ETV Bharat / city

প্লেটলেট 5 হাজার, ব্রেনে রক্তক্ষরণ ; ক্যানসার আক্রান্ত অজ্ঞান রোগীর সফল অস্ত্রোপচার

রোগীর প্লেটলেট কাউন্ট মাত্র 5 হাজারে । ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়েছে ৷ অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে ৷ এমন রোগীর সফল অস্ত্রোপচার হল কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৷

ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Sep 17, 2019, 8:09 AM IST

কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর : অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ব্রেন থেকে রক্ত বের করতে হবে । অথচ, অ্যানেস্থেশিয়া দিয়ে রোগীকে অজ্ঞান করা যাবে না । কারণ, তিনি অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন । আবার, ক্যানসারে আক্রান্ত এই রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়া প্রয়োজন । অথচ, রোগীর জ্ঞান না ফিরলে তা দেওয়াও সম্ভব নয় । এর উপর রোগীর প্লেটলেট কাউন্ট নেমে এসেছে মাত্র 5 হাজারে । এর ফলে, যে কোনও মুহূর্তে রোগীর মৃত্যু হতে পারে । এই পরিস্থিতিতে রোগীকে প্রাণ বাঁচালেন চিকিৎসকরা । ওই রোগীর সফল অস্ত্রোপচার হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ।


বছর 18-র ওই যুবক মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা । সামাজিক কারণে তাঁর পরিচয় জানাতে চাননি চিকিৎসকরা । তবে তাঁরা জানিয়েছেন, অজ্ঞান অবস্থায় ওই যুবককে আনা হয়েছিল কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এমারজেন্সিতে । মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে তাঁকে এখানে রেফার করা হয়েছিল । ওই মেডিকেল কলেজ থেকে বলা হয়েছিল, ওই যুবকের ব্লাড ক্যানসার রয়েছে । তবে, সেখানে এর চিকিৎসার জন্য যথাযথ পরিকাঠামো না থাকার কারণে তাঁকে রেফার করা হয়েছে কলকাতায়‌‌ । কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল অঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান, মেজর (রিটায়ার্ড) চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "ওই যুবককে যখন আমাদের এখানে নিয়ে আসা হচ্ছিল তখন আচমকা সে অজ্ঞান হয়ে যায় । অজ্ঞান হওয়ার আগে ও জানিয়েছিল, ওর মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে ।" কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এমারজেন্সি থেকে যুবককে মেডিসিন বিভাগে ভরতি নেওয়া হয় । এরপর তাঁর সিটি স্ক্যান এবং রক্ত পরীক্ষা করানো হয় ।

ভিডিয়োয় শুনুন চিকিৎসকের বক্তব্য

চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে আমরা দেখতে পেলাম, ওই যুবক অ্যাকিউট লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত । তাঁর প্লেটলেটের পরিমাণ 5 হাজারে নেমে এসেছে । এই অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে আছে ।" তিনি বলেন, "অ্যাকিউট লিউকেমিয়ার জন্য দরকার কেমোথেরাপি । কিন্তু, এভাবে কোমায় থাকা রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়া যায় না । সাধারণভাবে, অস্ত্রোপচারের জন্য এই ধরনের রোগীকে অজ্ঞান করতে চান না অ্যানাস্থেশিস্টরা । নিউরো সার্জনরা তখন বললেন, এই রোগীকে এমনিতেই হয়ত হারাতে হবে আমাদের । তার থেকে আমরা একবার চেষ্টা করে দেখি ।" তিনি বলেন, "আনেস্থেশিস্টের উপস্থিতিতে এই রোগীকে অজ্ঞান না করে অর্থাৎ, আনাস্থেশিয়া ছাড়া এবং শুধুমাত্র অক্সিজেন দিয়ে তাঁর ব্রেনে অস্ত্রোপচার করা হয় । সিটি স্ক্যানে এই রোগীর ব্রেনে যে সাবডুরাল হেমাটোমা দেখা গেছিল অর্থাৎ, রক্তক্ষরণ হয়েছিল, সেই রক্ত বের করে দেওয়া হয় ।"

