কলকাতা, 3 ফেব্রুয়ারি : শাহিনবাগে গুলি চালনার পর পার্ক সার্কাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হল ৷ যে কোনওরকম বিপত্তি এড়াতে লালবাজারের পক্ষ থেকে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার অফিসারকে সেখানকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহিনবাগে গুলি চলার পর তৎপর লালবাজার ৷ শাহিনবাগের মতোই পার্ক সার্কাসে NRC, CAA, NPR-এর বিরোধিতায় অবস্থান বিক্ষোভ করছেন মহিলারা ৷ এবার শাহিনবাগের মতো কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, তার জন্য পার্ক সার্কাসের নিরাপত্তা আরও জোরদার করল লালবাজার ৷ একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার অফিসারকে সেখানকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ প্রায় একমাস হতে চলল পার্ক সার্কাসের আন্দোলন ৷ জানুয়ারির শীতও তাদের কাবু করতে পারেনি ৷ ‘আজাদি’ স্লোগান বার বার উঠে এসেছে আন্দোলনকারীদের গলায় ৷ সবার একই বক্তব্য, ধর্ম নির্বিশেষে আন্দোলন চলছে এবং চলবে ৷ রক্ত ঝরলেও মাথা না নোয়ানোর সংকল্প প্রত্যেকের গলায় ৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার ডিগ্রি পড়ুয়া আলিশা জামিল বলেন, “ আমরা রক্তাক্ত হতে পারি । কিন্তু ভয় পাই না । আমরা আজাদি চাইছি অবিশ্বাসের থেকে । আজাদি চাইছি দেশের সৌভ্রাতৃত্ব বিরোধী হুমকি থেকে । এই আজাদির ডাক নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে ৷ NRC, NPR, CAA-এর বিরুদ্ধেও।’’
প্রসঙ্গত, সামিদা খাতুন (57) নামে পার্ক সার্কাসের এক আন্দোলনকারীর শনিবার মৃত্যু হয়েছে ৷ টানা 26 দিন আন্দোলনের পর ওই দিন তিনি মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ বুকে ব্যাথা নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন সামিদা ৷ সেখানেই তার মৃত্যু হয় ৷ সামিদার শওহর জানান, আন্দোলন জারি থাকবে ৷ 7 জানুয়ারি 60 জন মহিলাকে নিয়ে পার্ক সার্কাস ময়দানে CAA ও NRC বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন ইসমত জামিল ৷ সেই আন্দোলনের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের অন্যত্রও ৷ দুর্গাপুরের বাসিন্দা আবির সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদ যেসব জায়গায় চলছে সেইসব জায়গায় হাজির হচ্ছেন । তিনিও চারদিন ধরে ঠায় বসে রয়েছেন পার্ক সার্কাসে । আবির বলেন, “প্রতিবাদ হল গণতন্ত্রের উৎসব । যতদিন পর্যন্ত না নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের রাজনৈতিক এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত রাত জাগবে কলকাতার এই শাহিনবাগ । সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে শক্ত করে সব ধর্মের সব বর্ণের মানুষ রাত জাগতেই থাকবেন।’’
এদিকে সংসারের কাজে মন মেই গৃহবধূ আসমা, রাবেয়াদের । ইকবাল, রাজ্জাকরা অফিস যাচ্ছেন ঠিকই । মন বসছে না । মনটা পার্কসার্কাসের অবস্থান মঞ্চে পড়ে রয়েছে । মঞ্চ বলা ভুল হবে । খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল পেতে বসে থাকা । প্রবল ঠাণ্ডার মধ্যেও । আন্দোলনকারী দীপান্বিতা বলেন, “একটা ছাউনি তৈরির অনুমতি নেই । মনের জোরেই আন্দোলন চলছে । কিন্তু খোলা আকাশের নিচে মহিলাদের অসুবিধে তো হচ্ছেই । জানি না কত দিন চালানো যাবে । কিন্তু যতদিন পর্যন্ত না সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকব ৷’’ তাদের প্রত্যেকের দাবি, যতক্ষণ পর্যন্ত না “কালাকানুন’’ বাতিল করা হবে ততক্ষণ চালিয়ে যাওয়া হবে এই আন্দোলন । কিন্তু তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই চিন্তিত লালবাজার । যদি দিল্লির সংক্রমণ কলকাতায় ছড়ায় ?