎসক জানান, ওর বুকে জল জমেছে । চিকিৎসা শুরু হয় । বাগুইআটি এলাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হয় অনিশের । পরে চিকিৎসকরা জানতে পারেন আনিশের হার্ট এবং ফুসফুসের মাঝে একটি টিউমার রয়েছে । পরবর্তীকালে তা পরীক্ষা করে দেখা যায় সে টিউমারটি থেকে ক্যানসারে ছড়িয়ে পড়েছে শরীরে । পরবর্তীকালে চিকিৎসার জন্য অনীশকে নিয়ে যাওয়া হয় ভেলোরে । তবে সেখানেও চিকিৎসার কারণে প্রায় 10 লক্ষের ধাক্কা । অবশেষে আর্থিক সমস্যায় ভেলোরের চিকিৎসা থেকে পিছিয়ে আসেন অনীশের মা এবং দাদা । পরবর্তীকালে তাঁর ক্যানসারের চিকিৎসা হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে । এখনও তাঁর সাতটি কেমোথেরাপি সম্পন্ন হয়েছে । তবে কতটা সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে অনীশ, তা নিয়ে এখনও রয়েছে সংশয় ।
আরও পড়ুন: দেখেছেন মা-দিদার কষ্ট, ক্যানসার দিবসে চুল দান জঙ্গলমহলের শিক্ষিকার
অনীশের দু'টো ইচ্ছা, প্রথমত সে উচ্চমাধ্যমিক দেবে এবং দ্বিতীয়ত সে শিক্ষক হতে চায়। তবে এতোকিছুর মধ্যে থমকে গিয়েছিল অনীশের পড়াশোনা । আর্থিক অনটনের মাঝে শারীরিক অবস্থা সবমিলিয়ে বিপর্যয় নেমে এসেছিল অনীশের পরিবারের উপর । আর এবার সেই চিন্তারই পরিসমাপ্তি ঘটালেন অনীশের স্কুলের প্রধান শিক্ষক । নারায়ণ দাস বাঙ্গুর মেমোরিয়াল মাল্টি পারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া ৷ সম্প্রতি অনীশের বাড়ি গিয়ে তাঁর হাতে দ্বাদশ শ্রেণির বই তুলে দিয়ে আসেন । পাশাপাশি সপ্তাহের দু-তিন দিন তাঁকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি ৷ উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত তাঁর শিক্ষার যাবতীয় খরচ বহন করবেন প্রধান শিক্ষক নিজেই । সঞ্জয় বড়ুয়া জানিয়েছেন, অনীশ আমাদের স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে পড়তো । খুব ভালো ছাত্র ও । এখন ওর মধ্যে এক মারণ রোগ বাসা বেঁধেছে । তবে আমরা ওর বাড়ির লোককে বলছি তাঁরা যেন তাঁদের ছেলেকে সপ্তাহে দুইদিন থেকে তিনদিন স্কুলে নিয়ে আসে কিছুক্ষণের জন্য । আমি দায়িত্ব নেব । শিক্ষকরা আলাদা করে ওর ক্লাস নেবে ।