একই সঙ্গে চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "লিউকেমিয়ার চিকিৎসা হিসেবে আমরা সঙ্গে সঙ্গে স্টেরয়েড দেওয়া শুরু করি । এটা অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া । পাঁচ দিনের মাথায় এই রোগীকে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট থেকে জেনেরাল ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয় । এরপর লিউকেমিয়ার জন্য আরও কিছুদিন চিকিৎসা হয়েছে । এই রোগীকে সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে ।" তিনি বলেন, "লিউকেমিয়ার জন্য এখন এই রোগীর চিকিৎসা চলবে আরও দুই বছর ।" তিনি জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে যখন এই রোগীকে রেফার করা হয়েছিল, তখন এই রোগীর ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়নি । তখনও এই রোগীর জ্ঞান ছিল । কলকাতায় আসার পথে ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয় ।

ব্রেনে কেন রক্তক্ষরণ হয়েছিল? চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "প্লেটলেট কাউন্ট যেহেতু কমে গেছিল এই জন্য ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়েছিল । অ্যাকিউট লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত বোন ম্যারো ফেলিওর হয় । হঠাৎ প্রচুর পরিমাণে WBC-র ব্লাস্ট সেল উৎপাদন হওয়ার কারণে রেড ব্লাড সেল এবং প্লেটলেট অর্থাৎ অণুচক্রিকা যেটা আমাদের রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, এর পরিমাণ ভয়ংকর রকম ভাবে কমে যায় ।" তিনি বলেন, "এক্ষেত্রে অনেকের চোখে বিল্ডিং হয় ৷ ব্রেনে ব্লিডিং হয় ৷ অনেকের দাঁত দিয়ে ব্লিডিং হয় ৷ রক্ত বমি হয় ৷ কালো পায়খানা হয় ৷ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাল চাকা দাগ বের হয় । অণুচক্রিকা কমে যাওয়ার কারণে এসব হয় ।" তিনি বলেন, "বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব লিউকেমিয়ার প্রেজ়েন্টিং লক্ষণ হতে পারে। তবে এই প্রেজ়েন্টিং সিমটমসের সঙ্গে ইন্ট্রাকেনিয়াল হেমারেজে এই রোগীর ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল, এটা খুবই বিরল ।"


প্লেটলেট স্বাভাবিক থাকার কথা দেড় লাখ থেকে 30 লাখ ৷ সেটা ছিল পাঁচ হাজার । একথা জানিয়ে চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "এই অবস্থায় যে কোনও মুহূর্তে রোগীর মৃত্যু হয়ে যেতে পারত । এদিকে চিকিৎসা হিসেবে এই অবস্থায় প্লেটলেট এবং স্টেরয়েড ছাড়া অন্য আর কিছু দিতে পারছিলাম না । অ্যান্টি ক‍্যানসার কোনও ড্রাগ এই অবস্থায় দেওয়া যায় না । কারণ প্লেটলেট কাউন্ট 5 হাজার এবং রোগী কোমায় রয়েছেন । অস্ত্রোপচারের পরে আমরা প্লেটলেট এবং স্টেরয়েড চালু করে দিয়েছিলাম ।" তিনি বলেন, "প্রথম পাঁচ দিন প্লেটলেট দেওয়া হয়েছিল । নতুন করে ব্রেনে রক্তক্ষরণও হয়নি । কারণ প্লেটলেট দিয়ে এর কাউন্ট আমরা 20-25 হাজারের মধ্যে রাখতে পেরেছিলাম । অস্ত্রোপচারের পরে 48 ঘণ্টার মধ্যে রোগীর জ্ঞান ফিরে আসে ।" তিনি জানিয়েছেন, এই রোগীর ক্ষেত্রে ক্যানসার আবার ফিরে আসতে পারে । এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা যথেষ্ট থাকে । 40 শতাংশ ক্ষেত্রে ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে । তা সত্ত্বেও ফিরে আসতে পারে ক্যানসার । বিশেষ করে ব্রেনে রক্তক্ষরণের হয়েছে এমন রোগীর ক্ষেত্রে । এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "এই মুহূর্তে ওই যুবক ভালো আছেন ৷ এটাই সুখের খবর ।"

কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর : অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ব্রেন থেকে রক্ত বের করতে হবে । অথচ, অ্যানেস্থেশিয়া দিয়ে রোগীকে অজ্ঞান করা যাবে না । কারণ, তিনি অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন । আবার, ক্যানসারে আক্রান্ত এই রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়া প্রয়োজন । অথচ, রোগীর জ্ঞান না ফিরলে তা দেওয়াও সম্ভব নয় । এর উপর রোগীর প্লেটলেট কাউন্ট নেমে এসেছে মাত্র 5 হাজারে । এর ফলে, যে কোনও মুহূর্তে রোগীর মৃত্যু হতে পারে । এই পরিস্থিতিতে রোগীকে প্রাণ বাঁচালেন চিকিৎসকরা । ওই রোগীর সফল অস্ত্রোপচার হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ।


বছর 18-র ওই যুবক মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা । সামাজিক কারণে তাঁর পরিচয় জানাতে চাননি চিকিৎসকরা । তবে তাঁরা জানিয়েছেন, অজ্ঞান অবস্থায় ওই যুবককে আনা হয়েছিল কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এমারজেন্সিতে । মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে তাঁকে এখানে রেফার করা হয়েছিল । ওই মেডিকেল কলেজ থেকে বলা হয়েছিল, ওই যুবকের ব্লাড ক্যানসার রয়েছে । তবে, সেখানে এর চিকিৎসার জন্য যথাযথ পরিকাঠামো না থাকার কারণে তাঁকে রেফার করা হয়েছে কলকাতায়‌‌ । কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল অঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান, মেজর (রিটায়ার্ড) চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "ওই যুবককে যখন আমাদের এখানে নিয়ে আসা হচ্ছিল তখন আচমকা সে অজ্ঞান হয়ে যায় । অজ্ঞান হওয়ার আগে ও জানিয়েছিল, ওর মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে ।" কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এমারজেন্সি থেকে যুবককে মেডিসিন বিভাগে ভরতি নেওয়া হয় । এরপর তাঁর সিটি স্ক্যান এবং রক্ত পরীক্ষা করানো হয় ।

ভিডিয়োয় শুনুন চিকিৎসকের বক্তব্য

চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে আমরা দেখতে পেলাম, ওই যুবক অ্যাকিউট লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত । তাঁর প্লেটলেটের পরিমাণ 5 হাজারে নেমে এসেছে । এই অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে আছে ।" তিনি বলেন, "অ্যাকিউট লিউকেমিয়ার জন্য দরকার কেমোথেরাপি । কিন্তু, এভাবে কোমায় থাকা রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়া যায় না । সাধারণভাবে, অস্ত্রোপচারের জন্য এই ধরনের রোগীকে অজ্ঞান করতে চান না অ্যানাস্থেশিস্টরা । নিউরো সার্জনরা তখন বললেন, এই রোগীকে এমনিতেই হয়ত হারাতে হবে আমাদের । তার থেকে আমরা একবার চেষ্টা করে দেখি ।" তিনি বলেন, "আনেস্থেশিস্টের উপস্থিতিতে এই রোগীকে অজ্ঞান না করে অর্থাৎ, আনাস্থেশিয়া ছাড়া এবং শুধুমাত্র অক্সিজেন দিয়ে তাঁর ব্রেনে অস্ত্রোপচার করা হয় । সিটি স্ক্যানে এই রোগীর ব্রেনে যে সাবডুরাল হেমাটোমা দেখা গেছিল অর্থাৎ, রক্তক্ষরণ হয়েছিল, সেই রক্ত বের করে দেওয়া হয় ।"

একই সঙ্গে চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "লিউকেমিয়ার চিকিৎসা হিসেবে আমরা সঙ্গে সঙ্গে স্টেরয়েড দেওয়া শুরু করি । এটা অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া । পাঁচ দিনের মাথায় এই রোগীকে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট থেকে জেনেরাল ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয় । এরপর লিউকেমিয়ার জন্য আরও কিছুদিন চিকিৎসা হয়েছে । এই রোগীকে সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে ।" তিনি বলেন, "লিউকেমিয়ার জন্য এখন এই রোগীর চিকিৎসা চলবে আরও দুই বছর ।" তিনি জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে যখন এই রোগীকে রেফার করা হয়েছিল, তখন এই রোগীর ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়নি । তখনও এই রোগীর জ্ঞান ছিল । কলকাতায় আসার পথে ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয় ।

ব্রেনে কেন রক্তক্ষরণ হয়েছিল? চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "প্লেটলেট কাউন্ট যেহেতু কমে গেছিল এই জন্য ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়েছিল । অ্যাকিউট লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত বোন ম্যারো ফেলিওর হয় । হঠাৎ প্রচুর পরিমাণে WBC-র ব্লাস্ট সেল উৎপাদন হওয়ার কারণে রেড ব্লাড সেল এবং প্লেটলেট অর্থাৎ অণুচক্রিকা যেটা আমাদের রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, এর পরিমাণ ভয়ংকর রকম ভাবে কমে যায় ।" তিনি বলেন, "এক্ষেত্রে অনেকের চোখে বিল্ডিং হয় ৷ ব্রেনে ব্লিডিং হয় ৷ অনেকের দাঁত দিয়ে ব্লিডিং হয় ৷ রক্ত বমি হয় ৷ কালো পায়খানা হয় ৷ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাল চাকা দাগ বের হয় । অণুচক্রিকা কমে যাওয়ার কারণে এসব হয় ।" তিনি বলেন, "বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব লিউকেমিয়ার প্রেজ়েন্টিং লক্ষণ হতে পারে। তবে এই প্রেজ়েন্টিং সিমটমসের সঙ্গে ইন্ট্রাকেনিয়াল হেমারেজে এই রোগীর ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল, এটা খুবই বিরল ।"


প্লেটলেট স্বাভাবিক থাকার কথা দেড় লাখ থেকে 30 লাখ ৷ সেটা ছিল পাঁচ হাজার । একথা জানিয়ে চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "এই অবস্থায় যে কোনও মুহূর্তে রোগীর মৃত্যু হয়ে যেতে পারত । এদিকে চিকিৎসা হিসেবে এই অবস্থায় প্লেটলেট এবং স্টেরয়েড ছাড়া অন্য আর কিছু দিতে পারছিলাম না । অ্যান্টি ক‍্যানসার কোনও ড্রাগ এই অবস্থায় দেওয়া যায় না । কারণ প্লেটলেট কাউন্ট 5 হাজার এবং রোগী কোমায় রয়েছেন । অস্ত্রোপচারের পরে আমরা প্লেটলেট এবং স্টেরয়েড চালু করে দিয়েছিলাম ।" তিনি বলেন, "প্রথম পাঁচ দিন প্লেটলেট দেওয়া হয়েছিল । নতুন করে ব্রেনে রক্তক্ষরণও হয়নি । কারণ প্লেটলেট দিয়ে এর কাউন্ট আমরা 20-25 হাজারের মধ্যে রাখতে পেরেছিলাম । অস্ত্রোপচারের পরে 48 ঘণ্টার মধ্যে রোগীর জ্ঞান ফিরে আসে ।" তিনি জানিয়েছেন, এই রোগীর ক্ষেত্রে ক্যানসার আবার ফিরে আসতে পারে । এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা যথেষ্ট থাকে । 40 শতাংশ ক্ষেত্রে ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে । তা সত্ত্বেও ফিরে আসতে পারে ক্যানসার । বিশেষ করে ব্রেনে রক্তক্ষরণের হয়েছে এমন রোগীর ক্ষেত্রে । এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "এই মুহূর্তে ওই যুবক ভালো আছেন ৷ এটাই সুখের খবর ।"

Intro:কলকাতা, ১৬ সেপ্টেম্বর: অপারেশনের মাধ্যমে ব্রেন থেকে রক্ত বের করতে হবে। অথচ, আনাস্থেশিয়া দিয়ে রোগীকে অজ্ঞান করা যাবে না। কারণ, তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। এ দিকে, ক্যানসারে আক্রান্ত এই রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়া প্রয়োজন। অথচ, রোগীর জ্ঞান না ফিরলে তা দেওয়াও সম্ভব নয়। অন‍্যদিকে, এই রোগীর প্লেটলেট কাউন্ট নেমে এসেছে মাত্র ৫ হাজারে। এর ফলে, যে কোনও মুহূর্তে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এই ধরনের বিরল এক পরিস্থিতি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত এই রোগীকে প্রাণ বাঁচালেন ডাক্তাররা। এই ঘটনা কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের।


Body:বছর ১৮-র এই রোগী মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। সামাজিক কারণে তাঁর পরিচয় জানাতে চাননি ডাক্তাররা। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, অজ্ঞান অবস্থায় এই তরুণকে আনা হয়েছিল কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে। মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে তাঁকে এখানে রেফার করা হয়েছিল। ওই মেডিকেল কলেজ থেকে বলা হয়েছিল, এই তরুণের ব্লাড ক্যানসার রয়েছে। তবে, সেখানে এর চিকিৎসার জন্য যথাযথ পরিকাঠামো না থাকার কারণে এই তরুণকে রেফার করা হয়েছিল কলকাতায়‌‌। কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল অঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান, মেজর (রিটায়ার্ড) ডাক্তার শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "এই রোগীকে যখন আমাদের এখানে নিয়ে আসা হচ্ছিল তখন আচমকা সে অজ্ঞান হয়ে যায়। অজ্ঞান হওয়ার আগে ও জানিয়েছিল, ওর মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে।" কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইমারজেন্সি থেকে এই রোগীকে সেখানকার মেডিসিন বিভাগে ভরতি নেওয়া হয়। এর পরে তাঁর সিটিস্ক্যান এবং রক্ত পরীক্ষা করানো হয়।

ডাক্তার শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে আমরা দেখতে পেলাম, এই রোগী অ্যাকিউট লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত। তার প্লেটলেটের পরিমাণ ৫ হাজারে নেমে এসেছে। এই অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে আছে।" তিনি বলেন, "চিকিৎসা হিসাবে অ্যাকিউট লিউকোমিয়ার জন্য দরকার কেমোথেরাপি। কিন্তু, এভাবে কোমায় থাকা রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়া যায় না। এবং, সাধারণভাবে, অপারেশনের জন্য এই ধরনের রোগীকে অজ্ঞান করতে চান না অ্যানাস্থেশিস্টরা। নিউরো সার্জনরা তখন বললেন, এই রোগীকে এমনিতেই হয়তো হারাতে হবে আমাদের। তার থেকে আমরা একবার চেষ্টা করে দেখি।" তিনি বলেন, "আনেস্থেশিস্টের উপস্থিতিতে এই রোগীকে অজ্ঞান না করে অর্থাৎ, আনাস্থেশিয়া ছাড়া এবং শুধুমাত্র অক্সিজেন দিয়ে তাঁর ব্রেনে অস্ত্রোপচার করা হয়। সিটি স্ক্যানে এই রোগীর ব্রেনে যে সাবডুরাল হেমাটোমা দেখা গিয়েছিল অর্থাৎ, রক্তক্ষরণ হয়েছিল, সেই রক্ত বের করে দেওয়া হয়।"

একই সঙ্গে এই ডাক্তার বলেন, "লিউকোমিয়ার চিকিৎসা হিসেবে আমরা সঙ্গে সঙ্গে স্টেরয়েড দেওয়া শুরু করি। এটা অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া। পাঁচ দিনের মাথায় এই রোগীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট থেকে জেনারেল ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়। এর পরে লিউকোমিয়ার জন্য আরও কিছুদিন চিকিৎসা হয়েছে। এই রোগীকে সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।" তিনি বলেন, "লিউকেমিয়ার জন্য এখন এই রোগীর চিকিৎসা চলবে আরও দুই বছর।" তিনি জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে যখন এই রোগীকে রেফার করা হয়েছিল, তখন এই রোগীর ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়নি। তখনও এই রোগীর জ্ঞান ছিল। কলকাতায় আসার পথে ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়।

ব্রেনে কেন রক্তক্ষরণ হয়েছিল? ডাক্তার শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "প্লেটলেট কাউন্ট যেহেতু কমে গিয়েছিল এই জন্য ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। অ্যাকিউট লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত বোন ম্যারো ফেলিওর হয়। হঠাৎ প্রচুর পরিমাণে WBC-র ব্লাস্ট সেল উৎপাদন হওয়ার কারণে রেড ব্লাড সেল এবং প্লেটলেট অর্থাৎ অনুচক্রিকা যেটা আমাদের রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, এর পরিমাণ ভয়ঙ্কর রকম ভাবে কমে যায়।" তিনি বলেন, "এক্ষেত্রে অনেকের চোখে বিল্ডিং হয়, ব্রেনে ব্লিডিং হয়, অনেকের দাঁত দিয়ে ব্লিডিং হয়, রক্ত বমি হয়, কালো পায়খানা হয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাল চাকা দাগ বের হয়। অনুচক্রিকা কমে যাওয়ার কারণে এসব হয়।" তিনি বলেন, "বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব লিউকোমিয়ার প্রেজেন্টিং সিমটমস হতে পারে। তবে এই প্রেজেন্টিং সিমটমসের সঙ্গে ইন্ট্রাকেনিয়াল হেমারেজে স্পেশালি, সাবডুরাল হেমাটোমা উইদাউট এনি ট্রমা, এই রোগীর ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল, এটা খুবই রেয়ার।"


Conclusion:প্লেটলেট, যেটা নরমাল থাকার কথা দেড় লাখ থেকে ৩ লাখ, সেটা ছিল পাঁচ হাজার। একথা জানিয়ে ডাক্তার শিবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "এই অবস্থায় যে কোনও মুহূর্তে রোগীর মৃত্যু হয়ে যেতে পারত। এদিকে চিকিৎসা হিসেবে এই অবস্থায় প্লেটলেট এবং স্টেরয়েড ছাড়া অন্য আর কিছু দিতে পারছিলাম না। অ্যান্টি ক‍্যানসার কোনও ড্রাগ এই অবস্থায় দেওয়া যায় না। কারণ প্লেটলেট কাউন্ট ৫ হাজার এবং রোগী কোমায় রয়েছে। অপারেশনের পরে আমরা প্লেটলেট এবং স্টেরয়েড চালু করে দিয়েছিলাম।" তিনি বলেন, "প্রথম পাঁচ দিন প্লেটলেট দেওয়া হয়েছিল। নতুন করে ব্রেনে রক্তক্ষরণও হয়নি। কারণ প্লেটলেট দিয়ে এর কাউন্ট আমরা ২০-২৫ হাজারের মধ্যে রাখতে পেরেছিলাম। অপারেশনের পরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর জ্ঞান ফিরে আসে।" তিনি জানিয়েছেন, এই রোগীর ক্ষেত্রে ক্যানসার আবার ফিরে আসতে পারে। এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা যথেষ্ট থাকে। ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে। তা সত্ত্বেও ফিরে আসতে পারে ক্যানসার। বিশেষ করে ব্রেনে রক্তক্ষরণের হয়েছে, এমন রোগীর ক্ষেত্রে। এ কথা জানিয়ে এই ডাক্তার বলেন, "তবে, এই মুহূর্তে এই রোগী ভালো আছে, এটাই সুখের খবর।"
_______


বাইট:
wb_kol_01a_cmch_rare_case_bite_7203421
কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল অঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান, মেজর (রিটায়ার্ড) ডাক্তার শিবাশিস ভট্টাচার্য।
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.